ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ঐক্যবদ্ধভাবে দৃঢ় সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে…রাষ্ট্রপতি

আবদুল আখের॥ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ভারত মহাসাগরীয় উপকূলবর্তী অঞ্চলে ঐক্যবদ্ধভাবে দৃঢ় সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে। তা ছাড়া সমুদ্র ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে সম্পদ আহরণ করতে হবে। রাষ্ট্রপতি গত সোমবার (২৭ নভেম্বর-২০১৭) ইনানি বীচে ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম (আইওএনএস) মাল্টিলেটারেল মেরিটাইম সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এক্সারসাইজ (আইএমএমএসএআরইএক্স)-২০১৭-এর উদ্বোধনকালে এই গুরুত্ব আরোপ করেন।                                                                                    hamid in see economy
তিনি বলেন, ‘সমুদ্র জীবনের নিরাপত্তা একটি আঞ্চলিক দায়িত্ব। তাই, আমাদের অস্তিত্বের কারণে আমাদের একত্রে কাজ করতে হবে এবং বিদ্যমান ফোরামগুলোকে অবশ্যই যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরীয় উপকূলীয় অঞ্চলে দৃঢ় সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে হবে।’বাংলাদেশ নেভি এই প্রথমবারের মতো এ ধরনের সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে। এতে ৯টি পর্যবেক্ষক দেশসহ প্রায় ৩২টি দেশের নৌপ্রধান, উচ্চপদস্থ নৌ কর্মকর্তা ও যুদ্ধজাহাজ বিষয়ক বিশেষজ্ঞগণ অংশগ্রহণ করেন। এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগর ও সংলগ্ন মহাসাগরীয় অঞ্চলে মানবিক দিকসহ তথ্য বিনিময় এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া এই সিম্পোজিয়াম আয়োজনের মূল লক্ষ্য। রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, ‘ভৌগলিক সীমারেখা দেশগুলোকে বিভক্ত করেছে, কিন্তু মহাসগারীয় অঞ্চলে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন আমাদেরকে একত্রিত করতে পারে।’
ঘূর্ণিঝড় ও সুনামির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় একটি দেশের পক্ষে কার্যকরভাবে সামাল দেয়া সম্ভব নয় উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আঞ্চলিক দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে মহাসাগর অঞ্চলের বিভিন্ন দুর্ঘটনায় জীবন বাঁচাতে পারে। তাই আমাদের সকলকেই একত্রে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় দেশ এবং এই দেশ প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকতে চায় উল্লেখ করে হামিদ বলেন, ‘আমরা ওই ইতিবাচক মানসিকতায় বিশ্বাসী এবং এটি আঞ্চলিক দেশসমূহের মধ্যে উন্নয়নের প্রতি আস্থা ও দ্বিপক্ষীয় সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ।’ রাষ্ট্রপতি হামিদ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরাম ও সংস্থায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের উল্লেখ করে বলেন, আমাদের উভয় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা বিরোধের আপস-নিষ্পত্তি করে বাংলাদেশ বিশ্বে একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
তিনি বলেন, গত দুই দশক ধরে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে অন্যতম শীর্ষ সেনা প্রেরণকারী দেশ হিসেবে এটি বিশ্বে শান্তি স্থাপনে দেশের প্রতিশ্রুতির যথার্থ প্রতিফলন। রাষ্ট্রপতি বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোকে মেরিটাইম ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই সাম্প্রতিক সময়ে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন আছি, সাগরের সম্পদ উত্তোলন, ব্যবস্থা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবার কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকার সমুদ্র খাতের উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে।’ তিনি বলেন, সাগরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলেই সমৃদ্ধ এই মেরিটাইম ইকোনোমির উন্নতি হতে পারে। সমুদ্র নিরাপত্তার বিভিন্ন দিক দিন দিন জটিল হয়ে যাচ্ছে। একথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উন্নয়ন ও সক্ষমতা বাড়ানোর কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
সাগরে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ‘আস্থার প্রতীক’ হিসেবে গড়ে ওঠেছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকারের ব্লু ইকোনোমি এজেন্ডা বাস্তবায়নে নৌবাহিনী সাগরে ‘অতন্দ্র অভিভাবকের মত’ কাজ করছে।’পররাষ্ট্র নীতির মূল কথা ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরীতা নয়’ একথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এই নীতির আলোকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাশাপাশি আমরা সকল আঞ্চলিক দেশের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক বজায় রাখছি।’ অনুষ্ঠানে সিম্পোজিয়াম চেয়ারম্যান ও নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ ও ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল সুনিল লানবাও বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে বাংলাদেশে বিদেশী মিশনের কয়েকজন প্রধান, বাংলাদেশ সেনা ও বিমান বাহিনী প্রধানগণ, স্থানীয় এমপিগণ, নৌবিভাগের প্রধানগণ ও অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিদলের প্রধানগণ এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.