টিআইএন॥ শহুরে জীবনে অভ্যস্ত অভিভাকদের জন্য জানা দরকার। কারণ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন একটি জরুরী বিষয়। কিভাবে জন্ম সনদ নিতে হবে এবং কাদের জন্য কি কি নিয়ম রয়েছে। ইদানিং এই নিবন্ধন বিষয়টি দেশী ও বিদেশী উভয়কেই পীড়া দিয়ে যাচ্ছে। মানুষ জানে না আইন। আইনে কি কি অধিকার সংরক্ষিত রয়েছে তা কারোরই জানা নেই। আর এই জানা না থাকার কারণে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছে সৃষ্টিকুলের সেবা জীব আশরাফুল মাকলুকাতকে।
আমার সহকর্মী (কানাডিয়ান) তার সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশে। এ্যাপালো হসপিটাল ঢাকায় জন্ম নেয়া ছেলেটি আজও কানাডিয়ান নাগরিকত্ব লাভ করতে পারেনি। কারণ বাংলাদেশের আইন না জানা সিটি ও ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদ্বয়। ঐ কানাডিয়ান দম্পতি এ্যাপালোর জন্ম সনদ অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন উত্তরার মুখাপেক্ষি হয়। কারণ জন্ম সনদে লিখা ছিল সিটি কর্পোরেশন থেকে সনদ নিতে হবে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন উত্তরা থেকে পাঠানো হয় গুলশানে এবং গুলশান থেকে আবারো পাঠানো হয় উত্তরায়। এভাবে তারা ১ম দিন পার করল। তারপর শুরু হলো দ্বিতীয় দিনের কাজ। দ্বিতীয় দিনের বেলা শেষে পরামর্শ আসল ঐ দম্পতি যেন ভাটারা চেয়ারম্যান অফিসে যায় এবং সেখান থেকে জন্ম নিবন্ধন নেয়। যখন চেয়ারম্যান অফিসে যাওয়া হলো তখন বলা হলো এখান থেকে হবে না আপনারা উত্তরা সিটি কর্পোরেশন অফিসে যান এবং সেখান থেকে সার্টিফিকেট উঠান। এইভাবে এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলো কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না।
যার ফলশ্রুতিতে আমার যাওয়া হয় উত্তরা সিটি কর্পোরেশনে এবং আলাপ হয় একজন উপসচিবের সঙ্গে তিনি বিষয়টি ফয়সালা করে দেন। তারপর সিটি কর্পোরেশন ঐ বিদেশীর জন্মসনদ দিতে রাজি হয়। ২য় পর্যায় হলো এ্যাপালো হাসপাতালটি ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের অর্ন্তগত। সেই মোতাবেক সকল জন্মসনদ ইস্যু হওয়ার কথা ঐ ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে, কিন্তু দু:খের বিষয় হলো ঐ ইউনিয়নের সচিব একজন জ্ঞানপাপী, তাই তিনি ঐ বিদেশী দম্পতীকে তিন তিনবার ফিরিয়ে দেন। তারপর আমি নিজে আমার এক সহকর্মীকে পাঠাই। তখন ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ফেরত পাঠান। সব পথ যখন বন্ধ তখন আমি নিজে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এর সঙ্গে আলাপ করে সার্টিফিকেট এর ব্যবস্থা করি। কিন্তু যখন ঐ সচিবের নিকট আবারো আমার প্রতিনিধি যায় তখন তিনি নানাহ তালবাহানা করেন এমনকি ঐ প্রতিনিধিকে ভুল ব্যাখ্যা শুনাতে থাকেন। ঐ সচিবের ভুল ব্যাখ্যার সময় আমার প্রতিনিধি সংবিধান এবং গেজেট বের করে সদ্য জন্ম নেয়া ঐ বাচ্চাটির অধিকার এবং আমার সরকারের করনীয় সবই বলেন, কিন্তু ঐ সচিব এত শিক্ষীত যে দেশের সকল আইন অমান্য করে তার নিজের মনগড়া যুক্তি উপস্থাপন করতে থাকেন। আমার প্রতিনিধি একজন উচ্চ শিক্ষিত (এম বি এ, এবং এডভোকেট)। যারপরনায় আমি আবারো চেয়ারম্যানকে ফোন দেয় এবং চেয়ারম্যান একটি ব্যবস্থা নিয়ে ঐ সার্টিফিকেট বিলম্বে হলেও পাওয়া যায় এবং দেশের সুনাম ও সম্মান রক্ষা হয়।
এই যদি হয় আমাদের দেশের সেবকের দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিবর্গের কাজের নমুনা তাহলে কিভাবে আমরা আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ এর সুফল বিস্তার ঘটাব। যাক, আমি আবারও এই আইন ও গেজেট সকলের জ্ঞাতার্থে উল্লেখ করলাম।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী অথবা জন্মগ্রহনকারী ব্যক্তির সকল প্রমানাদি যাচাই বাছাই করিয়া জন্ম সদন প্রদান করিবেন। স্থায়ী বসবাসকারীর ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন বা ইউনিয়ন এর বাড়ির কাগজপত্র / হোল্ডিং এর নামকরনের কাগজ পত্র/ বাড়ির বিদ্যুৎ অথবা পানির, ফোনবিলের কপি। জন্মগ্রহনকারীর ক্ষেত্রে, হাসপাতালের ছাড়পত্র, জন্ম সার্টিফিকেট অথবা হাসপাতালে ভর্তি ও ডিসচার্জ বা রিলিজ অর্ডার এর কাগজপত্র পরিক্ষা নিরীক্ষা করিয়া জন্মসনদ প্রদান করিবার নিয়ম গেজেট আকারে সরকার প্রকাশ করিয়াছে।