আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ ভারতে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের নির্বাচনে বিজেপি খুব সামান্য গরিষ্ঠতা নিয়ে আবার ক্ষমতায় আসতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার নিজের রাজ্যে মাটি কামড়ে প্রচারণা চালালেও শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, ১৮২ আসনের বিধানসভায় বিজেপির শক্তি একশোরও নিচে নেমে গেছে – আর বিরোধী কংগ্রেস থমকে যাচ্ছে গরিষ্ঠতার সামান্য দূরে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই ফল বিজেপির জন্য বেশ হতাশাজনক এবং দেশে আগামী নির্বাচনগুলোও তাদের জন্য খুব সহজ হবে না বলেই তারা অনেকে ধারণা করছেন। অন্যদিকে, গুজরাটের নির্বাচনী ফলাফল কংগ্রেসকে নতুন সভাপতি রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
দিল্লির অশোকা রোডে বিজেপির সদর দফতরে গুজরাট নির্বাচনের বিজয় উদযাপনের জন্য কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হয়েছিলেন সকাল থেকেই, কিন্তু প্রথম কয়েক ঘণ্টায় কংগ্রেস যেভাবে বিজেপির সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিচ্ছিল, তাতে শঙ্খধ্বনি আর ‘মোদি মোদি’ শ্লোগান উঠতে অবশ্য বেশ দেরি হয়ে যায়।
বিকেলে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ দলীয় কার্যালয়ে এসে ঘোষণা করেন, “কংগ্রেস গুজরাটে যেভাবে জাতপাতের রাজনীতি করতে চেয়েছে, প্রচারকে অত্যন্ত নিচু স্তরে নামিয়ে এনে কদর্য শব্দ ব্যবহার করেছে – তাকে পরাজিত করে শেষ পর্যন্ত গুজরাট প্রধানমন্ত্রী মোদির উন্নয়ন আর সুশাসনের পথকেই বেছে নিয়েছে।”
ভোটের আগে এই অমিত শাহ বলেছিলেন, গুজরাটে তাদের লক্ষ্য মিশন ১৫০ – অর্থাৎ ১৮২টির মধ্যে অন্তত ১৫০ আসন পাওয়া।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, হারলেও ফলাফলে খুশি
অন্তর্জাতিক ডেক্স॥ এই জায়গায় গত ২২ বছর ধরে দলের দুর্গ এই রাজ্যে বিজেপির আসনসংখ্যা একশোরও নিচে নেমে যাবে তা কিন্তু অনেকেই ভাবতে পারেন নি। দ্য হিন্দুর সাংবাদিক বিদ্যা সুব্রহ্মণ্যম তাই বলছিলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রায় নিজের জীবন বাজি রেখে যেভাবে প্রচার চালিয়েছেন এবং যে ধরনের কৌশল নিয়েছেন, তার পরে একশোরও কম আসন তাকে অবশ্যই খুশি করবে না।”
“অন্যদিকে কংগ্রেস নিজেরাও ভাবতে পারেনি তারা গুজরাট জিততে পারে – কিন্তু সামনের কঠিন নির্বাচনগুলোর জন্য গুজরাটের এই ফল অবশ্যই তাদের অক্সিজেন জোগাবে।”
বামপন্থী রাজনীতিক ও বিশ্লেষক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যও বিশ্বাস করেন, গুজরাট প্রায় দেখিয়ে দিয়েছে বিজেপিকেও হারানো সম্ভব।
তার কথায়, “বিজেপি অপ্রতিরোধ্য, অপরাজেয় – এই প্রচারটা অবশ্যই আজ বড় ধাক্কা খেয়েছে। আর গুজরাটে তারা পাকিস্তান, আওরঙ্গজেব এই সব বলে যে প্রচার চালিয়েছে সেটাও দেশের মানুষ দেখেছে। তবে আমার মনে হয় নির্বাচনের ফলাফলে সবচেয়ে বড় তাৎপর্য হল যুব-শক্তি ভোটে তাদের ক্ষমতাটা বুঝিয়ে দিয়েছে।”
“হার্দিক প্যাটেল, অল্পেশ ঠাকোর, জিগনেশ মেহভানির মতো যুব নেতাদের দেখুন, গুজরাটে তারা নিজেদের সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে সবাই সফল। বলা হয়, ২০১৪তে দেশের যুবকরাই না কি নরেন্দ্র মোদিকে জিতিয়েছিলেন – আর এখন সেই যুব-শক্তিই আবার অন্যরকম ভাবার ইঙ্গিত দিচ্ছে,” বলছেন তিনি।
নতুন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী সন্ধ্যায় টুইট করেছেন, দলের ভাইবোনরা তাকে আজ গর্বিত করেছেন। দলীয় এমপি শশী থারুরের কথাতেও স্পষ্ট, তারা গুজরাটের ফলকে এক ধরনের নৈতিক জয় হিসেবেই দেখছেন।
বিজেপি সমর্থকদের উল্লাস
আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ নির্বাচনে জয়ের পর বিজেপি সদস্যদের আনন্দ মিছিল এবং আনন্দল্লোস করে। এ প্রসঙ্গে মি থারুর বলছেন, “বিজয়ই আমাদের লক্ষ্য, কিন্তু অভীষ্টে পৌঁছতে না পারলেও এই যাত্রাপথ যে আমরা দারুণ পাড়ি দিয়েছি তা তো দেখাই যাচ্ছে।”
“গুজরাটের সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে যেভাবে বিজেপিকে আমরা প্রায় উৎখাত করেছি, গোটা রাজ্যে গতবারের চেয়ে প্রায় আঠারোটা আসন বেশি পেতে যাচ্ছি, তাতে বোঝাই যাচ্ছে আমরা সঠিক পথেই এগোচ্ছি।”
গুজরাটের নির্বাচনে কংগ্রেসের তুলনামূলক ভাল ফলের পেছনে রাহুল গান্ধীর অক্লান্ত পরিশ্রম আর লাগাতার প্রচারণাকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন অনেকে।
কিন্তু দীপঙ্কর ভট্টাচার্য মনে করছেন, তার নির্বাচনী নীতি নিয়ে এখনও অনেক প্রশ্ন আছে।
“যেভাবে রাহুল গান্ধী একের পর এক মন্দিরে গেলেন, নিজেকে হিন্দু প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লাগলেন – তার চেয়ে জনগণের প্রশ্নগুলো নিয়ে একটু বেশি ভাবলে কংগ্রেসের ফল হয়তো আরও অনেক ভাল হতে পারতো,” বলছেন তিনি।
ঠিক দেড় বছরের মাথায় ভারতে আগামী সাধারণ নির্বাচন – তার কয়েক মাস আগে বেশ কয়েকটি বিজেপি-শাসিত বড় রাজ্যেও ভোট আসছে। গুজরাটের ফলাফল ইঙ্গিত দিচ্ছে, বিজেপি বা কংগ্রেস দুই দলকেই বোধহয় সেই সব ভোটের আগে তাদের কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে।