যুগের পরিবর্তন এবং চাহিদার নবউত্তোরণ ঘটেছে আমাদের রাজননৈতিক মনোজগতে। তবে এখনো অনেক পথ পারি দিতে হবে ঐ অপসংস্কৃতাচ্ছন্ন মনোভাব এবং এর চর্চা পরিহার করার জন্য। সদ্য শেষ হওয়া রসিক নির্বাচন আমাদের উৎসাহিত এবং আশ্বস্ত করে নূরুল হুদার অধিনে সেনা মোতায়েনবিহীন ফ্রি, ফেয়ার বা নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। রংপুরের নির্বাচন এও প্রমান করে যে সরকার আন্তরিক ফ্রি ও ফেয়ার নির্বাচন উপহার দেয়ার লক্ষে।
একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, নির্বাচনে স্বতস্ফুর্তভাবে দল মত নির্বিশেষে মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। কারো কোন অভিযোগ নেই। সাধারণ মানুষ থেকে দলীয় কর্মী ও সমর্থক এমনকি দলের নিতিনির্ধারক পর্যন্ত সবাই এই নির্বাচনের আয়োজন ও শৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়েছে। বড় দায়িত্ব পালনের নিমিত্তে যে যাত্রা তা সুশৃঙ্খলভাবে শুরু হয়েছে এই রংপুর এর নির্বাচনী যাত্রার মাধ্যমে। বিরুধীদল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সকলেই এই নির্বাচন এবং এর ফলাফলে সন্তুষ্ট। আশার কথা হলো এই সন্তুষ্টির বহি:প্রকাশই হলো আগামীর সমৃদ্ধি এবং উন্নতির সোপান রচনায় আরো একধান এগিয়ে নেয়ার ভিত্তিমূল। গনতন্ত্র এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার যে দৃষ্টান্ত পৃথিবীর গুটি কতেক দেশ অর্জন করেছেন এবং বিশ্বকে অনুসরণ করতে উৎসাহিত করতে উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছেন, সেই তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে বাংলাদেশের আর বেশী দুরে থাকতে হবে না। অচিরেই আমরা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারবো।
একটি দল সৃষ্টি থেকে অবিশ্বাসের মধ্যে বেড়া উঠা এবং নৈরাজ্য ও দুর্নীতি এমনকি কারচুপির মধ্যে নিজেদেরকে জড়িয়ে রেখেছে। আর সেই চর্চা চালিয়ে সম্মুখপানে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু যুগের প্রয়োজনে নিজেদেরকে আর বদলাতে পারছে না বা চেষ্টা করছে না। তবে দৃশ্যমান বুলি এবং ভুলেটিং ও মিডিয়ায় প্রকাশিত সকল বহি:প্রকাশই যেন অবাস্তবতার অন্ধকার মাত্র। বাস্তবতার বাইরে গিয়ে পাগলের প্রলাপ বকে বেড়ানো মানুষগুলো আজ জনবিচ্ছিন্নই হচ্ছে না বরং অন্ধকারের তলানী থেকেও বিলীন বা হারিয়ে যাচ্ছে। এই দল ও পথের মানুষগুলো যেন তাদের সেই পুরোণো ঘুরের আবেশেই রয়েছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতেই পারছে না বা চাইছে না তা বুঝতে বেমালুম চেপে যাচ্ছে এই সমাজিক মিডিয়াগুলো। সদ্য শেষ হওয়া রসিক নির্বাচন এবং এর ফলাফল নিয়েও একই পুরুনো ছকে রেকর্ড বাজিয়ে যাচ্ছে। জনগণকে তারা কি ভাবছে? জনগণ যে শিক্ষীত হচ্ছে এবং পৃথিবীর আলফা ও ওমিগা এখন দেখছে ও জানছে, তা কিন্তু ঐ দলের মাথা মোটা ও কুট চালের চিকন বুদ্দি সম্পন্ন লোকগুলো বুঝতে পারছেন না। ডিজিটাল ওয়াল্ড এবং এর অধিবাসিরা কতদুর এগিয়েছে এবং আগামির জন্য কি অগ্রগামীতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তা উপলব্দি করার সক্ষমতা হারিয়েছে। ডিজিটাল কল্যাণে সবই এখন উন্মুক্ত তাই সবাইকে নিজের চেয়ে জ্ঞানী ভেবেই সামনের বক্তব্য হওয়া উচিত। নতুবা শুন্যে ভাসা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।
বিএনপির মনোভাবের পরিবর্তন হবে কিনা জানিনা তবে এটা জানি যে, তাদের ভোটার বা সমর্থকদের মনোভাবের পরিবর্তন হয়েছে এবং তাঁরা ঐ অন্ধকার থেকে বের হয়ে আসতে শুরু করেছে। আর এই দৃশ্যমান ফলাফল এখন চারিদিকেই বিরাজমান। এই রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন থেকে সবারই শিক্ষা নেয়া উচিত। নতুবা রাজনীতির ময়দান শুণ্য হওয়া ছাড়া আর কোন দ্বিতীয় উপায় থাকবে না। বিএনপির জন্য প্রযুক্তি নির্ভর চিন্তা এবং তথ্য যাচাই ও বাছাই পুর্বক কথা বলা অবিশম্ভাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এইতো কিছুদিন আগে আমেরীকা থেকে প্রকাশিত একটি জরিপের ফলাফল মিডিয়ায় তোলপাড় ফেলেছিল। যা অনেকে অবাস্তবও বলেছিল। তবে বিশ্বাস রাখা উচিত, যা রটে তা কিন্তু কিছুটা হলেও বটে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে শতভাগও বটে। সেই রিপোর্ট বলেছিল আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে এবং জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে বসবে। বিএনপি তৃতীয় অবস্থানে থাকবে। সেখানে বলেছিল আওয়ামী লীগ ১ম, জাতীয় পার্টি ২য়, বিএনপি তৃতীয়। এই হিসেবে জাতিয় পার্টির ভোটার বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিও ইঙ্গিতবাহী ছিল। বিএনপির আশায় গুড়েবালির বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছিল। সেই হিসেবে যথার্থ—ই নয়কি এই রসিক নির্বাচনের ফল। কাউকে দোষ না দিয়ে এখন দেখতে হবে কি করলে আগামীতে পায়ের নীচ থেকে মাটি আর সড়বে না। যদি সেই চিন্তা না করে শুধু ব্লেম গেম খেলতে চান তাহলে হয়তো গেম খেলার জায়গাটুকু হারিয়ে চৈতন্যহীন হবেন। ভাবুন এবং নীতি ও কৌশলে চাকচিক্য এবং নতুনত্ব্য যা যুগের চাহিদা মিঠাবে এবং পুরোনো জং ধরা কৌশনের অবসান ঘটাবে সেই কাজ করুন।
বিএনপি ছাড়া বাকি দলগুলো আরো একটি নতুন দৃষ্টান্ত সৃষ্টির যাত্রা শুরু করেছেন সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর। সব দলই নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়ে আগাম শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন। নির্বাচন কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। এই সংস্কৃতি যখন শুরু হয়েছে তা এগিয়ে যাবেই। দেরিতে হলেও বিএনপি এই শিক্ষা গ্রহণ করে সহমত পোষণ করবে। কারন তাদের সামনে আর বিকল্প কিছু নেই। তবে যত তাড়াতাড়ি তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে ততই তাদের নিজেদের মঙ্গল সাধিত হবে। আওয়ামী লীগ সব সময়ই শিক্ষকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয় আর এবারও নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়ে সেই ভুমিকাই চলমান রাখল। আমি আশাবাদি হিসেবে সবাইকে সাধুবাদ জানাই এবং আগামীর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে ও দেখতে এবং দেখাতে প্রত্যাশা করি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সামনে এই নির্বাচন একটি জলন্ত পরীক্ষা আর এই পরিক্ষার মাধ্যমে তারা আগমী দিনের জন্য আরো যুগোপযোগী পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ পাবে। হিসেব কষতে পারবে; ভোটার বেড়েছে না কমেছে। যদি কমে কি কি কারণ থাকতে পারে? এত উন্নয়ন এবং এত সুনাম বৃদ্ধির পরেও কেন ভোটের ভাটা? এখানে কি কোন জাতীয় সমস্যা না আঞ্চলিক সমস্যা? অথবা প্রার্থী বাছায়ে ভুল করা নাকি অন্য কিছু; সবই হিসেবে এনে আগামির ছক আঁকা ও পরিচালনা করা সম্ভব হবে। উন্নয়ন প্রচার ও প্রচারণায় যদি কোন ঘাটতি থাকে সেখানেও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। সবদিক দিয়ে সকলেরই মঙ্গল বার্তা বহন করে এই নির্বাচন। এই নির্বাচন আগামীর দিকদর্শনও হতে পারে। সংস্কৃতির পালে যে হাওয়া লেগেছে তা সকল অপসংস্কৃতিচ্ছান্নতাকে ভেঙ্গে চুড়ে নতুন এক ইতিবাচক সংস্কৃতির সুউচ্চ চুড়ার দিকে এগিয়ে যাওয়ারই ইঙ্গিত বহন করে। আমাদের আগামীর পালেও লাগুগ নতুন এক ইতিবাচক বার্তাবহের হাওয়া। আমরা পিছিয়ে নেই নির্বাচনী এবং গনতন্ত্রের পথে দৃষ্টান্ত হতে। আমাদের সার্বিক উন্নয়ন সুচকের সাথে এই নতুন উপাখ্যানটিও যুক্ত হতে যাচ্ছে আগামীর অহংকার হিসেবে। আমরা আশায় আছি এবং থাকব সেই নতুন সুর্যোদয় ও নতুন উপাখ্যান গনতন্ত্রের ইতিবাচক নিরপেক্ষ দৃষ্টান্তে সুউচ্চ চুড়ায় বসতে। সৃষ্টিকর্তা এবং তাঁর সৃষ্টিই অমাদেরকে সেখানে পৌঁছতে সাহায্য করবে ইনশাল্লাহ॥