চৌধুরী কামাল ইকরাম॥ সংবাদকর্মীদের সাথে এই রাষ্ট্রকর্মীর সম্পর্ক অনেক পুরোনো! ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে সহকারী কমিশনার গোয়েন্দা শাখায় কাজের সুবাদে পদাধিকারবলে মিডিয়ার দায়িত্ব পালন করেছি। সে সময় থেকেই সংবাদকর্মীদের সাথে এই রাষ্ট্রকর্মীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে যা পরবর্তী পেশাগত জীবনে অব্যাহত থেকেছে। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে আনুষ্ঠানিক ভাবে মূখপাত্র নিয়োগের পূর্বেই সংবাদকর্মীদের সাথে আমার হৃদ্যতাপূর্ন সম্পর্ক গভীর হয়। পেশাগত সম্পর্কের বাইরেও অনেকের সাথেই পারিবারিক সম্পর্ক কিংবা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। শর্তহীন ভাবে অনেকেই আমাকে ভালবাসেন, মঙ্গলকামনা করেন, আমার আনন্দে খুশী হন, ব্যথায় ব্যথিত হন। আমাদের সময় পত্রিকার দাপুটে এক সংবাদকর্মী ফেসবুকে আমার একটা স্ট্যাটাস নিয়ে প্রাপ্যের চাইতে অধিক ক্রেডিট দিয়ে অনলাইন পোর্টালে নিউজ করেছেন। তাঁর অনুমতি নিয়েই শেয়ার করলাম……….
পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। ডিআইজি। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার। কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের প্রধান। কিছুদিন আগে তার বদলি হয় নবসৃষ্ট অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটে। কিন্তু আপাতত নতুন ওই ইউনিটে যেতে হচ্ছে না। যে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট নিজ হাতে মনিরুল ইসলাম গড়েছিলেন, সেখানেই থাকবেন। উন্নত বিশ্বের কাছে এখন এই ইউনিট মডেল। কেন? কারণ প্রতিষ্ঠার আতুরঘর থেকেই কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট জঙ্গিবাদ দমনে যে সাফল্য দেখিয়েছে তার উদাহরণ আর নেই বললেই চলে।
মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন এই প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের গল্প শুনতে এখন পশ্চিমা বিশ্বের পুলিশ কর্মকর্তারা ছুটে আসেন বাংলাদেশে। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট এখন বাংলাদেশের সাফল্যের শীর্ষ চূড়ায় অবস্থান করছে। যে প্রতিষ্ঠানটি একক নেতৃত্বে পরিচালনা করছেন মনিরুল ইসলাম। গত মাসেই মনিরুল ইসলাম তার পুলিশ চাকরি জীবনের ২২ বছর পার করেছেন। এর মধ্যে গত ৯ বছরই তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন ৩৬ মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে। ২০০৯ সালে গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি সাউথ হিসেবে যোগ দেন। শুরু করেন জীবনের বাঁক বদলেরর গল্প নির্মাণ্যের বাস্তব চিত্রনাট্য।
ওই বছরই ভারতীয় ও পাকিস্তানি বড় বড় জঙ্গিগোষ্ঠীর নেতাদের আটক শুরু করেন। গ্রেপ্তার করেন জালরুপি ও জাল টাকার আন্তর্জাতিক কারবারীদেরও। তখন থেকেই মনিরুল ইসলাম আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করেন। বিশেষ করে পাকিস্তানে নিষিদ্ধ লস্কর ই তৈয়বার সঙ্গে। এখন লড়ছেন নতুন ধারার জেএমবি, আনসার আল ইসলাম বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে। মনিরুল ইসলামের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের টানা অভিযানের এসব সংগঠন এখন অস্তিত্ব সংকটে। এই সাফল্য মনিরুল ইসলাম ও বাংলাদেশের। টিম মনিরুল ইসলামের।
গত ৯ বছরে মনিরুল ইসলাম একঝাঁক তরুণ পুলিশ কর্মকর্তাকে নিজ হাতে গড়ে তোলেন। যারা গত বছর গুলশানে জঙ্গি হামলার পর থেকে দেশ রক্ষায় জীবনবাজি রেখে টানা জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযান শুরু করেন। একের পর এক সাফল্যও পান। এ সাফল্য মনিরুল ইসলামের হাত ধরেই আসে। সেই চৌকশ পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম নিজের ২২ বছরের কর্মজীবন ও পুলিশ নিয়ে নিজের আত্ম উপলব্ধির কথা তুলে ধরেছেন এক ফেসবুক স্টাটাসে। গতরাতে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে মনিরুল ইসলাম ওই স্টাটাসটি দেন। প্রশান্তির পাঠকদের জন্য স্টাটাসটি তুলে ধরা হলো।
গত মাসে পুলিশী জীবনের ২২ বছর পার করে ২৩ বছরে পদার্পণ করেছি। পথ চলা কখনোই খুব একটা মসৃন ছিল বলা ঠিক হবে না। আমার নিজের সীমাবদ্ধতা সব সময় মনে মনে স্বীকার করি। কাজের ক্ষেত্রে আত্মতুষ্টির চাইতে আত্মগ্লানিতে ভুগেছি অনেক বেশী। চাকুরী জীবনের বেশ কয়েকটা বছরতো সেভাবে কাজের সুযোগও পাওয়া যায়নি। ঝুঁকি নেওয়ার সাহস থাকলে হয়তো বা পুলিশী পেশা পরিবর্তনও করে ফেলতাম। কাজের সুযোগ পাওয়ার পরও কতটাই বা করতে পেরেছি। পরিকল্পনা মোতাবেক ২৫% কাজও কি করতে পেরেছি?
সিএমপির ডিবির এসি থাকাকালে উদ্ধার করা একটি একে-৪৭ রাইফেল দেখছেন মনিরুল ইসলাম। আমি তা মনে করি না। গত প্রায় ৯ বছর প্রায় একই ধরনের কাজ করেছি, কিছুটা বুঝতেও শিখেছি। পরিচিতি বেড়েছে অনেক, আমার কাছে মানুষের প্রত্যাশা ও বেড়েছে অনেক। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বিব্রত হই। অনেকেই আমাকে ‘সুপার কপ’ ভাবেন, মনে করেন আমাকে জানালেই তাদের সমস্যার সমাধান হবে কিংবা ঐ অপরাধটা নির্মূল হবে। আমার সাথে একবার কথা বললেই বিপদ থেকে পরিত্রান পাওয়া যাবে-এমনটা ও অনেকে ভাবেন। কিন্তু কী করে বোঝাব যে বেশীরভাগ কাজ করার এখতিয়ারই আমার নেই! এখতিয়ারের মধ্যে যা আছে তাও তো করতে পারি না।
ঘনিষ্ঠজনদের অনেকেই বিদ্রুপ করেন আমি নাকি পুলিশই হতে পারি নাই। হয়তো ঠিক আবার ঠিক নাও হতে পারে। পুলিশ সম্পর্কে যে ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক চিত্র মনে আঁকা আছে তার সাথে হয়তো আমাকে মেলানো কঠিন হয়ে যায। পুলিশ না হলেও মানুষই বা থাকতে পারলাম কই! আবেগ নেই, অনুভূতি নষ্ট হওয়ার উপক্রম, অনুরাগ নেই, বিরাগ তাও নেই। মন খুলে কথা বলা যায় না, কষ্ট পেলে কিংবা প্রচন্ড রাগ হলেও চেপে রাখতে হয়, হাসিমুখ করে কথা বলতে হয়-এও কি মানুষের পক্ষে সম্ভব! তাইতো মাঝে মাঝে মনে হয় আমি যেন ১০০% পুলিশ হয়ে যাই!