টিআইএন॥ বঙ্গভবনে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। মহামান্য রাষ্ট্রপতি অভ্যাগতদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। এর মধ্যে এলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেই তিনি রাষ্ট্রপতির পাশেই দাঁড়ালেন। প্রথমে রাষ্ট্রপতি বুঝতে পারেননি, মনে করেছিলেন, বিচারপতি বোধ হয় কিছু বলবেন। পরে রাষ্ট্রপতির পাশে দাঁড়িয়ে তিনি নিজেই হোস্ট হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বঙ্গভবনের দরবার হলের পরিবেশ অন্যরকম হয়ে গেল। রাষ্ট্রপতি সিনহাকে বললেন, আপনি বসুন পরে আপনার সঙ্গে কথা বলছি। পরে রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা সিনহাকে সরিয়ে দেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাঁর এক ঘনিষ্ঠজনের কাছে বিচারপতি সিনহার বদলে যাওয়া প্রসঙ্গে এই ঘটনাটি উদাহরণ টেনেছিলেন।
প্রধান বিচারপতি হবার পর আস্তে আস্তে বদলে গিয়েছিলেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। নিজেকে এমনভবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলেন যে, তিনিই সব পারেন। আর এটা অনুভব করে তিনি সরকারের প্রতিপক্ষ হয়েছিলেন। বিচারপতি সিনহা পদত্যাগ করে চলে গেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কান্ডারীরা মনে করছেন সরকারের ভেতর এখনো অনেক সিনহা রয়ে গেছে। এদের চোখ উল্টানো শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এইসব সিনহাদের সংখ্যা আমলাতন্ত্রের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি। নির্বাচনের একবছর আগে হঠাৎ সচিবালয়ে ‘নিরপেক্ষতা’র ধুম লেগেছে। যাদের উপ-সচিব কিংবা যুগ্ম সচিব পর্যন্ত পদোন্নতি পাবার কথা ছিল, তারাই এখন সচিব হয়ে সরকারের সমালোচনা করছেন। সরকারি কাজ, অগ্রগতি প্রকল্পগুলোতে বাধা সৃষ্টি করছেন। গুরুত্বপূর্ণ একাধিক মন্ত্রণালয়ের সচিবদের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ উঠেছে। শুধু সচিব কেন, সচিবালয়েই এখন সরকারের সমালোচকের সংখ্যা বেশি। এই সরকার এসে পদের প্রায় তিনগুণ অতিরিক্ত সচিব করেছেন। কিন্তু অতিরিক্ত সচিব করে সরকার যেন মহা অন্যায় করেছে। সচিব হতে না পারার দুঃখে তাঁরা সরকারের কাজেই বাধাগ্রস্থ করছেন। একজন সচিব দুঃখ করে বলছিলেন, ‘এই সরকার পে স্কেল দিল, এত প্রমোশন দিলো অথচ দেখেন কালকে যদি বিএনপি বলে আমরা নির্বাচনে যাব, সঙ্গে সঙ্গে অর্ধেক আমলা জিয়ার সৈনিক হয়ে যাবে।’
পুলিশের মধ্যেও সিনহা আছে। বিভিন্ন স্থানে তাঁরা এখন বিএনপি জামাতের সঙ্গে খাতির জমানোর প্রাণান্ত চেষ্টা করছে। চিহ্নিত আসামি জামাতের কর্মী হলে ধরা হচ্ছে না, আবার কোনো অপকর্ম হলেই সেখানে ছাত্রলীগ-যুবলীগ খোঁজা হচ্ছে। কোনো কালে ছাত্রলীগ করেছিল কিংবা ছাত্রলীগের কোনো মিছিলে অংশ নিয়েছিল- তাঁকেই ছাত্রলীগের বা যুবলীগের নেতা বানিয়ে গণমাধ্যমে খবর পাঠানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতারা এটাকে সিনহা সিনড্রোম হিসেবে দেখছেন।
শুধু আমলা, মাঠ প্রশাসন, পুলিশ নয়, সিনহা সিনড্রোমে ভুগছেন অনেক রাজনীতিবিদরাও। যাঁরা এখন সরকারের সমালোচনা করে বাহবা কুঁড়াতে চাইছেন। হঠাৎ করে হাওয়া বদল হচ্ছে। তবে এটাকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা স্বাভাবিকভাবেই নিচ্ছেন। নির্বাচনের আগে এরকম কিছু বিশ্বাসঘাতক সবসময়ই তৈরি হয়। তবে জরুরি হলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সিনহাদের বিরুদ্ধে একটা শুদ্ধি অভিযান।