রুহুল আমিন মজুমদার॥ মিসেস হিলারি ক্লিনটন নিশ্চিত করেছেন তাঁর পরাজয়ের কারন। তিনি বলেছেন নির্বাচনের শেষ মূহুর্তে ‘ই-মেইল’ সংক্রান্ত ভুয়া খবর ফেসবুকে প্রচার হওয়ার কারনে তাঁর পরাজয় হয়েছে। একারনে তিনি ‘ফেসবুক কতৃপক্ষ’কেও দোষারোপ করেছেন। ‘ফেসবুক কতৃপক্ষ’ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন এই সক্রান্ত মিথ্যা সংবাদ ‘ফেসবুক ইউজারদের টাইমলাইনে যাওয়ার কারনে তৎক্ষনাৎ কর্তব্যরত: অনেককে চাকুরী হ’তে বরখাস্ত করা হয়েছে, পরবর্তীতে উল্লেখিত খবর সমুহ ইউজারদের টাইমলাইনে সেইভাবে পাঠানো হয়নি।’
ফেসবুক কতৃপক্ষের কর্মকর্তা কর্মচারিদের বিরুদ্ধে নেয়া ব্যবস্থা এবং পরবর্তীতে ইউজারদের টাইমলাইনে না পাঠানোর স্বীকৃতি হিলারির অভিযোগের সত্যতা প্রমান করে। শেষাবদি ফেসবুক কতৃপক্ষ মিসেস হিলারীর নিকট ক্ষমা ও দু:খ্য প্রকাশ করতে দেখলেও আশ্চায্য হওয়ার কিছু থাকবেনা।
উল্লেখ্য যে হিলারীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য আন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন কোন লবিষ্ট ‘মি: ট্রাম্প’ নিয়োগ দিয়েছিলেন–‘এ সংক্রান্ত কোন খবর প্রকাশিত হয়নি’। বর্তমান আমেরিকান সরকারের বেতনভুক্ত ‘এফবি আই’ এর একজন কর্মকর্তার মন্তব্যের সুত্র ধরে বিষয়টি বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে। আমেরিকান জনগনের মধ্যেও ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয় ; একমাত্র বিপুল সংখ্যক ফেসবুক ইউজারের কারনে, এটা সম্ভব হয়েছে, মনে করেন আমেরিকার জনগন।
বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধী এবং বিএনপি দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট খালেদা পুত্র তারেকের সমন্বয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত বিশ্বের নামকরা ‘লবিষ্ট ফার্ম’ অনেক আগেই তাঁদের এসাইনম্যান্ট অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে। কোটি কোটি ডলার ব্যায়ে উক্ত ফার্মকে নিয়োগ করা হয়েছে আওয়ামী লীগ ২০০৮ ইং সালে ক্ষমতায় আসার পর পর। মানবতা বিরুধী বিচার বানচাল এবং সরকারের ভাবমূর্তি ধ্বংস করে দেশে বিদেশে আওয়ামী লীগ সরকারকে একঘরে করার পরিকল্পনায় উক্ত ‘লবিষ্ট ফার্ম’ কাজ করবে মর্মে ত্রিপক্ষিয় চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। বিশ্বের দেশে দেশে উক্ত লবিষ্ট ফার্মের নিয়োগ করা বেতনভুক্ত বাঘা বাঘা ব্যারিষ্টার, শুসীল, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী সদস্যরা কাজ করছে বলে মিডিয়া সমুহ নিশ্চিত করেছিল। এ সংক্রান্ত খবর পত্র পত্রিকা সহ বিশ্ব মিডিয়ায় গুরুত্বের সংগে প্রকাশিত হতে দেখা গেছে।
উক্ত লবিষ্ট ফার্মের সক্ষমতাও ইতিমধ্যে দৃশ্যমান হ’তে দেখা গেছে। তিলকে তাল বানিয়ে ‘সাঈদীকে’ও চাঁদে দেখাতে পেরেছে এবং কি বহু মানবতা বিরুধী অপরাধের ‘বিচারক’ অন্ধ হয়ে গেছে ; একশ্রেনীর মানুষকে বিশ্বাস করিয়ে ঈমান ধ্বংস করার শতভাগ কৃতিত্ব দখলে নিতে পেরেছে। প্রথমাবস্থায় বিচার বানচাল করার উদ্দেশ্যে বিদেশী বন্ধুরাষ্ট্র সমুহকেও নিয়ন্ত্রনে সক্ষমতা দেখাতে পেরেছিল। সময়ের প্রেক্ষাপটে জাতির জনকের কন্যার একক দৃঢ়তায় পরাজিত হয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করার উদ্দেশ্যে আপাতত: রণে ভঙ্গ দিয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে।
এরই মধ্যে ইসলামের শত্রু, মহানবীর শত্রু ইহুদীদের সাহায্যে বাংলাদেশের সরকার উৎখাতের পরিকল্পনায় সাহায্যকারী অখ্যাত চট্রগ্রামের এক ব্যাবসায়ীকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিবের পদে অলংকৃত করতেও দেখা গেছে। ইসরাইলের ‘মো’সাদ গোয়েন্দা সংস্থা’ কতৃক মধ্যপ্রাচ্য সহ ইসলামী বিভিন্ন দেশে নির্বাচিত সরকার উৎখাত এবং দেশে দেশে হানাহানি, মারামারি সৃষ্টি করে জনজীবন বিপন্ন করার পারদর্শীতায় অতীত অভিজ্ঞতা সর্বজনবিদীত।
আমেরিকার শতভাগ শিক্ষিত মানুষকে ফেসবুকের ভুয়া প্রচার বিভ্রান্ত করে অ-জনপ্রীয় ট্রাম্পকে নির্বাচিত করার উদাহরন সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকারকেও তাঁর করণীয় নির্ধারন করা প্রয়োজন। এমনিতেই প্রচার রয়েছে ‘বাঙ্গালী হুজুগে পাগল জাতি’। যে কোন বিষয় সহজেই বিশ্বাস স্থাপন করে সারাজীবনের সঞ্চিত নেকি একমিনিটের মধ্যে ধ্বংস করে দেয়ার বহু উদাহরন ইতিমধ্যেই দেখা গেছে। জাতির জনকের হত্যা পরবর্তী অপ-প্রচার থেকে শুরু করে নাসিরনগরে সংখ্যালঘু জনগনের বাড়ী ঘরে হামলা পয্যন্ত একটিরও কোন প্রকার সত্যতা ছিলনা। দেখা গেছে ঘটনা সমুহ ঠিকই সংঘটিত হয়েছে যথানিয়মে এবং শ্রেনী বিশেষ ‘ সুদে আসলে’ উক্ত ঘটনা সমূহ হ’তে প্রচুর লাভও তুলে নিতে সক্ষম হয়েছে।
কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখেছিলাম রাষ্ট্র বিরোধী ‘২৫টি পোর্টাল’ বাংলাদেশ সরকারের অনুরুধে ফেসবুক কতৃপক্ষ বন্ধ করে দিয়েছেন। হাজার হাজার ফেসবুক, গুগুল, নিউজপোর্টাল, অনলাইন পত্রিকা এবং ওয়েব পেইজের মধ্যে এক দু’শ পোর্টাল বন্ধ করে নিরাপদ চিন্তা করা আর বোকার স্বর্গে বাস করা সমান কথা। ইতিমধ্যে তাঁর প্রমান পাওয়া গেছে-নাসির নগরে হিন্দু যুবকের ফ্যাক আইডি খুলে স্বার্থ্যান্বেষী মহল কিভাবে তাঁদের নীজেদের স্বার্থ্য চরিতার্থ করার হীনমন্যতার পরিচয় দিয়ে স্বার্থ উদ্ধার করে নিয়েছে।
জামায়াত, শিবির, জঙ্গিরা ভিন্ন কৌশলেও তাঁদের উদ্দেশ্য সাধন করার কাজে নিমগ্ন ইতিমধ্যে তারও প্রমান পাওয়া গেছে। একাধিকবার তদ্রুপ আইডির লিংকসহ আমি পোষ্ট করে বন্ধুদের সতর্ক করার চেষ্টা করেছিলাম। ফেসবুক বন্ধু ‘জুয়েল মেক্সের’ অনরোধে শিবিরের এক জালিয়াতের আইডিতে রিপোর্ট করার উদ্দেশ্যে লিংকে গেলে দেখা যায়- রিপোর্ট অপসানেও যাওয়ার উপায় খুজে বের করা যাচ্ছেনা। নিসন্দেহে উক্ত আইডি উন্নত কোন প্রযুক্তির সাহায্যে সীল করা।
বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই-তাঁদের অধিকাংশ ফেসবুক ইউজার উন্নত প্রযুক্তির প্রশিক্ষন প্রাপ্ত স্বীকার করে নিতে আমি লজ্জা অনুভব করিনা। কারন আমার মত স্বল্প ফেসবুক ইউজারের ফ্রেন্ডলিষ্টেও অত্যান্ত সংগোপনে এদের অবস্থান নিশ্চিত করে-আমার দু’টি আই, ডি, পেইজ, ওয়েবসহ অকেজো করে দিতে সক্ষম হয়েছিল। খোঁজ নিলে দেখা যায় এদের প্রত্যেকের আই, ডির প্রোফাইল নাম এবং ছবি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান যুবক, অথবা সুন্দরী যুবতী মেয়েদের। একাধিক ওয়েবের মাধ্যমে পর্ণো ছবি আপলোড করাই তাঁদের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। উক্ত পর্ণো ছবি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন পাবলিক গ্রুপে পোষ্টিং দেয়াও তাঁদের দায়িত্বের অন্তভুক্ত। পোষ্ট অনুমোদিত হলে একদিকে পাঠক উক্ত ওয়েবে যাওয়া নিশ্চিত করে টাকা উপার্জন অন্যদিকে পর্ণো ছবি গ্রুপে অনুমোদনের অপরাধে ফেসবুক কতৃপক্ষ ; উক্ত গ্রুপকে যদি অচল বা বন্ধ করে দেয়, তাতেও তাঁদেরই লাভ হ’তে পারে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্রগতিশীল ছাত্র যুবকদের প্রেমের ফাঁদে বিভ্রান্ত করা; সেতো তাঁদের জন্য নস্যি ব্যাপার।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষন করে নিশ্চিত ধারনা করা যেতে পারে আগামী নির্বাচনে অশুভ শক্তির পাহারাদার, ধর্মাশ্রয়ী দলসমুহের রাজনৈতিক শক্তি কোনভাবেই প্রতিদ্বন্ধিতা গড়ে তোলার অবস্থানে নেই। এমতাবস্থায় তাঁদের মুলভরসা হতে পারে তাঁদের নিয়োগ প্রাপ্ত আন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ‘লবিষ্ট ফার্ম ‘ এবং নামে-বেনামে লক্ষ লক্ষ ‘ফেসবুক আইডি ও ওয়েব’। এই সমস্ত আইডি থেকে শেখ হাসিনা, সজিব ওয়াজেদ জয়, শেখ রেহানার তথা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একাধিক গুজব ছড়াবে না-“তাঁর কোন নিশ্চয়তা নেই”।
বিএনপির মহাসচিব এমনই ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন-“আমেরিকার সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল থেকে শেখ হাসিনাকে শিক্ষা নিতে। আমি তাঁর উল্লেখিত বক্তব্যকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রলাপ মনে করিনা। মিসেস হিলারী ক্লিনটন সর্ব সাধারনের নিকট অত্যান্ত জনপ্রীয় মহিলা প্রার্থী ছিলেন-“অ-স্বীকারের উপায় নেই।” মি: ট্রাম্প তাঁকে পরাজিত করে বিজয় অর্জনের সহজ পথ অ-নৈতিক প্রচারনার আশ্রয় গ্রহন করেছিলেন–“ইহাও অস্বীকারের উপায় নেই”। আমেরিকান নাগরিকদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব কাজে লাগিয়ে এবং ০০১/মসুলমানের বিরুদ্ধে বিষোদগার ছড়িয়ে ৯৯/ ইহুদী, খ্রিস্টান ভোট কাছে টানার ফন্দিতে তিনি জিতেছেন।
তাছাড়াও বর্ণবাদ আমেরিকার সমাজে অনেক আগে থেকেই বিরাজমান ছিল, সর্বক্ষেত্রে গনতন্ত্রের চর্চা বিঘœহীন থাকার কারনে অনেকটাই উক্ত বিষ নিস্তেজ ছিল। অ-রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব ব্যাবসায়ী ‘মি: ট্রাম্প’ আমেরিকার ভবিষ্যত রাজনীতির তোয়াক্কা না করে নিস্তেজ বর্ণবাদকেও উস্কে দিয়ে জয় পক্ষে নেয়ার কৌশল অবলম্বন করে সফল হয়েছেন। এই সমস্ত অ-নৈতিক প্রচার প্রচারনায় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমেই সম্পন্ন করতে হয়েছে ট্রাম্পকে। কারন আমেরিকান মিডিয়া সমূহ অত্যান্ত শক্তিশালী ভুমিকা অতীত হতে রেখে আসছে নারী স্বাধীনতা, বর্ণবাদ বিরুধী, সকল নাগরীকের সম-অধিকার ও ময্যাদার পক্ষে। তাঁদেরকে কাজে লাগানো ট্রাম্পের পক্ষে সম্ভব কখনই ছিলনা; তাই সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকেই শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন আগে থেকে। সময়মত ফেসবুক সিন্ডিকেট কাজে লাগিয়ে জয়ও ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হলেন।
বিএনপি মহাসচিব হিলারীর জনপ্রিয়তাকে কিভাবে ব্যর্থ করে দিয়ে ট্রাম্প জয়ী হয়েছেন লক্ষ রেখে সরকারকে সতর্ক করে দিলেন মাত্র। তাছাড়াও অতীতের ফখরুল ইসলাম সাহেবের বিবৃতি সমুহ লক্ষ করলে দেখা যায়-তাঁর আগাম বিবৃতি কোন কোন ক্ষেত্রে জনগনের জীবন ও সম্পদ হানীর একাধিক উদাহরনের সাক্ষী হয়ে জাতীয় জীবনে ভয়ংকর অভিশাপের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। জাতীর জনকের কন্যার দেশে বিদেশে স্মরণকালের জনপ্রীয়তাকেও নিমিষে মাটি করে জয় ছিনিয়ে নেয়ার একাধিক ষড়যন্ত্রের ফাঁদ প্রকাশ্য, অ-প্রকাশ্য দেশে বিদেশে তাঁদের রয়েছে– রাজনীতিক মির্জা ফকরুল সাহেবের ইহা স্পষ্ট করে বলার অপেক্ষা রাখে না”। “জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু”।