রাইালাম॥ গত ৮ অক্টোবর তিনি দেশে ফিরেছেন। তিন সপ্তাহ হতে চলল, কিন্তু এখনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যক্রম গণভবন কেন্দ্রিক। সপ্তাহিক মন্ত্রিপরিষদ সভা এবং একনেকের বৈঠকে তিনি যোগ দিচ্ছেন। গণভবনে দুটি দলীয় বৈঠক করেছেন। ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে মৌচাক ফ্লাইভার উদ্বোধন করেছেন। কিন্তু কর্মীরা এতে তৃপ্ত না। তারা অস্থির হয়ে উঠেছে।
‘আপা, কবে আগের মতো কাজ শুরু করবেন? ‘নেত্রীর জ্বালাময়ী বক্তৃতা শুনি না কতদিন।’ ‘এতিম এতিম লাগছে’-এরকম নানা কথাবার্তা কান পাতলেই শোনা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর অপারেশন হয়েছে। এখনো পূর্ণোদ্যমে কাজে নামতে পারেননি। চিকিৎসকের পরামর্শে রাজনৈতিক কর্মসূচি আপাতত: স্থগিত রেখেছেন। সরকারি কাজকর্ম করছেন, কিন্তু তাতে কি আর কর্মীদের মন ভরে! বিশেষ করে, যখন তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ দেশে ফিরেছেন। ঢাকা-কক্সবাজার রোড শো করেছেন।
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বললেন, ‘শেখ হাসিনা ছাড়া আমরা কত এতিম, তা এবার আবারো প্রমাণ হলো।’ তাঁর মতে, ‘দলের সাধারণ সম্পাদক কথা বলছেন বটে, কিন্তু সেগুলো পাবলিক খায় না। মানুষ শুনতে চায় শেখ হাসিনার কথা। তাঁর প্রাণোদ্দীপ্ত হাসি, বক্তৃতা।’ অন্য একজন নেতা বললেন, ‘শেখ হাসিনা যে আওয়ামী লীগের প্রাণ এটা বুঝলাম এই ক’দিনে।
তিনি ছাড়া আমাদের অস্তীত্ব নেই। তিনি শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচি করছেন না, মনে হচ্ছে আমরা বোধহয় ক্ষমতা হারানোর দ্বারপ্রান্তে।‘ তিনি মনে করেন, খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর থেকেই কর্মীদের মধ্যে ছটফটানি বেড়েছে। বেগম জিয়াকে এয়ারপোর্টে বরণ, আদালতে তাঁর জবানবন্দি আর সর্বশেষ রোডমার্চ।
এই তিন কর্মসূচির পাল্টা হতে পারতো, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বক্তব্য। সেই বক্তব্য নেই। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা কর্মীদের ভাষ্য, ‘শেখ হাসিনাই আমাদের সাহস, আমাদের শক্তি।’ তারা মনে করেন। তিনি হাজারটা কাজ করুক, কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক বক্তব্য হলো আসল। রাজনৈতিক কর্মসূচি হলো মূল। তিনিই তো দলকে আগলে রাখেন।’
কর্মসূচি সীমিত হবার কারণে, শেখ হাসিনার টেলিভিশনে উপস্থিতিও কমে গেছে। তৃণমূলের এক কর্মী বলছিলেন, ‘কদিন আগেই তো নেত্রীর দুই তিনটা প্রোগাম থাকতো। এগুলোতে বক্তৃতা শুনে রাজনৈতিক দিক নির্দেশনা পেতাম। এখন নির্দেশনাহীন। আমরা কি বলবো জানি না।
আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ একজন বুদ্ধিজীবী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কতটা শেখ হাসিনার ওপর নির্ভরশীল, গত একমাসে তা প্রমাণ হয়েছে। তিনিই আওয়ামী লীগের একমাত্র নেতা, যাঁর কথায় মানুষ আস্থা রাখে।’ গত এক মাস দলের সাধারণ সম্পাদক প্রচুর কথা বলেছেন, কিন্তু এগুলো সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারছে না। অন্য একজন শিক্ষাবিদ বলেন, ‘শেখ হাসিনা এখন কেবল একজন রাজনৈতিক দলের নেতা নন, তিনি দেশের অভিভাবক। মানুষের স্বপ্ন, মানুষের আশার বাতিঘর। তাঁর কথা মানুষ বিশ্বাস করে, তাঁর কথায় উদ্দীপ্ত হয়।’ তার মতে, ‘শেখ হাসিনাই এদেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখার সাহস দিয়েছেন। তাই তাঁর আশা জাগানিয়া কথা না শুনলে মানুষও স্বপ্নহীন, হতাশ হয়ে পড়েন।’ তিনি বলেন, ‘এই কদিনে বুঝলাম, কতটা ভার একটা মানুষের ওপর দিয়েছি। এখন তিনি থেকেও নেই, তাতেই দেশ যেন অভিভাবকহীন।’
তবে ভালো খবর হলো, খুব শিগগিরই আস্তে আস্তে স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ একজন বললেন, ‘বাতাসের মধ্যে থেকে আমরা বাতাসের মর্ম যেমন বুঝি না। শুধু দম বন্ধ হলেই বাতাসের মর্ম বুঝি। শেখ হাসিনাময় বাংলাদেশে, তিনি কি, তা এই কদিনে ভালোই বুঝিয়ে দিলেন।’