বিএনপি-জামায়াত আমলের দুর্নীতি বোঝাতেই এসব বলেছিলাম : নাহিদ

রাইসলাম॥ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছেন, বিএনপি-জামায়াত আমলের দূর্নীতির পরিবেশ বোঝাতেই ‘ঘুষের সহনীয় মাত্রা’ এবং ‘অফিসাররা চোর’, ‘মন্ত্রী চোর’ এসব কথা বলেছিলেন। গত বুধবার সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।  এর আগে গত রোববার শিক্ষাভবনে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) কর্মকর্তাদের ল্যাপটপ বিতরণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী দুর্নীতি নিয়ে বলেছিলেন, ‘ঘুষ খান, কিন্তু সহনশীল মাত্রায় খান’। তিনি আরো বলেছিলেন, ‘খালি যে অফিসার চোর, তা না, মন্ত্রীরাও চোর, আমিও চোর… সবাইকে আমাদের পরিবর্তন করতে হবে।’ এমন বক্তব্যের পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়।   nahid presconfarence
তারই জবাব দিতে ডাকা প্রেস ব্রিফিংয়ে দেয়া লিখিত বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তর ও সংস্থাসমূহের মধ্যে ভাবমূর্তির দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে ছিল পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। চরম দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, মনিটরিং দুর্বলতা ছিল দৃশ্যমান। এতে বলা হয়, কর্মকর্তারা ঘুষ-দুর্নীতিতে ছিল আকণ্ঠ নিমজ্জিত। এসবই ছিল পূর্ববর্তী বিএনপি-জামাত সরকারের অপশাসনের ফসল। সেই সময় ডিআইএ কর্মকর্তারা স্কুল কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে অসহায় শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষের খাম গ্রহণ করার সময় বলতো এর ভাগ উপরেও দিতে হয়। তাতে শিক্ষক কর্মচারীরা মনে করতে বাধ্য হতো- তাদের প্রদত্ত ঘুষ শুধু পরিদর্শনকারী অফিসাররাই খায় না, উর্দ্ধতন আমলারাও পায়, এমনকি মন্ত্রী হিসেবে আমিও পাই। স্বাভাবিকভাগেই শিক্ষক-কর্মচারীরা মনে করতো- ‘অফিসাররা চোর, মন্ত্রীও চোর।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘সেই সময়ে তাদেরকে ঘুষ-দুর্নীতি থেকে বিরত রাখার পরিবেশ তো ছিলই না। অনেক শিক্ষক এসে আমার কাছে কান্নাকাটি করে বলতো- আমরা নিম্ন বেতনের চাকরি করি, এতো টাকা আমরা কোথা থেকে দেবো? একমাসের সম্পূর্ণে বেতনের টাকা ঘুষ দিলে পরিবার পরিজন নিয়ে আমরা খাব কী? ঘুষের মাত্রা আরেকটু সহনীয় হলেও বাঁচতাম বলে তারা মন্তব্য করতো। গত রোববারের অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় অতীতের ঐসব ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরতে গিয়েই আমি উদ্বৃতি দিয়েছিলাম- ‘ঘুষের সহনীয় মাত্রা’ এবং ‘অফিসাররা চোর’ ‘মন্ত্রী চোর’।
লিখিত বক্তব্যে মন্ত্রী আরো বলেন, ২৪শে ডিসেম্বর তার দেয়া ওই বক্তব্য বেশিরভাগ গণমাধ্যমে যথাযথভাবে তুলে ধরা হলেও কতিপয় পত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়া তার মন্তব্য খন্ডিতভাবে প্রকাশ করেছে। এতে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। সেটা স্পষ্ট করতেই আজকের প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বিশিষ্টজনদের কেউ কেউ কতিপয় মিডিয়ার খন্ডিত ও ভিত্তিহীন সংবাদের ওপর ভিত্তি করে আমার বিরুদ্ধে নানা প্রশ্ন তুলছেন। তাদের উদ্দেশ্যে সবিনয়ে বলতে চাই- সুদীর্ঘ কাল ধরে আপনারা আমার সততার সংগ্রাম, নীতি-আদর্শ, কর্তব্যনিষ্ঠা, দায়িত্ববোধ বিষয়ে অবগত। মিডিয়ার খন্ডিত ভিত্তিহীন সংবাদের ওপর ভিত্তি করে কোন মন্তব্য করার আগে সরাসরি আমাকে প্রশ্ন করলে অনেক বেশি খুশি হতাম।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.