তাজুল ইসলাম নয়ন॥ বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গত ৪ বছরের সাফল্য তুলেধরে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া দিকনির্দেশনামূলক ভাষণের মুল প্রতিপাদ্য সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো। আগামী সংখ্যায় বিস্তারিত ভাষনটি প্রকাশ করা হবে। ভাষনে যা উঠে এসেছে তার সারমর্ম ক্রমানুপাতিক অনুষারে সাজানো হয়েছে যা ১৪টি হেডিং এবং এর অধিনে সাব হেডিং দিয়ে।
১। আগাম বার্তা:-
ক) সংবিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালের শেষদিকে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
খ) ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত হবে।
২। তথ্য প্রযুক্তি:-
ক) দেশে ১৩ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহৃত হচ্ছে।
খ) ইন্টারনেট সার্ভিস প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
গ) আট কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন।
ঘ) দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করে ব্যান্ডউইথ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ঙ) গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
চ) প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে জনগণ ২০০ ধরনের সেবা পাচ্ছেন। সব ধরনের সরকারি ফরম, জমির পর্চা, পাবলিক পরীক্ষার ফল, পাসপোর্ট-ভিসা সম্পর্কিত তথ্য, কৃষিতথ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইনগত ও চাকুরির তথ্য, নাগরিকত্ব সনদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রক্রিয়া, ক্রয়-বিক্রয়সহ বিভিন্ন বিল প্রদানের সুবিধা জনগণ পাচ্ছে।
৩। অর্থনীতি:-
ক) মাথাপিছু আয় ২০০৫ সালের ৫৪৩ ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৬১০ ডলারে উন্নীত হয়েছে।
খ) দারিদ্র্যের হার ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে।
গ) ‘২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ছিল ৩ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ৩৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
ঘ) ২০০৫ সালে ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের বিদেশে কর্মসংস্থান হয়। ২০১৭ সালে বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে ১০ লাখ ৮ হাজার ১৩০ জনের।
ঙ) প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ২০০৫-০৬ বছরে ছিল ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।’
৪। শিক্ষা ব্যবস্থা:-
ক) বিগত ৯ বছরে ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়েছে।
খ) ১ এক হাজার ৪৫৮টি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
গ) ৩৬৫টি কলেজ সরকারিকরণ করা হয়েছে।
ঘ) ৫০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ রুম স্থাপন করেছি।
ঙ) বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২টি বই বিতরণ করা হয়েছে।
চ) সাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
ছ) প্রাইমারি থেকে মাস্টারস ডিগ্রি ও পিএইচডি পর্যন্ত ২ কোটি ৩ লাখ শিক্ষার্থী বৃত্তি ও উপবৃত্তি পাচ্ছে।
জ) এককোটি ৩০ লাখ প্রাইমারি শিক্ষার্থীর মায়ের কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বৃত্তির টাকা পৌঁছে যাচ্ছে।
ঝ) শিক্ষা খাতে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৭ হাজার।
৪। স্বাস্থ্য খাত:-
ক) স্বাস্থ্যসেবা গ্রাম পর্যায়ে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সারাদেশে সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
খ) ৩০ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।
গ) জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা চালু করা হয়েছে।
৫। বিদ্যুৎ খাত:-
ক) ১১৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
খ) বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৬ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।
গ) শতকরা ৮৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন।
ঘ) ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হবে।
৬। খাদ্য নিরাপত্তা :-
ক) খাদ্য উৎপাদন ৪ কোটি মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।
খ) মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে আমাদের অবস্থান চতুর্থ।
গ) মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে – ৭২ বছর।
৭। Fast_Track_Project অগ্রগতি:-
ক) সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
খ) পদ্মা সেতুর কাজ অর্ধেকের বেশি সম্পন্ন হয়েছে।
গ) ঢাকায় মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে।
ঘ) সমগ্র বাংলাদেশকে রেল সংযোগের আওতায় আনা হচ্ছে।
ঙ) চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে।
চ) ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের প্রথম পরমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে।
ছ) খুব শিগগিরই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে।
জ) পটুয়াখালীতে পায়রা বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে।
ঝ) কক্সবাজারের মাতারবাড়ি এবং রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে।
ঞ) গ্যাসের সমস্যা দূর করতে এলএনজি আমদানি শুরু হচ্ছে।
ট) রান্নার জন্য দেশে এলপিজি গ্যাস উৎপাদনের কাজ শুরু হয়েছে।
৮। সড়ক খাত:-
ক) ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে।
খ) চন্দ্রা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়নের কাজ চলছে।
গ) ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রবিরোধ নিষ্পত্তির ফলে সমুদ্র সম্পদ আহরণ গবেষণা ও উন্নয়নে ব্লু ইকোনমি কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে।
৯। দরিদ্রোয়ন্নয়ন:-
ক) হতদরিদ্র ৩৫ লাখ মানুষকে বয়স্কভাতা দেওয়া হচ্ছে।
খ) বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, দুস্থ নারী ভাতা উপকারভোগীর সংখ্যা ১২ লাখ ৬৫ হাজার।
গ) ৮ লাখ ২৫ হাজার জন প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে।
ঘ) ৮০ হাজার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শিক্ষা ভাতা পাচ্ছে।
ঙ) সারাদেশে ২ কোটি ২৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৭৭ জন কৃষকের মধ্যে কৃষি উপকরণ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।
চ) প্রায় ৯৮ লাখ কৃষক ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে ভর্তুকির টাকা পাচ্ছেন।
১০। জলবায়ু মোকাবিলা:-
ক) জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
১১। প্রতিরক্ষা খাত:-
ক) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালা ১৯৭৪-এর আলোকে ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
১২। নারীর উন্নয়ন ও থক্ষমতায়ন:-
ক) ‘নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রশংসা অর্জন করেছে।
খ) নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ বৈষম্য নিরসনে আমাদের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে।
গ) বাংলাদেশ জেন্ডার সংশ্লিষ্ট এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশ্বে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে।
১৩। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গন:-
ক) সম্প্রতি আমাদের মেয়েরা অনুর্ধ্ব ১৫ সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
খ) এর আগে আমাদের মেয়েরা এএফসি অনুর্ধ্ব ১৪ ফুটবলে আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
গ) বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।
ঘ) একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ সফলতা দেখিয়ে যাচ্ছে।
১৪। পররাষ্ট্রনীতি:-
ক) ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- জাতির পিতার এই আপ্তবাক্য আমাদের পররাষ্ট্র নীতির মূল প্রতিপাদ্য।
খ) এই নীতি অনুসরণ করে আজ প্রতিবেশী দেশগুলোসহ সবার সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
গ) অত্যাচার এবং নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে এসেছে।
ঘ) মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি। তাদের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে রিলিফ বিতরণ করা হচ্ছে এবং চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
সর্বপরি প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে যা উঠে এসেছে তার সবই দৃশ্যমান এবং আগামীর আশাও প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। এই ভাষণে শুধু জাতি আরেকবার স্মরণ করে এগিয়ে যাবে আগামীর করনীয় নির্ধারণের দিকে। সরকারের দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখানোর পথে যে বাধা তা পরিস্কার করতে জাতি বলিষ্ট ভুমিকা রাখবে এই ভাষণ এবং আগামীর দিকনির্দেশাকে কাজে লাগিয়ে।