আশ্রাফুল মামুন॥ আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চিকিৎসক, যন্ত্রপাতি, ঔষধের অপ্রতুলতা, চিকিৎসকদের দায়িত্ব অবহেলাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে চিকিৎসা সেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই হাসপাতালে কাগজে কলমে ১০জন চিকিৎসক থাকলে ও ছুটিসহ নানা কারনে নিয়মিত বেশীভাগ চিকিৎসক থাকছেন অনুপস্থিত। আবার যারা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন তারা মানছেন হাসপাতালের সময় সূচি। যখন যার খুশি আসছেন এই হাসপাতালে। সেই সাথে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচও) পদটি ও শুন্য রয়েছে। এই পদটি শুন্য থাকার ফলে হাসপাতালটি যেন এক প্রকার অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে আছে। ফলে নিত্যদিন স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা অসহায়, গরীব ও সাধারণ রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, পৌর শহরসহ উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার ভরসাস্থল এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি। বর্তমানে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ইতিমধ্যে ৫০ বেডে উন্নতি হয়েছে। হাসপাতালে ১৪জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ১০জন। এরইমধ্যে সদ্য যোগদানকারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নোমান মিয়া বদলি হওয়ায় নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হয়।
তাছাড়া ডাক্তার মো. রুহুল মহসীন সৃজনকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা দেবার জন্য পাঠানো হয়। আসাদুজ্জামান এক সঙ্গে আখাউড়া ও বিজয়নগরের দায়িত্ব পালন করছেন। ডাক্তার শাহনেওয়াজ খান ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও আখাউড়ায় দায়িত্ব পালন করছেন। সপ্তাহে দুদিন আখাউড়ায় থাকছেন তিনি। ডাক্তার আবু রায়হান উদ্দিন ভূঁইয়া পরীক্ষার জন্য তিনি ছুটি নিয়েছেন বলে সূত্র জানায়। বর্তমানে ২ জন চিকিৎসক এই হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্য চিকিৎসকরা নানা অজুহাতে হাসপাতালের বাইরে থাকায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সেবার কাজ করছেন এখন মেডিকেল সহকারী মো. আলমগীর হোসেন ও ডেন্টাল টেকনোলজিষ্ট লুৎফুন নাহার ও।
যেসব চিকিৎসকরা আবার হাসপাতালে থাকছেন তারা কোন নিয়মনীতি তোয়াক্কা করছেন না। তাদের মর্জিমতে চলছে হাসপাতালটি এমন অভিযোগ রোগীদের।
সূত্র জানায়, প্রতিদিন এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ৩থেকে ৪শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে হাসপাতালে ভিড় করেন। কিন্তু চিকিৎসকের দেখা মেলা যেন রোগীদের ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। কাগজে কলমে ওই ১০ জন চিকিৎসক হলেন, মো. আব্দুল কাদির, মো. রায়হান উদ্দিন ভূইয়া, মো. আবু নাছের, শাহনাজ বেগম, মো. শাহনেওয়াজ খান, ফরিদা ইয়াসমিন, শায়লা পারভিন, আফ্রিন জাহান, মো. আসাদুজ্জামান, রুহুল মহসীন সৃজন।
সরেজমিনে বুধবার গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১০ টায় এই হাসপাতালের বেশ কয়েকটি চিকিৎসকের কক্ষে তালা ঝুলছে। ২টি কক্ষে বসে আছেন চিকিৎসক । তবে একজন সময়মতো আসলেও অপরজন সকাল ১০টার পর হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালের বারান্দায় অসংখ্য নারী, পুরুষ ও শিশুরোগীকে দেখা যায় । পুরুষের চাইতে নারীর সংখ্যা বেশী চোখে পড়ে। রোগীরা চিকিৎসা নিতে ডাক্তারের কক্ষ খোঁজছেন। ২টি চিকিৎসকের কক্ষ ছাড়া অন্যসব কক্ষ তালা থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অনেকটাই বিপাকে পড়তে হয়। এদিকে বেলা বারার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই দুই চিকিৎসকের কক্ষে উপচে পড়া ভীড় লেগে যায়। এসময় চিকিৎসকরা রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশীম খেতে দেখা যায়।
একাধিক রোগী অভিযোগ করে বলেন এমনিতেই হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট চলছে। সাধারণ রোগীরা চিকিৎসা নিতে পারছেন না। কিন্তু ওষধ কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা সকাল থেকেই হাসপাতাল চত্বরে জটলা বেধে ছুটাছুটি করছেন । সারাক্ষণ ডাক্তারদের কক্ষে আসা যাওয় করায় চিকিৎসা সেবা মারাত্ম ভাবে বিঘিœত হচ্ছে।
উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের গৃহিনী আকলিকা আক্তার বলেন, সকাল ১০টায় চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসা হলে রোগীদের ভীড় থাকায় বহু কষ্টে ডাক্তার দেখিয়েছি।
পৌর এলাকার দেবগ্রামের মো. জামাল মিয়া বলেন, ডাক্তারের কক্ষে এক সাথে ১০-১২ জন বসে থাকায় রোগ সংক্রান্ত বিষয়ে বেশী কথা বলা যায় না। স্বল্প কথায় ব্যবস্থাপত্র লিখে দিচ্ছেন চিকিৎসক।
মসজিদ পাড়ার গৃহিনী শান্তা আক্তার বলেন, অনেক্ষণ দাড়িয়ে থেকে মেয়েকে ডাক্তার দেখিয়েছি। মেয়ের সমস্যার বিষয়ে ভাল করে বলার আগেই ডাক্তার ওষধ লিখে দিয়ে ৩ দিন পরে আসতে বলে।
জরুরী বিভাগে থাকা মেডিকেল সহকারী মো. আলমগীর হোসেন জানায়, হাসপাতালে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি বাধ্য হয়ে রোগী দেখতে হচ্ছে।
ডাক্তার আবু রায়হান উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। সকলে নিয়মিত হাসপাতালে আসলেও রোগীর সংখ্যা বেশী থাকায় তাদের হিমশিম খেতে হয়। আশা করছি অচিরেই এসংকট কেটে যাবে।