বাআ॥ পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লির জন্য কংক্রিটের মূল স্থাপনা নির্মাণের উদ্বোধন করে স্বপ্নপূরণের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “আজকের দিনটি আমাদের জন্য সত্যি আনন্দের। কারণ আমরা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল কাঠামোটা নির্মাণ শুরু করছি। অর্থাৎ, আমরা পরমাণু বিশ্বে প্রবেশ করলাম।” গত বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে ঈশ্বরদী উপজেলায় পদ্মাতীরের রূপপুরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।
প্রকল্প এলাকায় যে জায়গায় নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর তৈরি হবে, সেখানে অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি কর্ণিক দিয়ে নিজের হাতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম কংক্রিট ঢালাইয়ের উদ্বোধন করেন। পরে একটি ফলকও তিনি উন্মোচন করেন।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার বক্তব্যের শুরুতেই জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, “রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন।” স্বাধীনতার আগে ১৯৬১ সালে বাংলাদেশে (তৎকালীণ পূর্ব পাকিস্তান) পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণসহ বেশ কিছু কাজ সম্পন্ন হলেও পরে প্রকল্পটি পশ্চিম পাকিস্তানে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
স্বাধীনতার পর সীমিত সম্পদের মধ্যেও রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে সময় ওই প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন, বঙ্গবন্ধুর জামাতা শেখ হাসিনার স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী এম ওয়াজেদ মিয়া।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির জনক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী কাজও শুরু হয়েছিল।” এ প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য ওয়াজেদ মিয়া মাঝেমধ্যে শ্বশুরের (বঙ্গবন্ধু) সঙ্গে বাহাসে জড়াতেন বলেও অনুষ্ঠানে জানান শেখ হাসিনা। “তিনি মেয়ের জামাই এটা ভুলে গিয়ে অনেক সময় ঝগড়া-ঝাটিও করতেন; কত দ্রুত এটা করা যায়। এ অভিজ্ঞতাও আমার আছে।”
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে ফিরলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প আবার গতি পায়। কিন্তু ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে প্রকল্পের কাজ আবার বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে আমরা আবার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করি। বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়া এটি বাস্তবায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।” এজন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ রাশিয়ান ফেডারেশনের সরকার এবং জনগণকে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের মত মধ্য আয়ের দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে যে সমালোচনা সে সময় হয়েছিল, তার জবাবে উন্নয়ন কর্মকান্ডে বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ এই পারমাণবিক উৎস থেকেই আসবে।
২০২৩ সাল নাগাদ রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে ১২০০ মেগাওয়াট এবং পরের বছর আরও ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।