জাহাঙ্গীর আলম, বরিশাল প্রতিনিধি॥ হাঁচি দিলেই বের হচ্ছে পোকা। কারণ পোকা তার মাথার ভেতর বাসা বেঁধেছে। এমন ঘটনার কথা ভাবা যায়? এমন ঘটনা অবাস্তব মনে হলেও সত্যি ঘটেছে। বরিশালের মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের হনুফা বেগম (৪০) হাঁচি দিলেই বের হচ্ছে পোকা। গত কয়েক দিনে তার হাঁচির সঙ্গে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি জীবন্ত পোকা বের হয়েছে।
হনুফা বেগম বলেন, অনেক দিন থেকে মাথাব্যথা ও চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে। এজন্য মাঝে মধ্যে মাথাব্যথার ওষুধ খেয়ে নিবারণের চেষ্টা চালাতাম। সর্বশেষ গত ২১ ফেব্রুয়ারি নাক থেকে রক্ত বের হয়। এতে মাথাব্যথা আরও বেড়ে যায়। গৌরনদীর একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে গেলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানোর পরামর্শ দেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি পুনরায় নাক থেকে রক্ত বের হতে থাকে। ওইদিন বরিশাল নগরীর ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকার প্রাইভেট ক্লিনিক রয়েল সিটি হাসপাতালে ভর্তি হন। ইএনটি বিশেষজ্ঞ খান আব্দুর রউফের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা শুরু হয়।
তিনি আরও জানান, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসক খান আব্দুর রউফ একধরনের যন্ত্র ব্যবহার করে নাকের ভেতর কী যেন করেন। এরপর তিনি হাঁচি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় আকারের ১৫ থেকে ২০টি জীবন্ত পোকা বের হয়ে আসে। একইভাবে গতকাল সোমবার আবারও হাঁচি দিলে ১০-১২টি পোকা নাক থেকে বের হয়। এতে তার মাথাব্যথা অনেকটা কমে আসে।
চিকিৎসক রউফ জাগো নিউজকে জানান, এ রোগের নাম হচ্ছে ‘ম্যাগোট ইন দ্য নোজ অ্যান্ড প্যারানাজাল এয়ার সাইনাস’। নাক, চোখ ও কপালের অভ্যন্তরে একাংশে ফাঁকা জায়গা থাকে। কোনোভাবে পোকা সেখানে প্রবেশ করতে পারলে খালি স্থানে বাসা বাঁধে। সেখানে ডিম পাড়ে। এরপর ওই ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়। হনুফার অবস্থাও একই হয়েছে।
অচেতন অবস্থায় হনুফার নাকের ভেতর ওই পোকাটি প্রবেশ করে তার খালি জায়গায় স্থান করে নিয়েছে। সেখানে ডিম দেয়ায় সেই ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়ে অগণিত পোকার আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। দীর্ঘ সময় ধরে পোকাটি বাসা বাঁধলেও হনুফা ও তার পরিবার বিষয়টি বুঝতে পারেনি। আর এ কারণে তার মাথাব্যথা এবং চোখ দিয়ে অনবরত পানি বের হতো। চিকিৎসার পর এ অবস্থা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন হনুফা। তবে দেরি হলে জটিল আকার ধারণ করতো। এতে তার মৃত্যুর ঝুঁকিও ছিল। এখন একটি সিটিস্ক্যান করে পোকার বাসাটি নির্ণয় করার পর ওই বাসা ওষুধের মাধ্যমে ধ্বংস করা হবে।
চিকিৎসক রউফ জানান, মাথার ভেতর কীভাবে পোকা বাসা বেঁধেছে হনুফা বলতে পারছে না। তবে হনুফা কৃষিকাজ করেন। ধারণা করা হচ্ছে হনুফা বিশ্রাম নিতে গিয়ে কখনও গাছের নিচে ঘুমিয়ে পড়লে অচেতন অবস্থায় পোকা তার নাক অথবা কান দিয়ে প্রবেশ করে খালি স্থানগুলোতে বাসা বাঁধে। এজন্য কোনো গাছের নিচে বেশিক্ষণ না থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন এ চিকিৎসক।