মোঃ মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি॥ গত সোমবার, ৩০ অক্টোবর ২০১৭। বর্ষায় গ্রামটির চার পাশে পানি থাকে। মাঝখানে বসবাস। বের হলে নৌকা নিয়ে যেতে হয়। এছাড়া উপায় নেই। হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ইউনিয়নে গুঙ্গিঁয়াজুরী হাওর এলাকায় অবস্থিত এ গ্রামটির নাম রউয়াইল। এখানে রয়েছে দেড় শতাধিক পরিবারের বসবাস। লোকসংখ্যা ৬ শতাধিক।
দূর থেকে এ স্থানটি দ্বীপের মত মনে হবে। এখানের শিশুরা যাতে শিক্ষা বঞ্চিত না-হয়, এজন্য পানির মাঝখানে মাটি ভরাট করে ২৩ শতক জমির ওপর ১৯৭৩ সালে ‘রউয়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ স্থাপিত হয়। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা শতাধিক। শিক্ষক সংখ্যা ৪ জন।
এ স্কুলের সবদিক পানিতে থৈ থৈ করছে। নৌকা দিয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। এ অবস্থা দেখলে মনে হবে তারা যেন জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে পাঠশালায় এসে শিক্ষাগ্রহণ করছে।
২০১৪ সালের শেষের দিকে রউয়াইল এলাকার বাসিন্দা শ্রীকান্ত সরকার হবিগঞ্জ-সিলেট জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মহিলা আসনের এমপি কেয়া চৌধুরীর কাছে স্কুলের এ অবস্থার সঙ্গে গ্রামের সমস্যার কথাও তুলে ধরেন।
এমপি কেয়া চৌধুরী এ গ্রামটি পরিদর্শন করে স্কুল, শ্মশানঘাট ও রাস্তার উন্নয়নে বরাদ্দ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে নিয়ে আসা বরাদ্দক্রমে উন্নয়ন হয়েছিল। তবে স্কুলটিতে একটি মাত্র ভবনে চলে আসছিল শিক্ষা কার্যক্রম। এর পরেও একাধিকবার এমপি কেয়া চৌধুরী এ গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। তেমনিভাবে তিনি নবীগঞ্জ ও বাহুবলের হাওরসহ দুর্গম এলাকার স্কুলগুলো পরিদর্শন করে বরাদ্দ দিয়ে উন্নয়ন করেছেন।
অবশেষে এমপি কেয়া চৌধুরীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ‘প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি’ এর আওতায় ‘এডুকেশন ইন ইমার্জেন্সি’ খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে, নবীগঞ্জ-বাহুবল উপজেলায় ৭টি রউয়াইলসহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ অনুযায়ী অচিরেই নির্মাণ শুরু হচ্ছে।
সর্বশেষ এমপি কেয়া চৌধুরী ২৯ অক্টোবর রবিবার রউয়াউল গ্রাম পরিদর্শন করেন। এর পূর্বে তিনি এ গ্রামের স্কুলের সিঁড়ি, শ্মশানঘাটের চুল্লি, শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দিরের উন্নয়নে বরাদ্দ প্রদান করেন। এ বরাদ্দক্রমে এগুলোর উন্নয়ন কাজ হয়েছে। তাই এমপি কেয়া চৌধুরী তৃণমূল লোকজনকে সাথে নিয়ে এসব উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন।
এ সময় আয়োজিত উদ্বোধনী সভায় এমপি কেয়া চৌধুরী বলেন- এমপি হবার পর থেকে নবীগঞ্জ ও বাহুবলের বিভিন্ন দুর্গম এলাকা পরিদর্শন করেছি। জননেত্রীর কাছ থেকে একে একে বরাদ্দ এনে স্থান স্থানে দিয়েছি। বরাদ্দক্রমে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। চলমান রয়েছে উন্নয়ন।
তিনি বলেন, রউয়াইল গ্রামটিতে বার বার জননেত্রীর উপহার হিসেবে বরাদ্দ নিয়ে আসছি। এ বরাদ্দে নির্মিত শ্মশানঘাটের চুল্লি ও মন্দিরের উন্নয়ন কাজ উদ্বোধন করেছি। ছোট ছোট শিশুরা বিদ্যালয়ে আসলেও বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আসতে কোন সিঁড়ি না থাকায়, দেয়াল বেয়ে আসতে হত। এখন আর শিশুদের দেয়াল বেয়ে আসতে হবে না। কারণ প্রবেশ মুখে সিঁড়ি নির্মাণ করে দিয়েছি। স্কুলের ভবন এনে দিয়েছি। বরাদ্দ দিয়েছি রাস্তার জন্য। ইতিপূর্বে গ্রামের বেকার নারীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলাম। এখানের লোকজনের পাশে আমি সব সময় আছি।