ইসরাত জাহান লাকী॥ একজন মা-ই পারে এবং পেরেছে। কিন্তু কি এই রকম পাড়া মায়ের নামের সাথে যায় কি! মুল্যবোধহীন সমাজ ব্যবস্থায় হয়ত সম্ভব। অথবা অধার্মিকতায় পূর্ণ সমাজব্যবস্থায়ও সম্ভব কিনা আমার জানা নেই। তবে বাস্তবে যা ঘটেছে তা কিন্তু সব অসম্ভবকে সম্ববে পরিণত করেছে বৈকি? আসুন সমাজে মুল্যবোধ ও ধার্মিকতায় পুন:জাগরণ ঘটায় এবং পরিবারের কর্তা হিসেবে ছেলে মেয়ের দৈনন্দিন জীবন- যাপনের হিসেব নেই। সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে সমাজ ও দেশ ও পরিবারকে অভিশাপমুক্ত রাখি। বড় দু:খভারাক্রান্ত মন নিয়েই বাস্তব সত্য গল্পকারে লিখাটি পড়ি এবং নিজের ভুমিকা রাখতে সচেষ্ট হই।
মা, বল তো আমি কে?
তোমার গর্ভে রাতের আঁধারে লুকিয়ে জন্ম নেয়া আমি সেই হতভাগা সন্তান! আমিই সেই যাকে লোক লজ্জার ভয়ে নর্দমায় একটা বাক্সবন্দি করে জ্যান্ত ফেলে এসেছিলে।
জানো মা, তুমি চলে আসার পর আমার সাথে কি হয়েছিল? তুমি যখন বাক্সবন্দি করে আমায় ফেলে আসলে, আমি চোখ খুলে দেখি তুমি নেই। এদিক-ওদিক সবদিক তোমায় খুঁজলাম। চারিদিকে অন্ধকার আর অন্ধকার। বুঝে নিলাম তুমি কাছে নেই। আমি তো তোমায় মা বলে ডাকতে শিখিনি তখনো। কিন্তু আমি জানতাম আমার চিৎকার শুনে তুমি দৌঁড়ে ছুটে আসবে। তাই চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম।
জানো মা, আমার চিৎকারে তুমি এলে না ঠিকই। কিন্তু রাস্তার কুকুরগুলো আমার কাঁন্না শুনে ঠিকই আমায় খুঁজে নিল। আমি ভাবলাম কুকুরগুলো বুঝি আমায় মায়ের কাছে নিয়ে যাবে। কিন্তু না মা। ওরা তো আমায় খাওয়ার জন্য ছুটে এসেছিল।
একটা দুইটা কুকুর না মা। প্রায় ৫/৬ টা কুকুর। কি ধারালো দাঁত ওদের। আমায় দেখেই ওদের মুখ দিয়ে লালা পড়ছিল। প্রথমে একটা কুকুর এসে নখ দিয়ে আমার পাঁজরগুলো ছিঁড়লো। তারপর আরও দুইটা কুকুর আমার মাথাটা নিয়ে কি টানাটানিই না করছিল। কি যে যন্ত্রনা হচ্ছিল মা তুমি বুঝবেনা। বুঝলে কি আর আমায় ফেলে যেতে!!!
জানো মা, ওরা আমায় নিয়ে যখন টানাটানি করছিল একটা সময় আমার যন্ত্রণাটাও কমে গেল। কমবে না কেন বলো? প্রাণটা তো তখন আর ছিল না মা!
জানি না মা, কে তোমায় ভালবাসি বলে আমায় জন্ম দিয়ে গেল। ও না হয় অমানুষ ছিল। কিন্তু তুমি তো মা। তুমি কেন আমায় ফেলে দিলে? যদি নিজের কথা এতই ভাবতে, তবে জন্ম দিলেই বা কেন? কেনই বা এমন মানুষের কাছে নিজের সব কিছু উজার করে দিলে? ভালবাসার অর্থই কি মা এক বিছানায় রাত্রি যাপন করা? ভালবাসার অর্থ কি আমার মতো সন্তানকে লোকের অগোচরে জন্ম দিয়ে কুকুর দিয়ে খাওয়ানো? তবে কি জানো মা, এমন ভালবাসা পাওয়ার আগেই আমি দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছি সেটাই ভাল হয়েছে।
আমি হাশরের দিন আল্লাহর কাছে তোমার জন্য সুপারিশ করবো মা। তোমায় যাতে ক্ষমা করে। কি করবো বলো? তুমি আমার কথা না ভাবলেও আমি তোমার কথা ঠিকই ভেবে রেখেছি।
শুধু একটা অনুরোধ মা, যদি সন্তানকে জনসম্মুখে আনতে এতই লজ্জা করে তোমার, তবে আর কখনো আমার মত অবৈধ সন্তানের জন্ম দিও না। আমি তোমায় ক্ষমা করে দিলেও সব সন্তান তোমায় ক্ষমা করবে এমনটা ভেবো না।
ভাল থাকো মা…..।