২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুতে যান চলাচল করবে: রাষ্ট্রপতি

টিঅইএন॥ জাতীয় সংসদে এক ভাষণে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে বলে আশা করা যায়। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি ২০৪১ সালের মধ্যে প্রত্যেকটি জেলার সঙ্গে ট্রেন সংযোগের আওতায় আনা হবে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ করা হবে। গত বছরে ৩৭৩ কিলোমিটার চার লেনের রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে । আরো ১০০ কিলোমিটার চার লেনের রাস্তার কাজ প্রায় শেষের দিকে। বিআরটিসিতে আরো ৬০০টি নতুন বাস এবং ৫০০টি ট্রাক সংযোজন করা হবে বলে সংসদকে জানান রাষ্ট্রপতি।Rastopoti hamid vason in 18 s adiveson
মিয়ানামর থেকে জাতিগত নিধনে শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে মানবিক সহায়তা দেওয়ায় বাংলাদেশ বিশ্বে নানা ভাবে প্রশংসিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।
গত রোববার জাতীয় সংসদে দশম সংসদের ২০১৮ সালের শীতকালীন প্রথম অধিবেশনের বক্তব্য প্রদান কালে তিনি এসব কথা বলেন। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এসময় সরকারে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ, গৃহীত প্রকল্প, নির্মাণাধীন নানা প্রকল্প, কৃষি, শিল্প ও সাহিত্য এবং বিদেশ থেকে অর্জনসহ ২০১৬-১৭ সালের ঘটে যাওয়া প্রায় সব বিষয় তুলে ধরেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে মানবিক সহায়তার প্রদান করার ফলে প্রধানমন্ত্রীকে জাতিসংঘ প্রশংসা করেছেন। তাকে মাদার অফ হিউম্যানিটি উপাধি দেয়া হয়। বাংলাদেশের মুখ বিশ্বে এখন উচু হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। বর্তমান দেশের বিদ্যুতায়নের হার ৮৩ শতাংশ হয়েছে। যা পূর্বে ছিলো মাত্র ৪৭ শতাংশ। রাষ্ট্রপতি বলেন ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ২৪ হাজার মেগাওয়াট। এবং ৪১ সালের মধ্যে ১০ হাজারের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন উদ্বৃত্ত করা হবে আশা করা যায়। নতুন নতুন গ্যাস কূপ আবিষ্কারের মাধ্যমে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ভারত থেকে ১৩০ কিলোমিটারের মৈত্রী পাইপ লাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আমদানি করার কাজ চলছে। ২০২৪ সালে জাতীয় গ্রিডে ২০০৪ কিলোওয়াট বিদুৎ সংযোজিত হবে।
বাংলাদেশ ইতিমধ্যে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যোগ দিয়েছে। এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর কাজ প্রায় শেষ । খুব অল্প সময়ের মধ্যেই উৎক্ষেপণ করা হবে। দেশের আইটি খাতে উন্নয়নের জন্য ২৮ টি হাইটেক পার্ক নির্মাণের কাজ চলছে। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশে ১ কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বিশ্বের প্রথম বিশেষায়িত ও একমাত্র বার্ন ইউনিট ঢাকা মেডিকেল কলেজে নির্মাণাধীন রয়েছে। প্রত্যেক জেলায় একটি করে ডে কেয়ার স্থাপনের কথা চিন্তা করছে সরকার। নারী উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে ঢাকায় জয়িতা টাওয়ার নির্মাণ করা হচ্ছে।
জঙ্গিবাদ বিরোধী আন্দোলনে জনগণ উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। ২০০১৫ -২০ সালে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ৭.৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার ধরা হলেও ২০২০ সালে তা ৮ শতাংশে পৌঁছা্বে বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে ৩৩.১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ রয়েছে। এভাবেই বাংলাদেশ ২০৪১ একটি উন্নত রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে যাবে। দেশের উন্নয়নে সরকারি ও বিরোধীদলসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। জাতীয় সংসদের শীতকালীন এ অধিবেশনে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফলে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির প্রশংসাও করেন তিনি।
জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ক্ষমতাসীন দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকে গঠনমূলক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘শহীদদের কাছে আমাদের অপরিশোধ্য ঋণ। আসুন একাত্তরের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মধ্য দিয়ে লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।’
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘একটি প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকাশে অবাধ, সুষ্ঠু, ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন যে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা দেশে বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে।’
রাষ্ট্রপতি তার বক্তৃতায় শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সকল সদস্য জাতীয় চার নেতার মহান মু্ক্িতযুদ্ধে শহীদ এবং দেশের কল্যাণে আত্মদানকরী সকলের কথা গভীরভাবে স্মরণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.