আনোয়ার হোসেন॥ আপনি সরকারি চাকরি করেন। হয়তো প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নন। তবু আপনাকে বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দিতে হবে। গত মৌসুম থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ম করেছে, কোনো সরকারি কর্মীর মূল বেতন যদি ১৬ হাজার টাকা বা এর বেশি হয়, তবে ওই কর্মীকে অবশ্যই আয়কর বিবরণী জমা দিতে হবে। করযোগ্য আয় থাকুক; আর না-ই থাকুক, ১৬ হাজার টাকা বেতনের সরকারি চাকরিজীবীদের আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর (ইটিআইএন) নিয়ে রিটার্ন দিতে হবে। আয়কর নথিতে বছরে কত টাকা আয় করেন, কোথায় খরচ করেন, তা-ও জানাতে হবে।
এনবিআরের বিধান অনুযায়ী, সরকারি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ ও করপোরেশনে চাকরি করলে কোনো কর্মচারীর মূল বেতন যদি বছরের কোনো এক মাসে ১৬ হাজার টাকা বা এর বেশি হয়; তবে ওই কর্মচারীকে রিটার্ন দিতে হবে। এর মানে হলো, বছরে যেকোনো একবার মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা স্পর্শ করলেই এনবিআরের জালে পড়ে যাবেন আপনি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত আপনার পদোন্নতি হলো না কিংবা ইনক্রিমেন্ট হয়নি; কিন্তু জুন মাসে আপনার পদোন্নতি হলো কিংবা বেতন বেড়ে ১৬ হাজার টাকা হলো; তাহলে আপনাকে রিটার্ন দিতে হবে।
রিটার্ন দিলেও আয়ের ওপর কর আছে কি না, তা সরকারি কর্মকর্তা বুঝবেন কীভাবে? সাধারণত ১২ মাসের মূল বেতন, উৎসব বোনাস ও বৈশাখী বোনাস যোগ করে যদি আড়াই লাখ টাকার বেশি হয়; তবে কর দিতে হবে। করের হিসাব কিন্তু জুলাই থেকে জুন মাস পর্যন্ত। এ বছর করের চাপ একটু বাড়বে। জুলাই-জুন সময়ে এবার তিনটি ঈদ হয়েছে। তাই দুটির পরিবর্তে তিনটি বোনাস যোগ হবে। পাশাপাশি বৈশাখী বোনাস আছে। একটি বাড়তি বোনাস যুক্ত হওয়ায় অনেক সরকারি কর্মীকে এবার রিটার্ন জমার পাশাপাশি কর দিতে হবে।
আরও খেয়াল রাখতে হবে, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত খরচে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত কর রেয়াত মিলবে। ১২ মাসের মোট মূল বেতনের ৫০ শতাংশ বা বছরে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়িভাড়া হিসাবে ভাতা পাওয়া গেলে তাতে কর দিতে হবে না। এর বেশি হলে তা আয় হিসেবে যোগ হবে। একইভাবে বার্ষিক মোট মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা খরচও করমুক্ত। আর বার্ষিক ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত যাতায়াত খরচেও কর দিতে হবে না।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুম থেকে এই বিধান চালু হওয়ায় প্রায় চার লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রথমবারের মতো রিটার্ন দিয়েছেন। তাঁদের সিংহভাগই কর দিয়েছেন। আয়কর অধ্যাদেশের ৫০ ধারা অনুযায়ী, করযোগ্য সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রতি মাসে বেতন-ভাতা দেওয়ার সময় উৎসে কর কেটে রাখা বাধ্যতামূলক। এত দিন এই ধারা বিস্তৃতভাবে এনবিআর অনুসরণ করেনি; আবার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানও এ বিষয়ে খুব বেশি আগ্রহ দেখায়নি। গত জুলাই মাস থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়ার সময় উৎসে কর কেটে রাখার জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে তাগিদ দিয়ে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চল কার্যালয় থেকে একাধিক চিঠি দেওয়া হয়েছে। অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাঁদের কর্মীদের পে-রোল ট্যাক্সও কেটে রাখছে।
এ বছর অবশ্য সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যম পর্যায়ের কর্মী বা নির্বাহী পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক।