নয়ন॥ গত ২৬ নভেম্বর ছিল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। সময় বিকেল সাড়ে তিনটা। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ২০১৭-১৮ সেশনের স্নাতক সম্মান ১ম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার ১ম দিনের এ ইউনিটের চতুর্থ শিফটের পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেট দিয়ে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে তল্লাশি করে লাইন ধরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। ভিড়ে শিক্ষার্থীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসনের লোকজন। হঠাৎ দুই পায়ে শেকল বাঁধা অবস্থায় এক পরীক্ষার্থী সবার নজরে কাড়ে। পায়ে শেকল বাঁধা দেখে শুরু হয় প্রশাসনের জিজ্ঞাসাবাদ।
জিজ্ঞাসাবাদের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. ফরিদুল ইসলামের হস্তক্ষেপে শেকল পরা অবস্থাতেই তাকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হয়। এ সময় সহকারী প্রক্টর ড. শফিক আশরাফ ছেলেটিকে পরীক্ষার হল পর্যন্ত হেঁটে পৌঁছে দেন।
কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার একটি গ্রামের এক কৃষক পিতার একমাত্র ছেলে ওই শিক্ষার্থী। তার একমাত্র বোন কুড়িগ্রামের একটি কলেজ থেকে স্নাতকে পড়াশোনা করছে। তার পিতার তথ্য মতে, তার ছেলে খুব মেধাবী ছিল। ৫ম শ্রেণিতে মেধাতালিকায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। প্রায় ছয় মাস আগে থেকে হঠাৎ অদ্ভুত আচরণ করতে থাকে সে। পরে তাকে ডাক্তার দেখানো হয়। ডাক্তার অতিরিক্ত টেনশন ও ঘুম কম হওয়ার ফলে তার মস্তিষ্কে কিছু সমস্যা হয়েছে বলে জানান। সে যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্যই তার পায়ে শেকল পরিয়েছে বলে জানায় তার পিতা। অধিক রাত জেগে পড়াশোনা করাই তার পুত্রের মস্তিষ্কের সমস্যার কারণ বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার সময় পড়াশুনা নিয়ে ও অনেক টেনশনে ছিল। জেদি স্বভাবের পুত্র আমার। অনেক রাত জেগে পড়াশুনা করতো। এরপর থেকেই তার এই সমস্যা দেখা দেয়। তিনি আরও বলেন, আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল সে ম্যাজিস্ট্রেট হবে। এখনো পড়াশুনার প্রতি তার আগ্রহ অনেক বেশি। আমার বিশ্বাস, সে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করবে।
এসময় ভর্তিচ্ছু ওই শিক্ষার্থী বলেন, আমার স্বপ্ন একদিন অনেক বড় হবো আমি। দেশের সেবা করবো। পায়ে কেন শেকল পরানো হয়েছে জানতে চাইলে সে বলে, আমার মাথায় সমস্যা দেখা দেওয়ায় পরিবারের লোকজন পায়ে শেকল পরিয়ে দিয়েছে।
পরীক্ষা শেষে তার পিতা জানায়, ছেলের পরীক্ষা অনেক ভালো হয়েছে। আশা করি সে একদিন আমার মুখ উজ্জ্বল করবে।