আশরাফুল আলম খোকন: সদ্য পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা’র বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগে ওনার সাথে এজলাসে বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তাঁর সহকর্মীরা। ফলশ্রুতিতে তিনি পদত্যাগ পত্র পাঠিয়েছেন।
এ নিয়ে জামাত-বিএনপি তুলকালাম কান্ড শুরু করে দিয়েছে। ভাবখানা এমন যে, ওনারা এইমাত্র মঙ্গল গ্রহ থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করেছেন। বিচার বিভাগের কোনো ইতিহাসই মনে হয় জানেন না।
শুরুটা করেছিলেন কিন্তু ওনাদেরই নেতা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানের সময় ১৯৭৭ সালের ১ ডিসেম্বর চাকুরী চলে যায় তৎকালীন বিচারপতি এ এফ এম আহ্সানউদ্দিন চৌধুরীর। সমসাময়িক সময়ে একই প্রক্রিয়ায় বিদায় হন আরো পাঁচজন বিচারপতি- এবিএম মাহমুদ হোসেন, রুহুল ইসলাম, দেবেশ ভট্টাচার্য, সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরী ও আব্দুল মুমিত চৌধুরী।
একই প্রক্রিয়ায় ১৯৮২ সালের ১১ এপ্রিল হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের আমলে চাকুরীর অবসান ঘটে বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেনের। ব্যারিস্টার শওকতের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে পদত্যাগ করেন বিচারপতি মাহবুবুস সোবহান। এরশাদের সময়ে চাকুরী চলে যায় আরও দুই বিচারপতি আ স ম হুসাইন ও আব্দুর রহমানের।
বিচার বিভাগে আরো ভয়ংকর ঘটনা ঘটায় বিএনপি জামাত ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর। বিচার বিভাগের নিয়ম নীতির ব্যতয় ঘটিয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ১৮ জন বিচারপতির চাকুরী তারা স্থায়ী করেননি। অধিকন্তু জাল সনদপ্রাপ্ত বিচারপতির নিয়োগ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হওয়ায় পদত্যাগে বাধ্য হন বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজ। বিএনপি-জামাত জোট তাকে নিয়োগ দিয়েছিলো। ২০০৪ সালের ২০ এপ্রিল চাকুরিচ্যুত করা হয়েছিল বিচারপতি শাহিদ উর রহমানকে। ২০০৬ সালের ১ জুলাই পদত্যাগ করেন বিচারপতি মোহাম্মদ লতিফুর রহমান।
এছাড়া ১/১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় পদত্যাগ করেন বিচারপতি বদরুল হক।
অর্থাৎ বিষয়টি স্পষ্ট। বিচারপতিদের নিয়ে সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক ঘটনাগুলো ঘটেছে বিএনপি-জামাত সরকারদের সময়। এই হলো বিচার বিভাগের ইতিহাস। তাই মিথ্যা রটনাকারীরা কি করেছিল এবং আগামীতে কি করতে পারে বুঝার আর কোন অবকাশ থাকে না। সাবধান ঐ মিথ্যা রটনাকারীদের থেকে। যখনই তারা কিছু একটা করতে চাই তখনই তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয় আর সাথে সাথেই মিথ্যা রটিয়ে অন্যের ঘারে দোষ চাপাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
লেখক: প্রধানমন্ত্রী উপপ্রেস সচিব।