ক্ষমতায় আসতে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি’র সমঝোতার চেষ্টা

আবদুল আখের॥ ৩ শর্তে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি (জাপা)’র মধ্যে বড় রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা চলছে! যা শিগগির আলোর মুখ দেখতে পারে বলে দু’দলের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে। সমঝোতার জন্য মূলত পার্শ্ববর্তী একটি দেশে বিএনপি-জাপার মধ্যমসারির একাধিক দূত ইতোমধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।                                             bnp jp joint
সূত্রটি জানায়, ৩ শর্তের মধ্যে রয়েছে- রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাপা প্রার্থীকে জিতিয়ে আনা, আগামী নির্বাচনে ১০০ নির্বাচনী আসন ছেড়ে দিয়ে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন ঠিক করা এবং সুবিধাজনক সময়ে সরকার ও মহাজোট থেকে বেরিয়ে আসবে জাপা।
সূত্রটি জানায়, মধ্যস্থতাকারী হিসাবে জাপার পক্ষে এরশাদের ‘ঘনিষ্ঠ’ এক নারী ও পার্টির মহিলা উইংয়ের এক নেত্রীসহ বেশ কয়েকজন রয়েছেন।
অপরদিকে, বিএনপির পক্ষে আগে জাপায় ছিলেন কিন্তু এখন বিএনপির দায়িত্বশীল পদে আছেন এমন এক নেতা ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা রয়েছেন বলে জানা গেছে।
মধ্যম সারির ওইসব নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মোটা দাগে ৩ শর্ত থাকলেও সমঝোতায় আরো কিছু ছোট ছোট শর্ত রয়েছে। যেমন এরশাদকে ‘স্বৈরাচার’ বলে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের বক্তৃতা না দেওয়া, জাপার কোনও নেতাকে বিএনপিতে না নেওয়া, জাপা আপাতত সরকারে থাকলেও দু’দলকে একে অন্যের সহযোগিতা করা ইত্যাদি।
ওইসব নেতাদের দাবি, সমঝোতার ভিত্তিতেই এখন আর জাপাকে নিয়ে কোনও আক্রমণমূলক বক্তৃতা দেন না বিএনপি নেতারা। পাশাপাশি জাপাও সরাসরি সরকার ও আওয়ামী লীগের বিরোধীতায় প্রকাশ্যে বক্তৃতা বিবৃতি দিচ্ছেন।
উদাহরণ হিসেবে ওইসব নেতাদের দাবি সম্প্রতি জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের একটি বক্তব্যকে সামনে তুলে এনেছেন।
সম্প্রতি বনানীতে এরশাদের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক যোগদান অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, সামনে যে দিন আসছে তা কেবল জাতীয় পার্টির। আওয়ামী লীগকে মানুষ আর চায় না। এছাড়া সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক অনুষ্ঠানে এরশাদকে স্বৈরাচার বলে মন্তব্য করায় রুষ্ঠ জাপা।
যদিও এমন সমঝোতা বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, যারা এগুলো করছে তারা কি দলের কোনও পরিচয় বহন করেন? তারা কি প্রকাশ্য পরিচয় দিয়ে সামনে বলতে পারবেন? তিনি দাবি করেন এগুলো আসলে গল্প।
কিন্তু জাপার একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করেছে, এই প্রক্রিয়াটি গত এক বছর ধরে চলছে। দলের একটি বড় অংশ জাপাকে মহাজোট থেকে বের করে বিএনপির সাথে জোট বাঁধার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
জাপার প্রেসিডিয়াম ও সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যায়ের একাধিক নেতা এ প্রতিবেদকের কাছে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
তারা বলেন, এরশাদ কেবলমাত্র সময়-সুযোগের অপেক্ষায় আছেন।
এ বিষয়ে সাবেক জাতীয় পার্টি নেতা এবং বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, নট আন লাইকলি, হতেও পারে। রাজনীতিতে অনেক কিছুই হয়। নির্বাচনী সমঝোতা হতেও পারে। তবে এখন এই প্রক্রিয়া কতদূর আছে তা আমি নিশ্চিত নেই। এবিষয়ে জাপার প্রেসিডিয়ামের কোনও নেতাই মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জাপার কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এ মুহুর্তে কোনও কমেন্ট করবো না।
জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনেও একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জাপা সূত্র জানায়, এরশাদ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেছেন। সেখান থেকে ৭ ডিসেম্বর দেশে ফিরে আসার পর প্রকাশ্যে কোনও অগ্রগতি হতে পারে। সূত্র: পরিবর্তন ডটকম; ওয়ান নিউজ বিডি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.