ফাহাদ বিন হাফিজ॥ ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। কিন্তু আওয়ামী লীগ পরিচালিত একাধিক জরিপে দেখা যাচ্ছে নিজের আসনেই তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন। কোনো জরিপেই তাঁর জন্য সুখবর নেই। তাঁর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ডাকসাইটে নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। ২০০৮ এর নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে এই আসনে কাদের জিতেছিলেন মাত্র এক হাজার ৩৭১ ভোটে। তবে এবার মওদুদ না, কাদেরের প্রশ্রয় পাওয়া পাশ্ববর্তী আসনের এক এমপি এবং নিজস্ব বলয়ের লোকজনের দাপটে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। দলীয় কর্মীরাও জিম্মি একটি গ্রুপের কাছে।
এই চিত্র শুধু ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী এলাকায় নয়, জরিপ বলছে, ৩১ জন পূর্ণ মন্ত্রীর অর্ধেকই আগামী নির্বাচনে জয় কঠিন হবে। তাদের অবস্থা সংকটজনক।
সিলেট-১ আসন ঐতিহ্যগত কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার পর এই আসনে যে দলের প্রার্থী জিতেছে সেই দলই সরকার গঠন করেছে। এই আসনে বর্তমান এমপি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি নিজে ঘোষণা দিয়েছেন এবার তিনি নির্বাচন করবেন না। তাঁর উত্তরাধিকার হিসেবে তিনি তাঁর ছোট ভাই আবদুল মোমেনের নামও ঘোষণা করেছেন। জরিপ বলছে, এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগে বিভক্তি চরম আকার ধারণ করেছে। এখন পরিস্থিতি এমন মোমেন তো দূরের কথা, খোদ অর্থমন্ত্রী দাঁড়ালেও, তাঁর বিজয় কঠিন হবে।
ঝালকাঠি- ২ থেকে নির্বাচিত শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু। জরিপ বলছে, তার আসনও টলটলায়মান। কোন্দলে জর্জরিত শেরপুর-২ আসনে মাতিয়া চৌধুরীর অবস্থানও ভালো না। দ্রুত কোন্দল মেটাতে না পারলে, এ আসনে লালবাতি জ্বলবে। একই অবস্থা ময়মনসিংহ-৪ আসনে ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের। তাঁর পুত্র এবং নিজস্ব লোকজনের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব স্থানীয় জনগণের। আওয়ামী লীগও এখানে বিভক্ত। সুখবর নেই গাজীপুর-১ থেকে নির্বাচিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেলের। তিনিও কোন্দলে ক্ষত বিক্ষত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসানের সংসদ সদস্য মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকও নাজুক অবস্থায় আছেন। পাশের আসনের নিজের দলের এমপিই তাঁর বিরুদ্ধে বিরামহীন প্রচারণায় ব্যস্ত। এছাড়াও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা তাঁর ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব দেখাবে বলেই জরিপে আভাস দেওয়া হয়েছে। পারিবারিক কোন্দলে নিজের জনপ্রিয়তা তলানীতে নিয়ে গেছেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ। জরিপ বলছে, পাবনা-৪ আসনে তাঁকে হারাতে তাঁর জামাতাই যথেষ্ট। বার্ধক্যের কারণে এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ইমাজ উদ্দিন প্রমাণিক। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা নওগাঁ-৪ এ আওয়ামী লীগের গ্রুপও চারটি। সিলেট-৬ থেকে নির্বাচিত শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। সারাদেশে তাঁর পরিচ্ছন্ন ইমেজ থাকলেও, নিজ এলাকায় তাঁর গায়ে কাঁদা মেখে দিয়েছে তাঁর দলেরই নেতা-কর্মীরা। একই অবস্থা কুমিল্লা-১০ থেকে নির্বাচিত পরিকল্পনা মন্ত্রী আ. হ. ম. মোস্তফা কামালের। দলের কোন্দলের সঙ্গে এখানে অন্য মন্ত্রীদের বিরুদ্ধাচারণ। চট্টগ্রাম-৮ থেকে নির্বাচিত নূরুল ইসলাম বিএসসির বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের একাংশ একাট্টা। আর ইমেজ সংকটে ভুগতে থাকা খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের খবরও ভালো নয় ঢাকা-২ এ।
আওয়ামী লীগের সদস্য নন, কিন্তু নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা দুই মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং হাসানুল হক ইনু। মেনন নির্বাচন করেছিলেন ঢাকা- ৮ থেকে। নৌকা ছাড়া তাঁর জামানত থাকবে না-এমন পূর্বাভাসের জন্য জরিপ লাগে না। কিন্তু নৌকা নিয়েও তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের মনজয় করতে পারবেন কিনা সন্দেহ। কুষ্টিয়া-২ এ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তাঁর সাংগঠনিক শক্তি সংহত করলেও, তাঁকে হারানোর জন্য আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী সদস্যই যথেষ্ট। ইনুর বিরুদ্ধে তিনি আদাজল খেয়েই লেগেছেন।