তানজিকা॥ সঠিক খাদ্যাভাস এবং নিয়মানুবর্তিতার উপরে শারীরিক গঠনের অনেকটাই নির্ভর করে। বাড়তি ওজন যেমন কারোরই কাম্য নয়, তেমনই সুগঠিত শারীরিক গঠন সকলের কাছে অনেক বেশী আকাঙ্খিত। পরিমাণে কম খাওয়ার ফলে ওজন কমলেও “পারফেক্ট” শারীরিক গঠনের জন্য প্রয়োজন সঠিক খাদ্য, সঠিক পরিমাণে গ্রহণের অভ্যাস। একইসাথে প্রয়োজন প্রতিদিনের রুটিনে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসা।
জেনে নিন নিজের আকাঙ্খিত শারীরিক গঠন পাওয়ার জন্য কোন নিয়মগুলো মেনে চলা উচিৎ আপনার।
১। বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারন করতে হবে : নিজের নতুন এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসের জন্য ছোট এবং বড় পরিসরে লক্ষ্য নির্ধারন করতে হবে। বিশেষ করে ছোট লক্ষ্যগুলোকে এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে যেন সেই সকল লক্ষ্য কম সময়ের মাঝে এবং সহজেই পূরণ করা সম্ভব হয়। প্রতিটি লক্ষ্যে পৌছানোর পর নিজেকে নিজেই অভিনন্দন জানালে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আরো বেশী অনুপ্রেরণা পাওয়া যাবে।
২। সকালে খান বেশি করে, রাতে খান কম করে : একটা প্রবাদ রয়েছে- “সকালের নাস্তা খেতে হয় রাজার মতো, রাতের খাবার খেতে হয় কাঙ্গালের মতো।” এই প্রবাদটি মাথায় গেঁথে নিতে হবে এবং মেনে চলতে হবে। কারণ, গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, সকালে যারা নাস্তা খাওয়া বাদ দেয়, তাদের ওবেসিটির সমস্যা দেখা দেওয়ার হার তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশী। একই সাথে রাতের বেলা হালকা খাবার খাওয়ার ফলে মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায় এবং ঘুম খুব ভালো হয়।
৩। কখন ক্ষুধা পায় সেটা বোঝার চেষ্টা করতে হবে : জানেন কি, অনেক সময় আমাদের শরীর তৃষ্ণা বা পানির পিপাসা কে ক্ষুধাভাব বলে ধরে নেয়! শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিলে মস্তিষ্কে যে সিগন্যাল পৌছায় সেটা ক্ষুধাভাবের ক্ষেত্রেও এক। যে কারণে অনেক সময় শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিলেও ক্ষুধাভাবে মনে করে খাবার খেয়ে ফেলে অনেকে। তাই, অসময়ে ক্ষুধাভাব দেখা দিলে এক গ্লাস পানি পান করে নিতে হবে। এতে ক্ষুধাভাব চলে গেলে আর কিছু খাওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে ক্ষুধাভাব রয়ে গেলে হালকা কিছু খেতে হবে।
৪। নিজের খাবার নিজেই রান্না করা শিখতে হবে : বেশীরভাগ মানুষের মাঝে একটি ভুল ধারণা রয়েছে। তারা ভাবেন “স্বাস্থ্যকর” খাবার মানেই বিস্বাদ খাবার। এই ধারণাটি একেবারেই ভুল। রান্না করার কৌশল জানা থাকলে সাধারণ শাক-সবজী দিয়েই দারুণ মজাদার খাবার রান্না করা সম্ভব। যেটা একই সাথে সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর হবে।
৫। প্রতি সপ্তাহের জন্য পরিকল্পনা করে ফেলা : সামনের সপ্তাহের জন্য আগে থেকে পরিকল্পনা এবং চার্ট তৈরি করে ফেললে সঠিক খাদ্যাভাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আরো সুবিধা হবে। এতে করে বোঝা যাবে সামনের সপ্তাহের জন্য কী খাবার কেনা প্রয়োজন, কী কী কাজ করতে হবে এবং তার সাথে মিল রেখে কোন ধরণের শরীরচর্চা করলে উপকার হবে।
৬। ছোট পাত্রে অল্প পরিমাণে খাবার : নিজেকে এবং নিজের মস্তিষ্ককে ধোঁকা দেবার সবচাইতে কার্যকরি উপায় হলো, প্রতিবেলার খাবার ছোট পাত্রে খাওয়া! পরিমিত খাদ্যাভাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যেটা খুবই কার্যকরি। একই পরিমাণ খাবার তুলনামূলক ছোট পাত্রে অনেক বেশী পরিমাণ বলে মনে হয় বলে, সেটুকু খাবার খেলেও মনে হতে থাকে অনেক খাবার খাওয়া হয়ে গিয়েছে!
৭। অল্প পরিমাণে কয়েকবার করে খাওয়ার অভ্যাস করা : একবারে খেলে অনেক বেশী পরিমাণে খাওয়া হয়ে যায়। যার ফলে একই সময়ের মাঝে অনেক বেশী পরিমাণে ক্যালরি গ্রহণ করা হয়ে যায়। তাই দুই-তিন ঘণ্টা পরপর পরিমিত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাবার অভ্যাস করতে হবে। যেমন: বিকাল ৫ টায় ৮-১০ টা কাজু বাদাম খেয়ে এক গ্লাস পানি খাওয়ার দুই ঘন্টা পর সন্ধ্যা সাতটায় একটা সবুজ আপেল খাওয়া। এতে করে পেট খালিও থাকবে না, আবার ক্যালরিও বেশি গ্রহণ করা হবে না।
৮। নিজের মাঝে ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখা : স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা, পরিমিত পরিমাণে খাবার খাওয়া, পরিকল্পনা অনুযায়ী খাবার খাওয়া, নিয়মিত শরীরচর্চা করা, পারফেক্ট ফিট স্বাস্থ্য ও আকাঙ্খিত শারীরিক গঠন পাওয়া ও ধরে রাখার এই লম্বা পথ পাড়ি দেওয়াটা খুব একটা সহজ নয়! বরং বলা যায় বেশ কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং। এমন লম্বা পথ চলার সময়ে অনেক ভুল হবে। পরিকল্পনা থেকে অনেকবার লক্ষ্যচ্যুত হয়ে যেতে হবে। তবে কোনভাবেই নিজের মাঝে নেতিবাচক মনোভাব ঠায় দেওয়া যাবে না। বরং অনেক বেশী ইতিবাচক মনোভাব ধরা রাখতে হবে। সূত্র: ইৎরমযঃ ঝরফব