টিআইএন॥ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। এ সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। এ সেতুতে কেউ উঠবেন না।’ গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটশন মিলনায়তনে ছাত্রদলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘ভারত আমাদেরকে স্বাধীনতার সময় সাহায্য করেছে। ভারতকে আমরা বন্ধুর মতো দেখতে চাই। বন্ধু হয়ে থাকতে চাই সব সময়।’ খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নেই, বৈধ সরকার নেই, আইনের শাসন ও কথা বলার অধিকার নেই। তার প্রমাণ একটু আগে দেখলাম। অনেকদিন ধরে ছাত্ররা আলোচনা সভার প্রস্তুতি নিয়েছে। অনুমতি দিয়েছে, ভাড়াও নিয়েছে। অথচ হঠাৎ করে হলরুমে তালা লাগিয়ে দিল। এটা কেমন আচরণ? আজকে দেশ এক ব্যক্তির দখলে, দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ তার জন্য দায়ী। গুম, খুন বেড়েছে, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। মানুষের অভাবের শেষ নেই।’
ছাত্রদল নেতাদের অভিযোগ, অনুমতি নিলেও মিলনায়তনে প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে পৌঁছান। বিকেল ৫টা ২৩ মিনিটে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তন খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে মিলনায়তনে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় ওই চত্বরেই সমাবেশ করে ছাত্রদল। সেখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও হাবিব-উন নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী।
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে পদ্মাসেতু নির্মাণ হলে তাতে কাউকে না উঠার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার দাবি, এই সেতু হবে ঝুঁকিপূর্ণ। ছাত্রদলের ৩৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি নেত্রী এ আহ্বান জানান।
সমাবেশে সরকারের কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন খালেদা জিয়া। বলেন, চেষ্টা করেও তাদেরকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করা যাবে না। এই সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা ছিল দুপুর দুইটায়। তবে সুপ্রিম কোর্ট দিবসে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সর্বোচ্চ আদালতে অবস্থান করায় সকাল থেকে মিলনায়তনের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে রেখেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্ট ছাড়ার পর মিলনায়তন খুলে দেয়া হয়। খালেদা জিয়া বলেন, ‘শেখ হাসিনা মিথ্যাচার করছেন। সরকারি কর্মকর্তারাও মিথ্যা কথা বলছেন। তারা বলছেন যে (সমাবেশের) অনুমতি দেয়া হয়নি। এটা কেমন কথা? যদি অনুমতি না দেন তাহলে টাকা কেন নিলেন? আমাদের ছেলেপুলে কাল থেকে স্টেজ করল, সব কিছু করল কীভাবে?’ ‘অনেকদিন ধরে ছেলেরা আলোচনা সভার প্রস্তুতি নিয়েছে। অনুমতি দিয়েছে, ভাড়াও নিয়েছে। অথচ হঠাৎ করে হলরুমে তালা লাগিয়ে দিলো। এটা কেমন আচরণ?’
‘নির্বাচন থেকে আমাদের বাইরে রাখা যাবে না’ ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপিকে ছাড়া হলেও আগামী জাতীয় নির্বাচনে সেটা সম্ভব হবে না বলেও জানিয়ে দেন খালেদা জিয়া। ‘২০১৮ সাল জনগণ, গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের বছর হবে’ এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন আর হবে না। আমাদের লোকদেরকে ধরবেন আর ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন করবেন… ২০১৪ সাল আর হওয়ার সুযোগ নেই। বিএনপি বড় রাজনৈতিক দল। তাকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন হবে না। সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।’ ‘আমরা নির্বাচন করবো, চাইলেও বাইরে রাখা যাবে না। তবে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ নির্দলীয়।’
বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দিতে হবে। হাসিনার সংসদ বহাল রেখে এবং হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।’ জনগণের ভোট কখনও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসেনি দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘কারও না কারও ওপর ভর করে তারা ক্ষমতায় এসেছে। এ জন্য তারা বিএনপিকে ভয় পায়।’ ‘মানুষ বুঝে গেছে আওয়ামী লীগ আরও ক্ষমতায় থাকলে তারা আর বেঁচে থাকতে পারবে না। এ জন্য তারা চায় পরিবর্তন।’
দশম সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের তারিখ ৫ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি না দেয়ারও সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া। বলেন, ‘আমরা অনুমতি চেয়েছি, কিন্তু সেখানে আরেক দলকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আমাদেরকে অন্য কোনো দিন অন্য কোনো জায়গায় সমাবেশ করতে বলুক।’
পাকিস্থানিদের চেয়ে বেশি নির্যাতনে আ.লীগ। ‘পাকিস্থানিদের চেয়েও বেশি নির্যাতন করছে আওয়ামী লীগ’- এমন মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশকে একটি কারাগারে পরিণত করেছে সরকার, এখানে যুক্ত হলো শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ।’
বিএনপি নেত্রী বলেন, যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে, তাদের বিরুদ্ধে একদিন দেশের মানুষ রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করবে। কারণ তারা সব কাজ রাষ্ট্রবিরোধী করছে। ‘আওয়ামী লীগ পুলিশকে দিয়ে অত্যাচার করাচ্ছে। পুলিশ খারাপ নয়’-এমন মন্তব্য করে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘আপনারা জনগণের সেবক। কথায় কথায় আমাদের ছেলেদের ধরছেন, এটা বন্ধ করুন, তাদের মুক্তি দিন।’ জঙ্গিবাদের জন্যও আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বলেন, ‘আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম, তখন আওয়ামী লীগই সৃষ্টি করেছে। শায়েখ আবদুর রহমান ও বাংলাভাই তাদের আত্মীয়স্বজন। তারা এখন ছেলেপুলেদের ধরছে আর বলা হচ্ছে এটা জঙ্গি… বিদেশিদের দেখানোর জন্য।’
‘দাড়ি টুপিওয়ালা লোকজন হলেই জঙ্গি। কাউকে গ্রেপ্তার করার পরে যদি কিছুদিন কারাগারে রাখে, তাহলে তো বের হলেই দাড়ি হয়ে যায়।’ নিখোঁজের পর ঘরে ফিরে ভীতির কারণে লোকজন মুখ খুলছে না বলেও অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।
দুর্নীতির মামলায় আদালতে হাজিরার সময় একাধিক কার্যদিবসে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ নিয়েও কথা বলেন খালেদ জিয়া। বলেন, ‘আমি যখন কোর্টে যাই, ছেলেরা শুধু স্লোগান দেয়, তারা নিরপরাধ, তাদেরকে ধরা হচ্ছে, এটা বন্ধ করুন।’
২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের সরকার পতনের আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় বাসে পেট্রল বোমা হামলায় আট জন নিহতের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি নিয়েও কথা বলেন খালেদা জিয়া। বলেন, ‘আমাকে বালুর ট্রাক দিয়ে আটকে রাখা হলো, অন্যদিকে আমার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হলো, চার্জশিটও দেয়া হবে। আমরা বলেছি মাফ করব, কিন্তু আল্লাহ সব দেখছেন, তিনি বিচার করবেন।’
প্রধান বিচারপতির পদ থেকে সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘অস্ত্রের মুখে তার অফিস থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে তাকে বিদেশ পাঠিয়ে জোর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে। আল্লাহ এর বিচার করবে একদিন।’ জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে তার স্ত্রী বলেন, ‘যত কথাই বলুক, ইতিহাসে তা লেখা থাকবে। আওয়ামী লীগের তখন যে দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল তখন তারা তা করেনি।’
৭১ এ সহযোগিতা করায় ভারতকে ধন্যবাদও জানান খালেদা জিয়া। বলেন, ‘তারা আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র, মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে। বন্ধু হিসেবে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই, এটা আমরা মনে রাখব।’ ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, আবদুল মঈন খান ও ছাত্রদলে সাবেক নেতারা বক্তব্য রাখেন।