এদেশের কিছু মানুষ উন্নয়নটা চোখে দেখে নাঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাআ॥ বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়লেও ধনী-গরিবের বৈষম্য না কমে বেড়েছে বলে সিপিডির পর্যবেক্ষণের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা চোখ থাকতে অন্ধ, কান থাকতে বধির তাদের তো হাজার বলেও দেখানো যাবে না, শোনানোও যাবে না।
বাংলাদেশের সুশীল সমাজকে ক্ষমতালোভী আখ্যায়িত করে তাদের রাস্তার পাশের ডাস্টবিনের সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। গত বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, “কিছু মানুষ সব সময় থাকে যারা নিজেদেরকে অশুভ শক্তির কাছে বিক্রি করতে প্রস্তুত। যেমনটি রাস্তার পাশে ডাস্টবিনে লেখা থাকে ‘ইউজ মি’, তারাও রাজনীতি ও ক্ষমতার ক্ষেত্রে বুকে সাইনবোর্ড লিখে বসে থাকে ‘ইউজ মি’। মানে আমাকে ব্যবহার করুন। pm speace in perlament about developement
“তারা সব সময় আশায় বসে থাকে অসাংবিধানিক পথে ইমার্জেন্সি বা মার্শাল ল দিয়ে যদি কেউ ক্ষমতায় দখল করে তাহলে তাদের গুরুত্ব বাড়বে। তারা একটি পতাকা পাবে। ক্ষমতায় যেতে পারবে।”
‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০১৭-২০১৮: প্রথম অন্তরবর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শিরোনামে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে গবেষণা সংস্থা সিপিডি বলেছে, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়ে চললেও ধনী-গরিব বৈষম্য না কমে বরং বেড়েছে।
ওই প্রতিবেদনের উল্লেখ করে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি প্রধানমন্ত্রীকে সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে বলেন, “কিছু সুশীল ও পন্ডিতজনেরা সংবাদ সম্মেলন করে বলছেন, দেশের অর্থনৈতিক কোনো অগ্রগতি দেখতে পারছেন না। উন্নয়নের ছোঁয়া দেখতে পারছেন না। এই বিষয়ে আপনার অভিমত জানতে চাচ্ছি।”
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “এটা বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্য যে, এদেশের কিছু মানুষ উন্নয়নটা চোখে দেখে না। যারা চোখ থাকতে অন্ধ, কান থাকতে বধির তাদের তো হাজার বলেও দেখানো যাবে না, শোনানোও যাবে না। যারা দেখতেই পায় না, শুনতেই পায় না, বুঝতেই পায় না তোদের বোঝানোর কিছু নেই। তাদের এই না দেখাটা ওই ধরনের অসুস্থতা।”
সুশীল সমাজের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমি জানি না, এই সুশীলের অর্থটা কী, ব্যাখ্যাটা কী। কোন তত্ত্বের ভিত্তিতে তারা সুশীল। সেটাই প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয় যখন তারা কোনো কিছু দেখেনও না, শোনেনও না, বোঝেনও না।
“তারা সুশীল না অসুশীল তা আমি জানি না। তবে আমাদের দেশে একটা শ্রেণি আছে যাদের আকাঙ্খা ক্ষমতায় যাওয়ার, তাদের আকাঙ্খা একটি পতাকা পাওয়ার। কিন্তু তারা জনগণের কাছে যেতে পারেন না। ভোটের রাজনীতিতে তারা অচল। ভোটের রাজনীতি করতে গেলে জনগণের ভোট পেতে হয়। জনগণের কাছে দাঁড়াতে হয়, ভোট ভিক্ষা চাইতে হয়। ভোট পেয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে এই সংসদে বসতে হয় এবং সরকার গঠন করতে হয়।”
তারা জনগণের কাছে না গিয়ে ক্ষমতায় যেতে বাঁকা পথ খোঁজে মন্তব্য করে এ প্রসঙ্গে ‘সার্কাসের গাধার’ গল্প শোনান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “তাদের চিন্তা থাকে কখন দড়ি ছিঁড়বে। আমি কাউকে গাধা বলছি না। তারা জ্ঞানী-গুণী, শিক্ষিত; বিদেশ থেকে উচ্চ ডিগ্রিপ্রাপ্ত, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। তবে তাদের আচরণগুলি যখন দেখি খুব স্বাভাবিকভাবেই গাধার কথা মনে পড়ে। সার্কাসের গাধা সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করতে দড়ি ছেঁড়ার আশায় বসে থাকে।”
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সবাইকে নিয়েই চলতে চান।
“আমি বিশ্বাস করি, যে কোনো অর্জনের জন্য সকলেরই প্রচেষ্টা থাকে। তবে একজনকে হাল ধরতে হয়। যেমনটি গাড়ি চালালে চালকের আসনে একজনই বসেন। তিনি যদি সঠিকভাবে চালিয়ে নিতে পারেন তাহলে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারেন। আর সঠিকভাবে না চালাতে পারলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
“খুব স্বাভাবিকভাবে দেশ পরিচালনা তো কেউ এককভাবে করতে পারে না। তবে একজনকে উদ্যোগ নিয়ে দায়িত্ব নিয়ে ভালো-মন্দ সব কিছুর দায়িত্ব নিয়ে চলতে হয়।”
‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে…’ গানের এই লাইন উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি একা চলতে চাই না। সবাইকে নিয়েই চলতে চাই।”
জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা গঠনমূলক বক্তব্য রেখেছেন। গঠনমূলক আচরণ করেছেন। অন্তত এইটুকু বলতে পারি, বিএনপি থাকতে তখন যে খিস্তি খেউড় হত, যে সমস্ত আলাপ-আলোচনা হত তা কান পেতে শোনা যেত না।
“এখন সেসব নেই। অত্যন্ত গণতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে বিরোধী দল গঠনমূলক আলোচনা করছে এবং সর্বক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published.