দেখতে দেখতে আজ শেষ হয়ে যাচ্ছে ২০১৭ এবং বিদায় নিচ্ছে আমাদের কাছ থেকে। বিদায় বেলাতেও বলতে ইচ্ছে করছে আরো কটাদিন যদি ধরে রেখে কাজটুকু শেষ করা যেতো তাতেতো মন্দ হতো না। কিন্তু কি তা আর হয়। হয় না। তাই বিদায় বেলায়ও বলতে হয় এই ২০১৭তেও বাংলাদেশ এগিয়েছে পরাক্রমশালী গতিতে। নির্ভার বা স্তব্ধ হয়ে থাকেনি; কোন প্রতিকুলতাই আটকাতে পারেনি উন্নয়ন গতিকে। অনেক চড়াই উৎড়াই পাড় করে পাড়ী দিয়ে এসেছি আজ এই উন্নয়নের সীমান্তে। জ্বালাও, পোড়াও, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং আত্মঘাতী হামলা এমনকি নিরীহ বিদেশীদের হত্যাসহ দেশী নি:লোভ মানুষের মৃত্যৃর মধ্যদিয়ে যে বার্তা দিতে চেয়েছিল তা কিন্তু উল্টোপথেই হেটেছে। সকল অপশক্তির পরাজয় চোখের সামনে ঘটেছে। মানুষ ফিরে পেয়েছে মনোবল এবং বিশ্ব দেখেছে বাংলাদেশের মানুষের সততা এবং আন্তরিকতা ও কর্মনিষ্ঠার পরাক্রমশালী ঐক্য। রাস্তা-ঘাট, অফিস-আদালত, ব্রিজ কালভার্ট, ধনী- গরীবের বৈষম্য এমনকি ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নয়ন গতি এবং এর বাস্তবায়ন ও পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিযোগীতায় উর্ত্তীর্ণ হওয়া সবই এখন দৃশ্যমান এক পর্বত শৃঙ্গের উপর দাঁড়ানো সুবিশাল টাওয়ার। এই টাওয়ার থেকেই রচিত হবে আগামী বিশ্ব নের্তৃত্বের সকল কর্মকান্ড।
এই বিদায়ী বছরে ঘটেছে কতনা আনন্দের বর্নীল ঝলক, ক্রিকেট, ফুটবল এমনকি অন্যান্য প্রতিযোগীতায়ও বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে আর ছিনিয়ে এনেছে বিজয় মুকুট। ছেলে মেয়ে উভয়ই একসঙ্গে কাজ করলে দেশের উন্নতি ও সুনাম বৃদ্ধি ঘটে তার প্রমান হয়েই ইতিহাতে ঠায় নেবে ২০১৭সালটি। বিশ্বাস করি এই বিদায়ী বছরেই আমাদের অহৎকার ও গর্ব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছিনিয়ে এনেছেন অনেক মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার অবলম্বন স্বরূপ স্বীকিতী। সর্বশেষ যে স্বীকৃতিটি আমাদের সামনে তিনি রেখেছেন তা বিশ্বকে অবাকই করেনি বরং দিয়েছে নীতিগত নৈতিক ও মানবিক শিক্ষা। বিশ্ব মানবতার মা হিসেবে যে দৃষ্টান্ত তিনি দাঁড় করিয়েছেন তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণজ্জ্বোল অধ্যায় হিসেবেই লিপিবদ্ধ থাকবে না বরং মানুষের দৈনন্দিন জীবনাচারনেও এর প্রতিফল দেখা যাবে। নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম ও উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হওয়ার পথও দেখিয়েছে এই বিদায়ী বছরটিই। সাফল্যের দৃষ্টিতে পরিমাপ করলে এই বছরটিকে শতভাগ সফলতায় পূর্ণ মার্ক (নম্বর) দেয়া যায়।
জিরো টলারেন্স নীতির কাছে পরাজিত হয়েছে বিশ্ব সমস্যার একটি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। এই সমস্যা বিরাজমান সারা পৃথিবীতেই কিন্তু এর বিস্তার রোধে সফলকাম হয়েছে একমাত্র বাংলাদেশ। আর এর স্বীকৃতিও আমাদেরকে দয়েছে বিশ্বদরবার। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পরিচয় এবং সকল নৈরাজ্যমূলক কর্মকান্ডকে কঠোর হস্তে দমনেও স্বাক্ষর রেখেছে এই বিদায়ী বছরটি। শেখ হাসিনার সরকার দ্বিতীয়বারে পূর্ণ মেয়াদ অতিক্রম করার স্বাক্ষর ও ভীত্তি হিসেবে স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে এই বিদায়ী বছরটি। ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষায় দৃষ্টান্ত হয়ে আগামীকে উজ্জ্বীবিত করেছে এই সদ্য বিদায় নিতে যাওয়া বছরটি। বিশ্বকে দেখিয়েছে সততার দৃষ্টান্ত, ত্যাগ ও মহিমার সমুজ্জ্বল ফলাফল, চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রতিকুলতা মোকাবেলা এবং নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মানের মত অবাক করা বিস্ময়। মিথ্যাকে মিথ্যা ও সত্যকে সত্য বলার দৃঢ়তা।
এই বছরেই স্বীকৃতী পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর ২৬শে মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য। যা ইউনেক্সো কর্তৃক স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত। এই বিরল সম্মানে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার অবলম্বন ও গর্ব করার সুযোগ এর স্বাক্ষমরও এই সদ্য বিদায় হতে যাওয়া বছরটিই। নানা প্রতিকুলতা ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলায়ও উর্ত্তীর্ণ হওয়ার সাক্ষি এই বিদায়ী বছরটি। বিচারালয়ের বিচার, যুদ্ধাপরাধিদের ফাঁসী কার্যকর এবং জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার সহ ন্যায় বিচারের দৃষ্টান্তও স্থাপিত হয়েছে এই বছরেই। অন্যায় যেই করুক না কেন তা সকলের জন্য সমান এই বানীটি পরিপূর্ণ না হলেও অন্তত ৯৫ভাগ সফল হয়েছে এই বছরেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ এর ডিজিটাল স্বীকৃতি জাতি দেখতে পেয়েছে এই বিদায়ী বছরের মাধ্যমে। ২০১৭ এর মাধ্যমে নির্বাচনের যে গতি ও ধারাবাহিকতা ছিন্ন হতে চলেছিল তা পুনরুদ্ধার কল্পে নতুন কমিশন স্বচ্ছতার নিরিখেই কাজ করে যাচ্ছে আগামীর কল্যাণে। নির্ভরতায় ও আস্থায় নির্ভার এখন কল্যাণকামী ইতিবাচক জনগন।
এই বিদায়ী বছরে অনেক পেয়েছি অর্জন তা বর্ননাতীত কিন্তু হারিয়েছিও অনেক রতœকে। বর্ষীয়ান রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষজনদের। সততার দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী অনেক দৃষ্টান্তদেয়ার মত মানুষ আজ আমাদের মাঝে নেই কিন্তু রয়েছে তাদের দৃষ্টান্তগুলি। এরই মধ্যে ঢাকার মেয়র বন্ধুবর আনিছুল হক এবং মান্যবর অভিভাবক জনাব মহিউদ্দিন সাহেব গত হয়েছেন। কিন্তু তাদের স্বীকৃতি জনগণ ও কাজ এখনও তাদেরকে জীবন্ত প্রদীপের ন্যায় জ্বলন্ত করে রেখেছে মানব মনে। তাদের শুন্যতা হয়ত পুরন হবে না কিন্তু তাদের জন্য কাজও থেমে থাকবে না এটাই নিয়তির বিধান। তবে তাদের দেখানো পথে আগামীর যাত্রা হবে এটাই এখন মানুষের কামনা। কিন্তু নিয়তির পরাক্রমে আরো সুউচ্চ স্তরে এগিয়ে যাবে সকল কর্মকান্ড এটাও প্রমান করে এই বিদায়ী বছর। বিদায়ী বছরের সকল নিহতদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে মহান রাব্বুল আল-আমীনের নিকট মঙ্গল ও শান্তির নিমিত্তে প্রার্থনা রেখে শুধু বলব বিদায় হে ২০১৭। বিদায় তোমায় স্মরণে রেখে আগামীর ২০১৮ এর আগমনকে জানাই স্বাগতম। সু-স্বাগতম আমাদের চলার পথের নিত্যদিনের সঙ্গি ২০১৮ হউক সমুজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের দিশারী।
আমাদের প্রত্যাশা আগামীর আগমন হউক শান্তির, স্থিতিশীলতার এবং নিশ্চয়তার ও নিরাপত্তার। মানুষ স্বতস্ফুত ও ১০০ভাগ কর্মচাঞ্চল্য নিয়ে স্ব স্ব কাজে নিয়োজিত হউক কল্যাণের এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে। সামনের যে নির্বাচন তা হউক সকলের কল্যাণের এবং বিশ্বে ইতিহাস সৃষ্টিকারী দৃষ্টান্তের। সকল নৈরাজ্য এবং হতাশা কাটিয়ে মানুষ ফিরে পাক তাদের স্বতেজ স্বকীয়তা ও উর্বর মস্তকের উর্বরতা। ব্যবহারিক জীবনে ফিরে আসুক সামাজিক বন্ধন ও শান্তির এক অপুর্ব মেলবন্ধন। সকলে মিলে একযোগে দেশের কল্যাণের প্রয়োজনে এগিয়ে যাই আগামীর টার্গেট পূরণের সর্বোচ্চ শিখরে। দল-মত নির্বিশেষে ব্যক্তিস্বার্থ পরিহার করে দেশের কল্যাণে এগিয়ে যাওয়ার বন্ধনে ভালবাসা মিশ্রিত কর্মকান্ডের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অঙ্গিকারের আলিঙ্গনে। হানাহানি ও ভেদাভেদ বিহীন শান্তি ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশ বিনির্মানে ঐক্যের সমান্তরাল মেলবন্ধনের নি:শর্ত আলিঙ্গনে। সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে। নেতিবাচকতা ও ষড়যন্তমুলক মনোভাব ধুয়ে মুছে পরিহার করে পরিস্কার হৃদয়ে ইতিবাচকতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আজন্ম লালায়ীত স্বপ্নের সুউচ্চ পর্বতের উপর স্থাপীত টাওয়ারের সর্বোচ্চ চুড়ার অবস্থান নিশ্চিতকল্পের সুদৃঢ় বাতাবরণের একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রাখার প্রয়াসে। শুভ নববর্ষ। হ্যাপী নিউ ইয়ার ২০১৮।