কেউ এড়াতে পারবে না এই পরাজয়ের দায়ভার

মো. শাহরিয়ার আলম॥ রাজশাহীর বাঘা পৌর নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। দুঃখজনকভাবে এই ভোটে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ত্যাগী, পোড় খাওয়া, পরীক্ষিত, নিবেদিত, দুর্দিনের রাজপথের সৈনিক আওয়ামী লীগ নেতা আক্কাছ আলী সামান্য ভোটে পরাজিত হয়েছেন। কিন্তু ১২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে আওয়ামী লীগেরই ৮ জন নির্বাচিত হয়েছেন। আমি জয়ী সবাইকে শুভকামনা জানাই। shaharia bai f minister
বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের দুর্গ, ভবিষ্যতেও তা থাকবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তারপরও আমাদের মেয়র প্রার্থীর পরাজয়ের বড় কারণ হলো উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশকিছু নেতার কাউন্সিলর ভোটে সম্পৃক্ত হওয়া। পাশাপাশি গুটিকয়েক নেতার ব্যক্তিস্বার্থও এই নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে। আমাকে কথা দিয়েও কাউন্সিলর নির্বাচন থেকে সরে যায়নি, এরকম নজিরও সৃষ্টি হয়েছে, যা আমি কঠিন হাতে দমন করব সামনের দিনে। ১২ বছর মেয়র পদে থেকে এবং দীর্ঘ সময় মামলা এই নির্বাচনে যে প্রভাব ফেলেছে তা নাইবা বললাম। নির্বাচনে প্রার্থীর জয়-পরাজয় নির্ভর করে প্রার্থী এবং দলের নেতা-কর্মী উভয়েরই তৎপরতা ও কর্মকান্ডের ওপর। এই পরাজয়ের দায়ভার কেউ এড়াতে পারবে না। শুরু থেকেই বাঘা পৌরসভার এ নির্বাচনটি এই সময়ে বিশেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে হওয়া নিয়ে কিছুু মানুষের মধ্যে আশঙ্কা ছিল। কিন্তু বাঘাবাসীর জোরালো দাবির প্রতি সম্মান রেখেছি বলেই আমি স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রী হয়েও নির্বাচনে বাধা হয়ে দাঁড়াইনি। পূর্ব থেকেই প্রার্থী এবং দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা ও আস্থাহীনতা বিদ্যমান ছিল। আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি এবং এই নির্বাচনকে সামনে রেখে দেরিতে হলেও বাঘা আওয়ামী লীগ একত্রিত হয়েছে। যতটা সমন্বিতভাবে এবং পরিকল্পিতভাবে কাজ করা উচিত ছিল তার সময় ও সুযোগ পাওয়া যায়নি বলেও হয়তো আমরা মেয়র হারিয়েছি। ভোটের আগের রাতেও আমি বাঘার গুরুত্বপূর্ণ ৫ জন নেতার কাছ থেকে আগাম ভোটের হিসাব নিয়েছিলাম। সেখানেও আমি জয় নিয়ে শঙ্কিত ছিলাম। প্রার্থীর পক্ষ থেকেও কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। যা এখানে বলতে চাই না।
আক্কাছ আলী মেয়র থাকাকালীন এই পৌরসভাকে তৃতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করেছেন। তার সময়েই বাঘা পৌরসভা প্রায় ৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন বরাদ্দ পেয়েছে এবং অনেক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। আমাদের প্রার্থী পরাজিত হলেও পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আক্কাছ আলীর রাজনীতি আরও বেশি জোরালো হবে বলে আমি মনে করি। পোড় খাওয়া এ নেতার এই অভিজ্ঞতা নতুন নয়। অতীতেও তিনি পরাজিত হয়েও গণমানুষের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং দুর্দান্ত মনোবল নিয়ে ভোটে জয়লাভ করেছেন। এ পরাজয়ে অনেকের কাছেই অনেক প্রশ্নের উদয় হতে পারে। কিন্তু সংঘবদ্ধ আওয়ামী লীগ যে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী তা নতুন করে প্রমাণের কিছু নেই। তবে এই ফলাফল নিয়ে নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। হাতে গোনা কিছু চক্রান্তকারী আর কিছু বিরোধী মানুষ এই পরাজয়ে হয়তো মুচকি হাসছেন। তাদের মুখকে মলিন করে দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনতে বাঘা পৌরসভার সবাই আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে যেমনটি নিকট অতীতে করেছিল আড়ানী পৌরসভায় আর ৩টি ইউনিয়নে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও স্থানীয় ইস্যুগুলোই ভোটারের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে। এই পরাজয় যে কোনো ক্রমেই পৌরসভায় আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার মানদন্ড নয় তা এই নির্বাচন যারা কাছ থেকে দেখেছেন তারা অবশ্যই মানবেন।
এই নির্বাচন এটাও প্রমাণ করেছে, আওয়ামী লীগ সরকার অন্য যে কোনো দলীয় সরকারের চেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে এই নির্বাচন হতোই না। আশা করি পৌরসভার জনগণ তা মনে রাখবেন। লেখক : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, [ফেসবুক থেকে নেওয়া]

Leave a Reply

Your email address will not be published.