বাআ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ায় তাঁর সরকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, বিদ্যুৎ ব্যতীত কোনভাবেই কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘একটি দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ অপরিহার্য। আমরা দেশের সুষম উন্নয়নে বিশ্বাসী। কাজেই আমাদের লক্ষ্য শুধু শহরেই নয় তৃণমূলের গ্রাম গঞ্জের ঘরে ঘরে বিদ্যুতের সেবা পৌঁছে দেয়া।’ প্রধানমন্ত্রী রবিবার সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চারটি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ১০টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন। চারটি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে-শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকল পাওয়ার প্লান্ট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট, শালা ৪০০ কিলোওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্ট এবং সরিষাবাড়ি ৩ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্ট।
শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ১০টি উপজেলা হচ্ছেÑ ফরিদপুর সদর, রাজৈর, নওগাঁ সদর, কামারখন্দ, আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, শালিখা, মেহেরপুর সদর, মদন ও বেলাবো।
বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ক্যাপটিভ জেনারেশনসহ ১৬ হাজার ১৫০ মেগাওয়াট। দুর্নীতিতে পর পর ৫ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করাসহ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ১ মেগাওয়াটও না বাড়িয়ে উল্টো কমিয়ে ফেলার জন্য বিএনপি-জামায়াতের সরকারের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে সরকার গঠনের সময় আমরা বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম মাত্র ১৬শ’ মেগাওয়াট। আর আমরা ২০০১ সালে যখন ক্ষমতা থেকে যাই তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে রেখে গিয়েছিলাম ৪ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াট। অথচ ২০০৯ সালে যখন পুনরায় সরকার গঠন করি তখন আবার বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমান নেমে আসে ৩ হাজার ২ শ মেগাওয়াটে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আবার আমরা শুরু করলাম কিভাবে দেশের উন্নয়ন করবো। কিন্তুু উন্নয়ন করতে গেলে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন অপরিহার্য। সেজন্য আমাদের একটা প্রচেষ্টাই ছিল কত দ্রুত আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি। উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে গ্রীড লাইন তৈরি এবং সরবরাহে আমরা গুরুত্ব দেই। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নসরুল হামিদ বিপু গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম, ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ এইচ এম মুতাইরি, কুয়েতের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আল হায়াৎ এবং সৌদি এক্সপোটের প্রোগ্রাম ও সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট-এর সিনিয়র কর্মকর্তবৃন্দ এ সময় গণভবনে উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আহমেদ কায়কাউস অনুষ্ঠানে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে দেশের বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।
তাঁর সরকার বিদ্যুতের বহুমুখীকরণেও গুরুত্বারোপ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যেমন সোলার পাওয়ার প্লান্ট করছি, তেমনি পরামাণু ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রও করছি। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি আবার ভারতের থেকেও বিদ্যুৎ কিনে নিয়ে আসছি। তিনি বলেন, যেখানে ১৬শ’ মেগাওয়াট নিয়ে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে ক্যাপটিভ জেনারেশনসহ ১৬ হাজার ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জামায়ত-বিএনপি সরকার বিদ্যুৎ রেখে গিয়েছিল ১৬শ’ মেগাওয়াট আর আমরা দিচ্ছি ১৬ হাজার মেগাওয়াট আশাকরি বাংলাদেশের জনগণ এটা একটু ভালোভাবে মনে রাখবেন। সরকার প্রধান বলেন, শতকরা ৮৩ ভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন এবং আমাদের লক্ষ্য প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ যাবে। সব থেকে আনন্দের বিষয়Ñ জাতীয় গ্রীডে সোলার বিদ্যুৎ আজ থেকে যোগ হচ্ছে। যদিও এটা খুব ব্যয়বহুল তারপরেও আজ যে যাত্রাটা শুরু হলো ভবিষ্যতে এই সোলার বিদ্যুতের যে উৎপাদনটা হবে সেখানে ব্যবহারের অতিরিক্তটা আমাদের জাতীয় গ্রীডে চলে আসবে।
তিনি বলেন, নতুন প্রযুক্তি যখন এসে গেছে তাই আমরা এটা ব্যবহার করতে শুরু করে দিয়েছি। কাজেই আমাদের দুর্গম সব এলাকাতেও সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব হচ্ছে। ৪৫ লাখ সোলার প্যানেল ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে চলে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই আজকে বিজয়ের মাসে এই যে সুযোগটুকু আমরা মানুষের জন্য করে দিতে পারছি। সে জন্য আমি জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলেন বলেই আমরা আজকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। আর সুযোগ পেয়েছি বলেই আজকে এই উন্নয়ন আমরা করতে পারছি এবং এর ফলে মানুষ গ্রামে বসে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে । কেউ যদি কাজ করে খেতে চায় সে সুযোগটা তারা পাচ্ছে সেই সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করেছি এবং সেটা একেবারে তৃণমূল পর্যায়েই আমরা করে দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হবার পরামর্শ দিয়ে বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে ব্যয় হয় তারচেয়ে অনেক কম দামে আমরা বিদ্যুৎ দিচ্ছি তাই সবাইকে এই বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুতের যেন কোন অপচায় না হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, আজকের ১০টিসহ এ পর্যন্ত ৩৬টি উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হয়েছে।