আবদুল কাদের, পটুয়াখালী প্রতিনিধি॥ সৌদিতে বাংলাদেশি গৃহকর্মীর আর্তিঃ ‘আমাকে দেশে ফিরিয়ে নিন, এরা মানুষ না’…এরা মানুষ নয়, অমানুষ। আমি আর নির্যাতন সইতে পারছি না; আমাকে দেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। নইলে নিজের জীবন নিজে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।’ সৌদি আরবে অবস্থানরত পটুয়াখালীর এক নারী কর্মী মোবাইল ফোনে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই আকুতি জানাচ্ছিলেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি কালের কণ্ঠ’র প্রতিবেদককে অভিযোগ করে বলেন, গৃহকর্মীর কাজের কথা বলে সৌদি আরবে নেওয়ার পর থেকে গৃহকর্মীর কাজ না দিয়ে এক বদ্ধ ঘরে আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন করা হচ্ছে। মেয়েটি উদ্ধারে মন্ত্রণালয়েরও সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
চলতি বছরের ৪ এপ্রিল মেয়েটি গার্মেন্টের চাকরি ছেড়ে পাড়ি জমান সৌদি আরব। বরগুনা সদরের কাকতিরিয়া গ্রামের দালাল আবুল কালামের প্ররোচনায় মেয়েটি এ সিদ্ধান্ত নেন। এ জন্য দিতে হয় ৪০ হাজার টাকা। কথা ছিল প্রতি মাসে এক হাজার রিয়াল বেতন হবে। মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছেলে এমরান মিয়ার (আসল নাম নয়) বয়স যখন তিন মাস তখন স্ত্রী-সন্তানকে ছেড়ে চলে যান, স্বামী মো. জয়নাল মিয়া (আসল নাম নয়)। সেই থেকে অনেক কষ্টে একমাত্র সন্তানকে বড় করে তুলছেন মেয়েটি। বরগুনার সদরের নানির বাড়িতে থাকে এমরান এবং স্থানীয় এক স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।
স্বজনরা জানায়, মেয়েটিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে অনেকবার রিক্রুটিং এজিন্সির কাছে গিয়ে আকুতি জানালেও পাত্তা দেননি এজেন্সি মালিক। শেষ পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। এরপর এক মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো আশার আলো দেখছে না মেয়েটির পরিবার। অভিযুক্ত মেহেদী ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরের মালিক মেহেদী হাসান আরিফের দুটি মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও কেউ ফোনটি রিসিভ করেনি। মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়ে মেসেজ পাঠানো হলেও জবাব আসেনি।
জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডের সহকারী পরিচালক জাহিদ আনোয়ার বলেন, ’সৌদি আরবে যাওয়া নারী কর্মীর বিষয়ে একটি অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট এজেন্সির সঙ্গে আমাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কথা বলেছে। তারা জানিয়েছে মেয়েটিকে ফেরত আনা হবে।’ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সভাপতি বেনজির আহমেদ বলেন, ’সৌদি আরব থেকে প্রায়ই এমন অভিযোগ আসে। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। মাকে ফিরিয়ে আনার আকুতি জানিয়ে ছেলে এমরান এ প্রতিবেদককে বলে, ‘আমার মা দেশে ফিরে আসতে চায়, মায়ের অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমার মাকে ফিরিয়ে এনে দিন। প্লিজ, আংকেল ফিরিয়ে এনে দিন। আমি কাজ করে মাকে খাওয়াব, আর বিদেশ যেতে দিব না।’ এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ে ছেলেটি। মেয়েটির মা বলেন, ‘আমার মেয়েকে সেখানে নেওয়ার পর কোনো কাজে না দিয়ে একটি ঘরে বন্দি করে নানাভাবে নির্যাতন করছে। মেয়েটিকে দেশে ফেরত আনার জন্য অনেক আকুতি জানালেও এজিন্সি কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। উল্টো মেয়েটিকে দেশে আনার জন্য এজেন্সি দুই লাখ টাকা দাবি করেছে।
এখন মেয়েটি প্রায় মোবাইলে কান্নাকাটি করে বলছে তাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য। নইলে সেখানেই আত্মহত্যা করবে। এখন বাবা আমার মেয়েটিকে দেশে আনার জন্য আর কার কাছে যাব?’ তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, মেয়েটিকে ফেরত আনার জন্য বলা হলেও এজেন্সির মালিক আমাকে উল্টো হুমকি দিয়ে গালাগালি করে।