হতে পারতো সশস্ত্রবাহিনী দিবসটি আনন্দের, উৎসাহের ও ভ্রার্তৃত্বের। অনাকাঙ্খিতভাবে বিড়ম্বনার হয়ে আসছে এবং সময়ের পরিক্রমায় জনবিচ্ছিন্নও হয়ে যাচ্ছে এই দিবস এবং এর গৌরবদৃপ্ত ইতিহাস। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ২১নভেম্বর সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী এবং বিমান বাহিনী একসঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল বলেই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এই দিনটিকে সশস্র দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। তবে আমার মূল্যায়নে এই দিবসটির তাৎপর্যে একটি মারাত্মক ভুল শুরু থেকেই রোপিত হয়ে আসছিল। এটির সংশোধন এখন জরুরী হয়ে পড়েছে। যুগের এবং সময়ের চাহিদানুযায়ী দাবি এবং প্রজন্মের চাওয়া ও পাওয়া হলো ঐ দাবিটিকে বাস্তবে রূপদান করা।
১৯৭১ সালে যখন বাঙ্গালীরা বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল তখন কারা ঐ প্রাথমিক কাজটুকু করেছিল? ইতিহাস স্বাক্ষীস্বরূপ আমাদেরকে বলে নিরস্ত্র বাঙালীরা। ছাত্র, কৃষক, চাকুরীজিবী, যুবক, ভবগুরে, টোকাই তারপর সর্বোপরী বাংলার আপামর নিরস্র জনসাধারণ (এর মধ্যে জামাত, আলবদর, রাজাকাররুপী পাকিস্তানপন্থী সুবিধাভোগী, আল শামস্ ব্যতিত সকলকে বোঝানো হয়েছে)। অনেকে আবার দেশের বাইরে থেকেও সমর্থন যুগিয়েছেন এবং সহযোগীতা করেছেন। কিন্তু সেদিন আমাদের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী ছিল না। তারপরও আমাদের দেশের মানুষ বুকে সাহস ও মনে বিশ্বাস এমনকি সৃষ্টিকর্তার উপর আস্থা রেখে এগিয়েছিল। তাদের সেই আত্মত্যাগ ও মনোবলকে উৎসাহিত করার পর বংলাদেশী বাঙালী পাকিস্তান সেনা ও নৌ এবং বিমান এমনকি পুলিশ বাহিনীর অফিসার থেকে সাধারণ সৌনিকদের কিছু অংশ সাধারণ বাঙ্গালী মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিজয়ের মুকুট ছিনিয়ে আনে। যা ইতিহাসে স্বর্ণোজ্বল অধ্যায় হিসেবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তবে প্রাথমিক ও প্রথম কাজটুকু কিন্ত করেছিল সেই বাংলার আপামর নিরীহ মানুষগুলোই। যারা এখন বর্তমান বাহিনীগুলোর দ্বারা নিগৃহীত।
তৎপরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু গঠন করে আর্মী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ, বিডিআর সহ প্রয়োজনীয় সরকারী বাহীনিগুলোকে। এমনকি সামগ্রিক প্রয়োজনে দেশ পরিচালনায় এবং সুরক্ষায় দেশীয় অফিস-আদালতের স্ব স্ব ডিপার্টমেন্ট অনুযায়ী লোকবল এবং কাঠামো। কিন্তু সেই আলোকেই মুল স্পীরিট (চেতনা) নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই ছিল সদ্য ভূমিষ্ট বাংলাদেশের সর্বোত্তম কাজ (যাকে আমরা ফরজে আইন বলতে পারি)। কিন্তু উল্টো পথে বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ফাটলতো শুরু হলো ৭৫এর ১৫ আগষ্টের পর।
বলতে গেলে স্বাধীনতা যুদ্ধের যে ঐতিহ্য এবং ঐক্য ও ভাতৃত্বের যোগসুত্রের মেলবন্ধন তা ক্ষুন্ন হয়েছে সশ¯্রবাহিনী দিবস পালনের মাধ্যমে। কোথায় বাংলার আপামর জনসাধারণ (যারা মুক্তিযোদ্ধে কোন কোন অবদান রেখেছিল)? শুধু কি সেদিন আর্মি, নেভি, বিমান বাহিনীই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রকে ছিনিয়ে এনে জন্ম দিয়েছিল? এসব প্রশ্ন অবান্তর হতো যদি শ্রদ্ধেয় চিন্তাবিদগণ কাঠামোতে কিছু পরিবর্তন এনে ঐসকল বাহিনীগুলোকে জনবান্ধব এবং জনসম্পৃক্ততায় সেবার মানদন্ডে পরিচালনা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে আসত। কেন পারেনি বা করেনি তা জানিনা? কোথায় তাদের দৈন্যতা এও বুঝতে অপারঙ্গম।
আমাদের মুরুব্বী এবং বাহিনীগুলোর প্রধানরা কি এখনও বুঝতে পারেননি কেন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল? বা এর কিই বা অন্তনিহীত তাৎপর্য। অর্থই কি সব? নাকি আরো অনেক কিছু রয়েছে অর্থের বাইরেও। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে এমনকি অনুর্বর মস্তিষ্কে যদি এই সকল বিষয় পরিলক্ষিত হয় তাহলে ওনাদের কেন হয় না? কারন সম্ববত ওনারা পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন না। বাস্তবতা ওনাদেরকে কঠোরতা এবং অন্যায্য দেখতে অভ্যস্ত করান না। সেই কারণটিই হয়ত বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পেছনে একটি বিরাট ভুমিকা রেখেছিল। সেদিন ঐ পাকিস্তান শাসক এবং আর্মি অফিসাররাও সাধারণ জনতার মনের কথা বুঝতে অক্ষম ছিল; কারণ তারা অনেক আগেই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।
ঐ জনবিচ্ছিন্নতার ধারাবাহিকতায় এখন আমাদের বাহিনীগুলোও আচ্ছন্ন। তাদের আচরণ এবং হাব-ভাব ও কমান্ডিং আদেশ যেন সেই পুরোনো পাকিস্তানেই আবার ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিত বহন করে। কারণ তারা পরিবার, পরিজন, সমাজ এবং দেশ ও দেশের প্রাণ (সাধারণ মানুষজনকে) অবজ্ঞা, অবহেলা, অসম্মান এবং নির্যাতন করে যাচ্ছে অহরহ। যেখানেই তাদের সুযোগ ছিল জনগণের সেবা ও একই কাতারে দাঁড়ানোর সেই পথে তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরোনে ধ্যান-জ্ঞান তাদেরকে দাম্ভিক এবং অন্ধ করে তুলেছে। সময় এসেছে ভাবার এবং দীর্ঘদিনের অভ্যাস পরিবর্তন করার; নতুবা হয়ত আরেকটি নিরস্র অধিকার আদায়ের বলিষ্ঠ সংগ্রামী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আসন্ন এবং বাংলার জনগণ তার অধিকার ছিনিয়ে আনবে এতে কোন সন্দেহ ও সংশয় নেই। কারণ ইতিহাস তার স্বাক্ষী এবং দালিলিক প্রমান বহন করে যাচ্ছে।
যদিও বিষয়টি গভীর এবং জটিলাকারে ঘূর্ণায়মান; তারপরও বলব কারন ঐ অসচেতন অবুঝরাতো আমাদেরই সন্তান, ভাই, বন্ধু ও আত্মার আত্মীয়। সশস্র বাহিনী দিবসটি উন্মুক্ত করা হউক সাধারণ জনগণের জন্য। এরোষ্ট্রেকেসি ভাব ঐ দিবসটি থেকে পরিহার করা হউক। যানবাহন চলাচলে উন্মুক্ততা অব্যাহত রাখা হউক। যেহেতু সেনানিবাসগুলো জনবসতী এলাকায় অবস্থিত সেহেতু জনগণকে যাতায়ত ও গমনাগমনের বাধা দুরা করা হউক। মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরকে সেনানির্বাসের রাস্তাদিয়ে যাতায়ত বিনাবাধায় উন্মুক্ত করা হউক। কোন মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা যেন সেনানিবাস চেকপোষ্ট এ দায়িত্বরত লোক দ্বারা অপমানিত আর না হয়। চেকপোষ্টের বিমাতাসুলভ আচরণ পরিহার করা হউক। মানুষকে মানুষের বা আশরাফুল মাকলুকাত এর সম্মান দিয়ে কথা বলা হউক। সাংবাদিক এবং সাংবাদিক ষ্টিকারযুক্ত গাড়ি সেনা অভ্যন্তরের ট্রানজিট যাতায়তে সহযোগীতা করা হউক। সকল বাধার সৃষ্টি এমনকি জনঅসন্তোষ সৃষ্টি বন্ধ করা হউক। জাতিসংঘে কর্মরত বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর অফিসার এবং সদস্যরা যে ধরনের আচরন, জনসম্পৃক্ত কাজ করে সম্মান অর্জন করেছেন এবং করে যাচ্ছেন সেই আচরণ নিজ দেশের মানুষের সঙ্গে করার আহবান জানাচ্ছি। বৈষম্যমূলক আচরণ করা থেকে বিরত থাকারও অনুরোধ করছি। এটা ভাবার কোন সুযোগ নেই যে, ক্যান্টনমেন্ট শুধু আর্মির এবং এর অভ্যন্তরের রাস্তা শুধু আর্মিরাই ব্যবহার করবে। সাধারণ মানুষ বা এর আশে পাশে বসবাসকারীরা ব্যবহার করতে পারবে না। কারণ ক্যান্টনমেন্টের অধিবাসীরা সরকারের কর্মচারী আর এদের বেতন ও অন্যান্য সকল কিছুই এই দেশের জনগনের অর্থের দ্বারা পরিশোধিত হয়। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে এই ক্যান্টনমেন্টের সরকারী কর্মচারী হিসেবে বসবাসকারীরাও এই সিমানার বাইরে গিয়ে জীবনের চাহিদা ও প্রয়োজন নির্বাহ করতে হবে। যদি সংশোধিত আচরণ পর্যবসীত না হয় তাহলে হয়তো এই সম্মানীত লোকজন সীমানার বাইরে গেলে পাবলিক বা সাধারণ জনগণ উত্তেজনা বা ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটিয়ে জনরোষে পরিণত করতে পারে। তার ভয়াবহতা খুবই নির্মম ও করুন। দোয়া করি ঐ পরিস্থিতি যেন চোখে দেখতে না হয়। নিজ দেশে কাউকে পরবাসী করে তুলবেন না এবং নিজেও হবেন না। আমরা সকলে মিলে মিশে এই দেশাটাকে স্বাধীন করেছি এবং এই দেশের উন্নয়নে সকল অন্তরায় দুর করে আগামীর শান্তি, স্থিতিশিলতা এবং উন্নতির পর্যায়ক্রমিক উন্নয়ন ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখব।
বিশেষ কোন সামরিক পোগ্রাম বা কর্মশালা হলে যেখানে সাধারণ বেসামরিক জনগণ প্রবেশ নিষেধ সেখানে জনগণকে পুর্ব নোটিশের মাধ্যেমে সচেতন করে ঐ কাজটুকু করলে জনসম্পৃক্ততা এবং আন্তরিকতা ও শ্রদ্ধবোধ জাগ্রত হবে এমনকি বৃদ্ধি পাবে। তবে বিনীত অনুরোধ জনবসতী এলাকার ক্যান্টনমেন্ট এর বাইরে ঐ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো দীর্ঘসময় নিয়ে না করলে সকলের জন্যই ভাল হবে। স্বল্প সময়ের কাজগুলো করা যায় যা পুর্ব নোটিশ এবং বিভিন্নভাবে জনসচেতনতা সৃষ্টি করে; হুমকি ও ধমকি না দিয়ে। কারন জনগণ এখন আর হুমকি ও ধমকিতে বিশ্বাস এমনকি ভয়ও করে না। বরং ভালবাসা, সুন্দর ব্যবহার এমনকি প্রয়োজনীয় স্বল্প সময়ের নিষেধাজ্ঞা জারি করে ঐ অনাকাঙ্খিত ঘটনার নিষ্কৃতি পাওয়া যেতে পারে। অতীতে দেখেছি নোটিশ এবং জনসচেতনতার বিভিন্ন লক্ষন। কিন্তু বর্তমানে তা অনুপস্থিত আর এর জন্য জনগণকে হতে হয়েছে অপমানিত। স্কুল, কলেজ পড়–য়া কিশোর মনে ঘটেছে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া। যার শুরু হয়েছে ৪বছরের শিশু থেকে…..। সুতরাং সাবধান… যাই করিনা কেন তা ভেবে চিন্তে এবং আমাদেরকে কেউ অনুসরণ করে এই ভেবে সুচিন্তিত, মার্জিত আগামীর করনীয় প্রত্যাশা করি। নতুবা আমাদের জাগ্রত বিবেক কষ্ট অনুভব করে কষ্টনির্ভর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে উৎসাহিত বোধ করবে। আশা করি এই ছোট উপমানির্ভর কথাগুলো কর্তৃপক্ষ সুনজরে এনে এর বিশদ পদক্ষেপ নিয়ে সামনের সোনালী দিনগুলো রহমত ও বরকতের আভায় ভরপুর করে তুলবে।