সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন এর খবর কেউ রাখছেন না

টিআইএন॥ বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ইতিহাসে অনন্য হয়ে আছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রায় দুই সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে গত শুক্রবার বাসায় ফিরেছেন তিনি। সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর পেটে ব্যথা, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে মেডিসিন অনুষদের ডিন ও ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহর তত্ত্বাবধানে কেবিন ব্লকের ৬১১নং কেবিনে ভর্তি হন। sahabuddin f president
এ বিষয়ে মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ জানান, সাহাবুদ্দীন আহমদ পেটে প্রচন্ড ব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, পারকিনসন্স ছাড়াও বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। চিকিৎসা গ্রহণের পর বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে এবং তিনি আগের তুলনায় ভালো আছেন।
বিএসএমএমইউতে চিকিৎসার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান প্রতিদিনই তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং দেখতে যান। তিনি ছাড়াও তাকে দেখতে যান প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আব্দুল্লাহ আল হারুন।
সাহাবুদ্দীন আহমদ ছিলেন বিচারপতি, পরে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর জাতির এক সন্ধিক্ষণে নিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির দায়িত্বও। শুধু একবার নয়, দু’বারের রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। সাহাবুদ্দীন আহমদ কোনোবারই নিজের ইচ্ছায় রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেননি। ১৯৯০ সালের ৫ ডিসেম্বর গণঅভ্যুত্থানে এরশাদের পতন হয়। প্রশ্ন দেখা দেয়, কে দেশের দায়িত্ব নেবেন? তিন জোট মিলে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তিনি বিচারিক পদ ছাড়তে চাননি বলেই তিন জোট সর্বসম্মতিক্রমে তাকে আবার আগের পদে ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করে।
একাদশ সংশোধনী ছিল সেই অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন। একজন ব্যক্তির চাওয়ার মূল্য দিতে সংবিধান সংশোধনের নজির বাংলাদেশে তো নেইই, অন্য কোনো দেশে আছে বলে জানা নেই। ওই সময় রাজনৈতিক অঙ্গনে বিষয়টি বেশ আলোচিত ছিল। নব্বইয়ের অভ্যুত্থানের পর সেদিন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন দায়িত্ব না নিলে দেশে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিত। সাহাবুদ্দীন আহমদের দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রেক্ষাপটও ভুলে যাওয়ার নয়।
১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনশ্রদ্ধেয় নির্দলীয় কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি করার অঙ্গীকার করেন। বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের কাছে যখন রাষ্ট্রপতি করার প্রস্তাবটি যায় তখন তিনি অবসর জীবনযাপন করছিলেন। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করলে তখন আর বিচারপতি সাহাবুদ্দীন তাকে ফিরিয়ে দিতে পারেননি। ফলে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি আবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পেমই গ্রামে জন্ম নেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৫২ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। ১৯৫৪ সালে তদানীন্তন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের (সিএসপি) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.