সুমি রোজারিও॥ প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার সাথে সরকারের চলমান জটিলতায় সেনাবাহিনীর কয়েকজন অফিসারের অবাঞ্ছিত তৎপরতায় সেনানিবাস উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে রক্তারক্তির ঘটনা। দীর্ঘদিনের বঞ্চিত ও অত্যাচারিত সেনা অফিসারররা ফুঁসে উঠেছে। শতাধিক সার্ভিং ও রিটায়ার্ড অফিসাররা তৈরী হয়ে আছেন।
চলমান রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে দেশী বিদেশী তৎপরতায় বর্তমান বিনাভোটের সরকার পতনের গুজব যখন চারিদিকে, এরি মাঝে হাসিনার জন্য ত্রানকর্তা হিসাবে উদয় হয়েছেন নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি (বিএ-২৮৯০) মেজর জেনারেল আকবর হোসেন। সাথে নিয়েছেন আরো ৩/৪ জেনারেল। এরা অলিখিত ছুটি নিয়ে ঢাকা অবস্থান করছে গত তিন সপ্তাহ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তিদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা, এমনকি হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বাড়িতে ঢুকে অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দিয়ে কাজ করাতে ব্যর্থ হয়ে কিছুটা পিছু হটে অন্তরালে গিয়ে তৎপরতরা অব্যাহত রেখেছেন আকবর। সাম্প্রতি গুম অপহরনগুলি আকবরের কীর্তি। ডিজিএফআই সাবেক বস হিসাবে তার কিছু নিজস্ব লোকদের দিয়ে এসব করাচ্ছে। তবে এতে কোনো ক্যাজুয়াল্টি হলে উল্টা বিপদ ও সংস্থার দুর্নামের আশংকাও করছে বর্তমান ডিজি সাইফুল। ভিন্ন ডিভিশনের জিওসির এহেন খবরদারী ও অপতৎপরতা নিয়ে সংস্থাটির বর্তমান কমান্ড চিন্তিত ও বিচলিত। এ নিয়ে কথা বলেছেন সেনাপ্রধানের সাথে।
জানা গেছে, শেখ হাসিনার নির্দেশেই আকবর এসব হঠকারী কাজগুলি করছেন। নিয়ম শৃঙ্খলা ও আর্মি অ্যাক্ট ভেঙ্গে একজন জিওসির এহেন কর্মকান্ডে সিনিয়র জুনিয়র অফিসাররা উষ্মা প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ আকবরকে বল প্রয়োগ থামানোর কথা ভাবছেন। আকবর জিওসি হলেও তার বাহিনীর পুরো সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তা নিয়ে বাইরে এসব মুভমেন্ট করতে পারছে না, তাই তাকে চলাচল করতে হচ্ছে গোপনে নিজস্ব ব্যবস্থায়, প্রাইভেট সিকিউরিটি নিয়ে। এহেন পরিস্থিতিতে প্রতিপক্ষের লক্ষবস্তুও হতে পারেন তিনি।
যদিও জেনারেল আকবর প্রায় সব যায়গায় বলে বেড়ায়, “আমার এক থাপ্পড় খেয়ে জেনারেল এরশাদ মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। সিএমএইচে ভর্তি থাকে মাস খানেক। এরপরে বিনাভোটে ইলেকশন করে ফেললাম। ব্যস, এবারও তাই করব।” তা সত্ত্বেও তার খাতিরের লোকদের সাথে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় আকবর বলেছে, সরকার পরে গেলে কিন্তু আর রক্ষা নাই। তাই হাইয়েস্ট চেষ্টা করতে হবে। তবে ওরা সবকিছু নিয়ে যেভাবে আটঘাট বেঁধে নেমেছে, তাতে এ যাত্রা সরকার নাও থাকতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ই্ইউ, এবং ইউএন যখন চাচ্ছে সরকার পরিবর্তন হোক, দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরে আসুক। প্রণব মুখার্জি চলে যাওয়ার পরে দিল্লি থেকেও আর সেই সাপোর্ট পাচ্ছে না শেখ হাসিনা। সে কারনে সরকার বদলের চলমান প্রক্রিয়া যদি সফল হয়ে যায়, তবে এর সাথে যুক্ত নেপথ্যে ব্যক্তিবর্গের সাথে গোপনে যোগাযোগ রক্ষার একটি চেষ্টাও করছেন আকবর। এমনকি বিএনপির সাথে লন্ডন কানেকশন সৃষ্টির একটি চেষ্টাও কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের কাছে ধরা পড়েছে। যার ফলে আকবরের সঙ্গি সাথীরাও তাকে নিয়ে কিছুটা বিচলিত এবং সন্দেহের চোখে দেখছেন।
১৩ লংয়ের ব্যাচমেটদের কাছে ‘আকবইর্যা’ হিসাবে পরিচিত এই অফিসারটিকে স্মরণ করেন এভাবে, বিএমএ থেকেই সে ছিল ফাঁকিবাজ টাইপের লোক। তাকে দিয়ে সিরিয়াস কোনো কাজ সম্ভব নয়, বরং তার সাথে যারা আছে শেষে তারা বিপদে পড়বে। বিএমএতে থাকতে বগলে রসুন দিয়ে জ্বর তোলা, ঠোট কামড়ে রক্ত বের করে অফ নেয়া, নিষেধ থাকলেও সিগারেট খেতে গিয়ে পানিশমেন্ট খাওয়া, পরে চীনে কোর্স করতে গিয়ে বাংলাদেশী এক বনেদি পরিবারের মেয়ের সাথে অঘোষিত সংসার করার পরে তাকে মেরে ফেলার ঘটনা, ২০১৩ সাল থেকে ১৭ সাল অবধি হাজার হাজার রাজনৈতিক অপহরন ও গুম হত্যার সরাসরি নির্দেশদাতা হলেন এই আকবর। আকবরকে গত মার্চে সাভার ডিভিশনের জিওসি করে বসায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রিগেডিয়ার অবস্থায় ডিজিএফআইর প্রধান হিসাবে দায়িত্ব ছিলেন ২০১৩ থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি অবধি। আকবরের ব্যাচমেটরা জানান জেনারেল আকবর ইতোমেধ্যে ব্যাংককে প্রচুর টাকা পাচার করেছেন, সেখানকার পাতায়া বীচে একাধিক হোটেল ও মোটেল ব্যবসা কিনেছেন তিনি। তবে দীর্ঘদিন ধরে সংক্ষুব্ধরা বলছেন, আকবরের সাথে অনেক হিসাব বাকী। চাইলেই সে পালিয়ে যেতে পারবে না।
আকবর গ্রুপের বস হিসাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল তারিক সিদ্দিকী। জেনারেল তারেক ঢাকা সেনানিবাসের স্টাফ রোডের সরকারী বাসাতে সকল ষড়যন্ত্র হয়। তারিক সিদ্দিকীর সাথে যেসব জেনারেল জড়িত তারা হলেন আকবর, ডিজি এনএসআই মেঃ জেঃ শামস, মেঃ জেঃ মাসুদ রাজ্জাক তার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে ঢাকায়, মেঃজেঃ ওয়াকার (শেখ হাসিনার ফুফাত দুলাভাই), ঢাকার ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড কমান্ডর ব্রিগেডিয়ার শায়েখ। একটি সূত্র জানায়, তারিক সিদ্দিকী নিজেও টেনশনে আছে, যে কোনো সময়ে সরকারের পতন হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিপদ ঘাড়ে পড়ার আগেই বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার একটি রাস্তা চালু রেখেছেন বলে জানিয়েছেন শুভাকাঙ্খিরা।
এই অপতৎপরতা এবং ভীতুভাবাপন্ন সিদ্ধান্তহীনতা পেছনের কারণ এবং আগামীর করনীয় নিয়ে ভাবা উচিত।