ফাহাদ বিন হাফিজ॥ দেশে পরিচালিত এনজিওগুলোর সব ধরনের কার্যক্রম কঠোরভাবে নজরদারি করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এনজিওগুলো দেশে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে কি না, তাও জানতে চেয়েছেন তিনি।
গত সোমবার নিজ কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন। সভায় উপস্থিত একাধিক মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৈঠকে শিল্প-কারখানাসহ সব পর্যায়ের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে আলোচনার সময় কারখানাগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন কেমন চলছে এবং এতে বাইরের কেউ হস্তক্ষেপ করছে কি না, তা জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। সে সময় এনজিওগুলোর কার্যক্রম নজরদারির নির্দেশ দেন তিনি।
একজন মন্ত্রী বলেন, ‘আলোচনার একপর্যায়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বাংলাদেশের শিল্প-কারখানার শ্রমিকরা ভালো আছেন, তাঁরা বেতনও ভালো পাচ্ছেন। এখন শুরুতেই শ্রমিকরা সাত-আট হাজার টাকা বেতন পান। ’
এ সময় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘বাংলাদেশের শ্রমিকরা ভালো আছেন, এটা ঠিক। তবে তাঁদের বেতন-ভাতা আরেকটু বাড়ানো উচিত। কারণ সরকারি কর্মচারীদের বেতন আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। কিন্তু সেটার সঙ্গে সমন্বয় করে শ্রমিকদের বেতন বাড়েনি। তাই তাঁদের বেতন আরো বাড়ানো উচিত। ’
এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু নৌমন্ত্রী শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন, তাই মজুরি কমিশন পুনর্বিন্যাস করা যেতে পারে। কারণ বিদ্যমান শ্রম আইন অনুসারে পাঁচ বছর পর পর মজুরি কমিশন পুনর্গঠনের বিধান আছে। কিন্তু সর্বশেষ মজুরি কমিশন গঠনের পর এখনো পাঁচ বছর পূর্ণ হয়নি। ২০১৮ সালে কমিশনের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হবে। ২০১৩ সালে মজুরি কমিশন করা হয়েছিল। পুনর্গঠনের পর কমিশন যদি বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করে তখন শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ানো যেতে পারে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী মনোযোগ দিয়ে মন্ত্রীদের আলোচনা শুনছিলেন। একপর্যায়ে তিনি বাংলাদেশে পরিচালিত এনজিওগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চান। তিনি বলেন, ‘এখন বাইরে থেকে গিয়ে কেউ কারখানার ভেতরে ট্রেড ইউনিয়নের আন্দোলন করতে পারে কি না বা করে কি না?’
উত্তরে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আর সেই সুযোগ নেই। কারণ এখন কারখানার শ্রমিকরাই ট্রেড ইউনিয়ন করেন। আর এসব ট্রেড ইউনিয়নকে বিভিন্ন এনজিও পৃষ্ঠপোষকতা করে। তবে এনজিওগুলো কোথা থেকে ফান্ড নিয়ে আসে, তাদের কার্যক্রম কী, কোথায় সেই ফান্ড ব্যয় হয়, তা আমাদের মনিটর (নজরদারি) করা হয় না।’
তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, এনজিওগুলোর কার্যক্রম নজরদারি করা উচিত।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশে পরিচালিত এনজিওগুলোর কার্যক্রম নজরদারির নির্দেশ দেন।
নাম প্রকাশ না করে একজন মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকা ও গোয়েন্দা সূত্রের খবরে জানা যায়, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা বা এনজিও শ্রমিকদের বিভিন্নভাবে উসকানি দিয়ে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়। বিশেষ করে বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় এ ঘটনা বেশি হয়ে থাকে। এ জন্যই এ বিষয়ে আরো কঠোর নজরদারি বাড়াতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
গাজীপুর ও রংপুর মহানগর পুলিশ আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন: বৈঠকে গাজীপুর ও রংপুর সিটি করপোরেশনের জন্য মহানগর (মেট্রোপলিটন) পুলিশ গঠন বিষয়ে আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ জন্য ‘গাজীপুর মহানগরী পুলিশ আইন, ২০১৭’ ও ‘রংপুর মহানগরী পুলিশ আইন, ২০১৭’-র খসড়া চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বিষয়টি মন্ত্রিসভা নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য গতানুগতিক আইনের মতোই হবে এসব আইন। পুলিশ কোন কোন অপরাধের জন্য কী দন্ড দিতে পারবে তা খসড়া আইনের বেশ কয়েকটি ধারায় বিস্তারিত বলা রয়েছে।
শফিউল জানান, কোনো ব্যক্তি উল্টোপথে গাড়ি চালালে, অননুমোদিত স্থানে গাড়ি রাখলে এবং অযথা যানবাহন দাঁড় করিয়ে জনগণের যাতায়াতে বিঘœ ঘটালে দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ড দেওয়া যাবে। এ ছাড়া ফুটপাতে গাড়ি চালালে বা গাড়ি রাখলে এক থেকে দুই হাজার টাকা জরিমানা হবে।
নারীদের উত্ত্যক্ত করার অপরাধেও এ আইনে দন্ড নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি রাস্তা বা হাটবাজার, মেলা বা শপিং মলসহ সর্বসাধারণের ব্যবহার্য কোনো স্থানে অথবা গৃহাভ্যন্তরে বা ঘরের বাইরে কোনো নারীকে দেখিয়ে বা দেখানোর উদ্দেশ্যে নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রদর্শন করলে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো নারীর পথরোধ করলে বা তার শরীরের কোনো স্থান স্পর্শ করলে বা অশালীন বাক্য বা শব্দ বা মন্তব্য বা অঙ্গভঙ্গি করে তাকে উত্ত্যক্ত করলে এক বছরের কারাদন্ড, কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে।’
বরিশাল ও খুলনার আদলেই নতুন দুটি আইন হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় শান্তি কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। যত দিন দুই শহরে মহানগর হাকিম আদালত না হচ্ছে তত দিন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতই দায়িত্ব পালন করবেন।
অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকার মতো গাজীপুর ও রংপুরে মহানগর পুলিশ দিতে ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর দুটি আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ২০১২ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়া রংপুর নগরীর আয়তন ২০৩ বর্গকিলোমিটার; জনসংখ্যা সাত লাখ ৯৫ হাজার। আর ২০১৩ সালে সিটি করপোরেশন হওয়া গাজীপুরের প্রায় ৩৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস।