‘সুইপারের চাকরির জন্য টাকা নেওয়া নেতার দরকার নেই’

ফয়সাল, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি॥ পুলিশ কনস্টেবল, নৈশপ্রহরী-সুইপারের চাকরির জন্য যে নেতা টাকা নেন তার দরকার দলে নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।Obaidul kader tel brive
রোববার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে নগরীর লালদীঘি ময়দানে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এই শোকসভার আয়োজন করে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, যে নেতাকে জনতা পাবে না সেই নেতার দরকার আওয়ামী লীগে নেই। যে নেতা পুলিশ কনস্টেবলের চাকরির ভাগাভাগিতে গরীব মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করে সেই নেতার দরকার নেই।
‘সামান্য প্রাইমারি স্কুলের নৈশপ্রহরীর চাকরির জন্য, সুইপারের চাকরির জন্য গরীব মানুষকে যে নেতাকে টাকা দিতে হয়, সেই নেতার আওয়ামী লীগে কোন প্রয়োজন নেই। শেখ হাসিনার কোন প্রয়োজন নেই।’
তিনি দুর্নীতিবাজ নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, অপকর্ম থেকে বিরত হোন। অনেক হয়েছে। এনাফ ইজ এনাফ। অনেককে খারাপ খবরের শিরোনাম হতে দেখি। এটা যেন আর না হয়।
‘অন্ধকার আর দুর্দিন যখন আসবে তখন সাইবেরিয়ার অতিথি পাখিরা থাকবে না। যখন ক্ষমতা থাকবে না, ক্ষমতার দাপট থাকবে না, তখন ৫ হাজার পাওয়ারের বাতি দিয়েও তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
তরুণ ও নারী ভোটারদের সংগঠিত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এরাই আওয়ামী লীগের বিজয়ের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। সবাইকে সংগঠিত করুন। কাজ করে কর্মী হও। এখন সবাই নেতা হতে চায়। বাইরে দেখি এক চেহারা, বিলবোর্ডে দেখি আরেক চেহারা। বিলবোর্ডের চেহারায় কাজ হবে না।
কাদের বলেন, আমাদের সরকারের ভুলত্রুটি আছে। চাঁদের মধ্যেও কলঙ্ক থাকে। তাতে চাঁদের ঔজ্জল্য নষ্ট হয় না। নেত্রী ভাষণে বলেছেন, ভুলত্রুটি সংশোধনের সাহস আমাদের আছে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।
‘এমপিপুত্র আজ কারাগারে। মন্ত্রীপুত্র আজ কারাগারে। আমাদের মন্ত্রী-এমপিরা আজ বিভিন্ন অভিযোগে আদালতে হাজিরা দেন। এটা কি বিএনপি আমলে ছিল ? তাদের কোন মন্ত্রী-এমপি কি শাস্তি পেয়েছিল? আজ তুফান সরকার কোথায়? কারাগারে। শরীয়তপুরের আরিফ তালুকদার কোথায়? কারাগারে। শেখ হাসিনার আমলে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। শাস্তি তাকে পেতেই হবে।’ বলেন ওবায়দুল কাদের
শোকসভায় প্রেসিডিয়াম সদস্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে যদি সত্যিকারের শ্রদ্ধা জানাতে হয়, তাহলে আসুন আগামী নির্বাচনে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ২২টি আসনে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করে শেখ হাসিনাকে উপহার দিই।
কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, নেতারা যখন কেন্দ্রে পদ পাবার জন্য উদগ্রীব থাকেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী তখন সুযোগ পেয়েও কেন্দ্রে যাননি। তিনি বলেছেন আমি চট্টগ্রামের মানুষের সুখে দু:খে থাকতে চাই। আমি চট্টগ্রামের মানুষের পাশে থাকতে চাই। এই ধরনের নেতা এখন চট্টগ্রামে বিরল।
কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড.হাছান মাহমুদ বলেন, মহিউদ্দিন ভাই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেও সকল দল-মতের মানুষের শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। এজন্য উনার মৃত্যুর পর জানাজায় মানুষের যে ঢল নেমেছিল তাতে প্রমাণ হয়, তিনি শুধু আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন গণমানুষের নেতা।
সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম বলেন, আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থেকে ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকার বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে।
মহিউদ্দিনের সন্তান ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আমার বাবা বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার প্রশ্নে কোনদিন আপোষ করেননি। আদর্শের প্রতি অবিচল আস্থা রেখে দলীয় নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যই ছিল উনার রাজনৈতিক শিক্ষা। আমরা যারা উনার উত্তরসূরী, আমাদের উনার দেখানো রাজনৈতিক পথেই এগিয়ে যেতে হবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন ও উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াও বক্তব্য রাখেন।
সংসদ সদস্যদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ডা.আফছারুল আমিন, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, দিদারুল আলম ও ওয়াসিকা আয়শা খান বক্তব্য রাখেন।
শোকসভায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল আলম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সহ-সভাপতি নঈমউদ্দিন চৌধুরী ও খোরশেদ আলম সুজন বক্তব্য রাখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.