নিঃস্বার্থভাবে দেশ সেবা ও মানুষের পাশে থেকো…নবীন সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

আবদুল আখের॥ সদ্য কমিশন পেলেন নারীসহ ৩৫০জন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার চট্টগ্রামের ভাটিয়ারী বিএমএ প্যারেড ময়দানে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ৭৫তম বিএমএ কোর্সে কমিশনপ্রাপ্ত অফিসার ক্যাডেটদের র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের নিঃস্বার্থভাবে জনগণের পাশে থাকার ও দেশ সেবার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তোমরা নিঃস্বার্থভাবে জনগণের পাশে থাকবে এবং দেশের সেবা করবে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি অনুগত এবং অধীনদের প্রতি সহমর্মী হতে হবে তোমাদের। তোমাদের জন্য রইল আমার শুভকামনা। ’গত বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ৭৫তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের কমিশনপ্রাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত রাষ্ট্রপতি প্যারেডে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তিন বছর মেয়াদি বিএমএ কোর্স থেকে দেশের ৫০ জন নারীসহ দেশি-বিদেশি মোট ৩৫০ জন কমিশন পেলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সজাগ ও সদা প্রস্তুত থাকতে নতুন কমিশনপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘মনে রাখবে, অনেক রক্ত আর ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের এই স্বাধীনতা। কাজেই এ দায়িত্ব পালনে তোমাদের সজাগ ও সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। যাতে এই স্বাধীনতা নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। ’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের দিনটি তোমাদের জীবনে অত্যন্ত আনন্দের এবং গুরুত্বপূর্ণ। rank bage armi
আজ থেকে তোমাদের ওপর ন্যস্ত হচ্ছে দেশমাতৃকার মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাই হবে তোমাদের জীবনের প্রথম ও প্রধান ব্রত। ’ জানা গেছে, কমিশন পাওয়ার পরও এই কোর্সের তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের নিজ ইউনিটে রেজিমেন্টেশন প্রক্রিয়া শেষে আরো প্রায় এক বছর বিএমএতে তাঁদের একাডেমিক কার্যক্রম শেষ করার জন্য অবস্থান করতে হবে। আগে বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্স ছিল দুই বছরের। আগে দুই বছরের কোর্স সম্পন্ন করে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে নিয়োগ পেলেও এবারের কোর্স থেকে সরাসরি লেফটেন্যান্ট পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। গতকালের রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজের মাধ্যমে এ কোর্সের ৩৪৩ জন বাংলাদেশি, পাঁচজন ফিলিস্তিনি এবং দুজন শ্রীলঙ্কান ক্যাডেটসহ মোট ৩৫০ জন ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন। সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত ক্যাডেটদের মধ্যে ২৯৩ জন পুরুষ ও ৫০ জন নারী ক্যাডেট রয়েছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি কৃতী ক্যাডেটদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক এবং বিএমএ কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল সাইফুল আলম এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা, জাতীয় সংসদের সদস্যরা, নৌবাহিনী প্রধান, সরকারের পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা, কূটনৈতিকরা, আমন্ত্রিত অতিথিরা এবং কমিশনপ্রাপ্ত ক্যাডেটদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে তাঁকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, ২৪ ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের জিওসি এবং চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, জেনারেল অফিসার কমান্ডিং অব আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড লে. জেনারেল আব্দুল আজিজ এবং বিএমএ কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল সাইফুল আলম স্বাগত জানান।
বক্তব্যে দেশ-বিদেশে দায়িত্ব পালনে সেনাবাহিনীর সদস্যদের ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘দেশ-বিদেশে দায়িত্ব পালনে দক্ষতা ও পেশাদারি দেখিয়ে আমাদের সেনাবাহিনী সব মহলের প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তোমাদের (নবীন সেনা কর্মকর্তা) এ সুনাম আরো এগিয়ে নিতে হবে। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষ শান্তি আর সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জানবে, এটিই আমার প্রত্যাশা। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তোমাদের মনে রাখতে হবে, তোমরা এ দেশের সন্তান। জনগণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই তোমাদের সবাইকে সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্নার সমান অংশীদার হতে হবে। দাঁড়াতে হবে যেকোনো দুর্যোগ ও দুঃসময়ে বিপন্ন মানুষের পাশে। ’ তিনি সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন, সুশৃঙ্খলভাবে ত্রাণ বিতরণ এবং তাদের পরিচয়পত্র তৈরিতে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের প্রশংসা করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুর্গম পার্বত্য এলাকায় সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মহাসড়ক, সেতু ও ফ্লাইওভার নির্মাণ, ভোটার তালিকা ও মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রেও দক্ষতার কথা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহনীর উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নানা উদ্যোগের তথ্যও বক্তব্যে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রতিরক্ষা নীতির অনুসরণে আমরা ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করি। বিগত প্রায় ৯ বছরে আমরা সেনাবাহিনীর অবকাঠামোগত পরিবর্তনের পাশাপাশি সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছি। ’ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে তাঁর সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের আমরা নতুন নতুন ব্রিগেড, ইউনিট ও ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠাসহ এনডিসি, বিপসট, এএফএমসি, এমআইএসটি এবং এনসিওস একাডেমির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রতিষ্ঠা করি। সেনাবাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক এপিসি, এআরভি, ব্যাটেল ট্যাংক, আরমার্ড রিকভারি ভেহিকল, হেলিকপ্টার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সমরাস্ত্র ও সরঞ্জামাদি ক্রয় করা হয়। ’
শেখ হাসিনা বলেন, আজকের বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অবকাঠামোগত, কৌশলগত এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকে এক দশক আগেকার সেনাবাহিনীর চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। আধুনিক প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামাদির সমন্বয়ে আজকের সেনাবাহিনী অনেক বেশি উন্নত, দক্ষ এবং চৌকস।
বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিকে একটি অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসমপন্ন একাডেমিতে পরিণত করার লক্ষ্যে তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে ইতিমধ্যে ক্যাডেটদের ইনডোর প্রশিক্ষণের সব ধরনের অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে এ একাডেমিতে বিভিন্ন বিষয়ে চার বছরমেয়াদি অনার্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে ক্যাডেটদের কমিশন লাভের সময়কাল দুই বছর থেকে তিন বছরে উন্নীত করা হয়েছে। এই প্রথমবারের মতো ক্যাডেটরা একেবারে লেফটেন্যান্ট পদে কমিশন লাভ করতে যাচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.