ইতিহাস বিকৃতকারীদের কখনও ক্ষমতায় দেখতে চান না…প্রধানমন্ত্রী

টিআইএন॥ বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইতিহাস বিকৃতকারীরা যেন আর কখনও ক্ষমতায় আসতে না পারে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে আরও এগিয়ে যাবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই দেশ গড়ে উঠবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

history change are not in power
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো বিশ্ব প্রামাণ্য ঐহিত্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় শনিবার রাজধানীতে আনন্দ শোভাযাত্রা শেষে সোহরাওয়ারাদী উদ্যানের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে রাজধানীসহ সারাদেশেই আয়োজিত হয়েছে এই শোভাযাত্রা।
দুপুরে নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে বের হয় শোভযাত্রা। হাজার হাজার মানুষ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আসতে থাকেন সোহরাওয়াদী উদ্যানে। এই কর্মসূচির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বেলা ১২টার পর থেকে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
৪৬ বছর আগের এই ভাষণটিকে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশেই এক সময় এই ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল। এই ভাষণ বাজাতে গিয়ে বহু মানুষ প্রাণ দিয়েছে। আজকে ইউনেস্কো সেই ভাষণকে স্বীকৃতি দেয়ায় প্রমাণ হয়েছে ইতিহাসকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধীদের বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় চলে আসা, রাজাকার, আলবদরদের মন্ত্রী করার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করতে চেয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলন, ‘৭৫ এ কেবল জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়নি, যে আদর্শ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সেই আদর্শকেও ভুলুণ্ঠিত করে রাজাকার আলবদরকে ক্ষমতায় বসানো হয়। তারা ইতিহাস বিকৃত করে। জাতির পিতার ভাষণ নিষিদ্ধ করে। এই ভাষণ বাজাতে গিয়ে কত মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে।’
দেশের কয়েকটি প্রজন্ম স্বাধীনতার ইতিহাস জানতে পারেনি মন্তব্য করে তাদের জন্য দুঃখ হওয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘যারা এই ভাষণ একদিন নিষিদ্ধ করেছিল তাদের অবস্থানটা এখন কোথায়? তারা যে মহাসত্যকে সম্পূর্ণণভাবে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল।’
এই শক্তিকে সব সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে রাখার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজাকার, আলবদর স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, ইতিহাস বিকৃতিকারীরা যেন কখনই আর ক্ষমতায় আসতে না পারে।’
জাতির পিতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যও কাজ শুরু করেছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তার দেখানো পথেই এখন এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের অর্থনীতি এখন শক্তিশালী।
বাংলাদেশকে এক সময় বিশ্ব করুণার চোখে দেখত মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আন্তর্জাতিকভাবে দেশ মর্যাদা পেয়েছে। আজকে আমাদের কেউ করুণা করতে পারে না, অর্থনৈতিকভাবে আমরা আজ শক্তিশালী। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের সেদিনের প্রেক্ষাপট, তার ভাষণের নানা বক্তব্যের ব্যাখ্যাও দেন প্রধানমন্ত্রী। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থেকে এই ভাষণ শোনা এবং লাখো মানুষের উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করার কথাও বলেন তিনি।
সেই ভাষণেই বঙ্গবন্ধু সমগ্র দেশবাসীকে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন তার কন্যা। তিন বলেন, ‘তিনি বলেছিলেন, তোমাদের যা যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক।’ আরও বলেছিলেন ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল।’
‘এখনও বারবার মনে পরে সেই দিনের কথা’-এমন মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘জাতির পিতা জানতেন এই ভাষণের পর স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে, তাকে হত্যা বা গ্রেপ্তার করা হতে পরে। সে জন্যই তিনি বলে গিয়েছিলেন, ‘আমি যদি হুমুক দিবার নাও পারি… আমাকে যদি হত্যাও করা হয়…’। এত দূরদর্শী ভাষণ আর একটিও নেই।’
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার পরিকল্পনা আরও আগের জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭০ সালের ৫ ডিসেম্বর তিনি তিন নেতার মাজারে ফুল দিতে গিয়ে বলেছিলেন, এই ভূখন্ডের নাম হবে বাংলাদেশ। আজ লাল সবুজের পতাকাও তারই পছন্দ করা। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি, এটা তার খুব পছন্দের গান ছিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সাড়ে তিন বছরেই বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ কারণেই তাকে হত্যা করা হয়।
‘জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এক কোটি মানুষ শরণার্থী, সাত কোটি মানুষের মধ্যে সাড়ে তিন কোটি মানুষ গৃহহীন, লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা হয়েছে, নারী ধর্ষিত হয়েছে। রাস্তাঘাট, সেতু ধ্বংস হয়েছে। এসব রাস্তাঘাট মেরামত করা, গৃহহীনদেকে ঘরের ব্যবস্থা করা, শহীদ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ থেকে অগ্রযাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশের। কিন্তু শত্রুরা তা থামিয়ে দেয়।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক আয়োজন। দেশাত্মবোধক নাচ-গান ও অন্যান্য উপস্থাপনা মুগ্ধ করে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.