টিআইএন॥ পায়রা নদীর তীরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নতুন সেনানিবাস নির্মাণ করা হবে। অনুমোদিত ‘শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় মোট ১ হাজার ৫৩২ একর জমিতে নতুন সেনা নিবাসটি স্থাপিত হবে। এক হাজার পাঁচশত বত্রিশ একর জমিতে নির্মিত হবে সেনানিবাসটি। ১ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চলতি সময় থেকে ২০২১ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নতুন সেনানিবাস সম্পর্কে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ উপকূলীয় এলাকা বরিশাল-পটুয়াখালীতে কোনো সেনানিবাস নেই। অথচ এ অঞ্চলটি দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও কৌশলগত কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও দুর্যোগপূর্ণ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরের যশোর সেনানিবাসের সহায়তা নিতে হয়। এই বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বরিশালে সেনানিবাস স্থাপন করতে হবে এ চিন্তা কারও মাথায় ছিল না। এমনকি সেনাবাহিনীর মাথায়ও ছিল না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর মাথায় এ চিন্তা আসে। তিনিই একটি নতুন সেনানিবাস স্থাপনের পরামর্শ দেন। তাই তার নামেই এ সেনানিবাসের নামকরণ করা হয়েছে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে এক ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরেন। এ সময় তিনি জানান, মোট ১০ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এ সব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৩৩৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে ৩ হাজার ৩১৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অবশিষ্ট ১৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে।
মন্ত্রী জানান, উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তা বাড়াতে নতুন একটি সেনানিবাস স্থাপন করা হবে। বরিশাল ও পটুয়ালী জেলার পায়রা নদীর কাছে লেবুখালীতে স্থাপন হবে এ সেনা নিবাসটি। দেশের ৩১ তম সেনানিবাসটির নামকরণ হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে। ১৯৭৫ সাল হতে চর সৃষ্টির মাধ্যমে এ সব জমির সৃষ্টি হয়েছে। এখানে কোন জনবসতি গড়ে উঠেনি। ঘরবাড়ি বা স্থাপনার কোন ক্ষতিপূরণ বা পুর্ণবানের প্রয়োজন হবে না।
এদিকে পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, মংলা পর্যন্ত রেল লাইন, খানজাহানআলী বিমান বন্দর, রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো প্রক্রিয়াধীন বেশ কিছু নির্মানাধীন অবকাঠামোর কারণে মোংলা সমুদ্র বন্দরের গুরুত্ব বাড়ছে। বিষয়টি বিবেচনায় বন্দরটির আশেপাশে নাব্য সংকট দুর করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে মোংলা বন্দর চ্যানেলের আউটার বার ড্রেজিং শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ৭১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় ধরে একনেক প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, শুধু গ্যাস ভিত্তিক কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন না করে ডুয়েল ফুয়েল বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্যাস পাওয়া না গেলে কয়লা অথবা অন্যকোন জ্বালানি দিয়ে এ সব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুত উৎপাদন করতে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বাড়ানোরও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম হাতে নিতেও তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।
একনেকে অনুমোদিত শালিখা (মাগুরা)-আড়পাড়া-কালিগঞ্জ (ঝিনাইদহ) জেলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে হবে ১০৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বরিশাল-লক্ষœীপাশা-দুমকী জেলা মহাসড়কের ১৪তম কিলোমিটারে রাঙ্গামাটি নদীর উপর গোমা সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ১২৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরে বৃহত্তর খুলনা ও যশোর জেলা ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক।
৮৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় ধরে বৃহত্তর বগুড়া ও দিনাজপুর জেলা ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ভেড়ামারা (বাংলাদেশ) বহরমপুর (ভারত) দ্বিতীয় ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা। জাতীয় চিত্রশালা এবং জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্রের সম্প্রসারণ ও অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্পে বরাদ্দ থাকবে ১৩৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
ঝিনাইদহে একটি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের লক্ষ্যে প্রকল্প অনুমোদন করেছে একনেক। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১১৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া ইনস্টিটিউট অব বায়োইকুভ্যালেন্স স্টাডিজ এন্ড ফার্মাসিউটিক্যাল সাইন্সেস প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৯০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগর হতে মোংলা বন্দর চ্যানেলের প্রবেশ মুখে কম গভীরতার নৌ-পথ রয়েছে। এ এলাকার স্বাভাবিক জোয়ারের সময় সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ চলাচল করতে পারে। এজন্য আউটার বারে গভীরতা বাড়ানো প্রয়োজন। তাছাড়া মোংলা বন্দরের অবস্থানগত কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল,দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলসহ ভারত, নেপাল এবং ভূটানের মালামাল হ্যান্ডেলিং ও পরিবহনের সহজ সুযোগ বিদ্যমান। এর বাইরে পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, খুলনা-মংলা পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপন, খানজাহানআলী বিমান বন্দর, রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠায় আগামীতে মোংলা বন্দরের ব্যবহর বহুলাংশে বেড়ে যাবে। তাই মোংলা বন্দরের কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডেল প্রয়োজন। এ বিবেচনায় পশুর চ্যানেলের আউটার বার এলাকায় প্রয়োজনীয় ড্রেজিং করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।