টিআইএন॥ দেশে কোনো আকস্মিক দুর্যোগ না হলে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। উল্লিখিত দিনে জাতীয় সংসদের সদস্যরা প্রত্যক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি বেলা ২টায় জাতীয় সংসদের অধিবেশন কক্ষে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিজেই এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন এবং ভোট গ্রহণ করবেন। অন্যান্য কমিশনার তাকে সহযোগিতা করবেন। তবে নানা কারণে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদই আবারো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।
রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের জন্য আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ। আর ৭ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ ফেব্রুয়ারি। গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে প্রেস ব্রিফিং করে এ তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা মোট ৩৪৮ জন। জাতীয় সংসদ সদস্য ৩৫০ জন হলেও মৃত্যুজনিত কারণে দুটি আসন শূন্য রয়েছে অর্থাৎ দুটি ভোট কম পড়বে। ইতিপূর্বে সিইসি সংসদ ভবনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভোটার তালিকা চেয়ে চিঠি প্রদান করেন। গত বুধবারই ভোটার ও বিভক্তি ভোটারের তালিকা ইসিকে দেয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন মোঃ আবদুল হামিদ। বাংলাদেশের আইনে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে থাকতে পারবেন।
আগামী ২৩ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের চলতি মেয়াদ শেষ হবে। সংবিধান অনুযায়ী মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ৯০ দিন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময়সীমা সম্পর্কে সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতি-পদের মেয়াদ অবসানের কারণে উক্ত পদ শূন্য হইলে মেয়াদ-সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী নব্বই হইতে ষাট দিনের মধ্যে শূন্যপদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’ এ হিসেবে বুধবার ২৪ জানুয়ারি থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় শুরু হয়েছে।
এদিকে কে হচ্ছেন বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার কমতি নেই। নানাভাবে খবর নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান অবস্থায় সরকার নতুন করে কাউকে কোনো সুযোগ দিতে চান না। বিচারপতি সিনহাকে নিয়ে সরকারের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে সেই অভিজ্ঞতায় নতুন করে আর কোনো বিচার-বিশ্লেষণের প্রয়োজন বোধ করছে না সরকার। এই গুরুত্বপূর্ণ পদে সাহসী, বৃদ্ধিদীপ্ত ও পরীক্ষিত হিসেবে বর্তমান রাষ্ট্রপতিই অধিক যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা নিয়েছেন সরকারি দলের ভোটাররা।
যদিও সৎ, মেধাবী ও ত্যাগী পরিবারের সদস্য হিসেবে কেউ কেউ সৈয়দ আশরাফের বিষয়ে এখনো আশাবাদী কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বর্তমান রাষ্ট্রপতির বিষয়েই বেশি আগ্রহী বলে একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি পদে ব্যক্তিগতভাবে আগ্রহী না হলেও স্পিকারের নামও উঠে এসেছে। কিন্তু তা জোরালোভাবে আলোচিত হয়নি।
তবে এখনো আশাবাদী সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রংপুর সিটি করপোরেশনে জাপা সদস্য জয় লাভের পর নতুন করে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন এরশাদ। সিলেটেও তার দল ভালো করবে বলে নানাভাবে গুঞ্জন রয়েছে। এই সূত্র ধরেই এরশাদ রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার অভিপ্রায়ে নানাভাবে লবিং ও দেন-দরবার চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি জীবনের শেষ ইচ্ছা হিসেবেও রাষ্ট্রপতি হওয়ার বাসনা ব্যক্ত করেছেন তিনি। এরশাদের সুহৃদ ও কাছের লোকদের সূত্রে জানা গেছে, যে কোনো শর্তে এরশাদ রাষ্ট্রপতি হতে চান।
সেই ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলকে সর্বোচ্চ ছাড়ও তিনি দিতে চান নির্বাচনী কোয়ালিশন গঠনে। এমনকি এরশাদকে রাষ্ট্রপতি না বানালে জাপার সাথে জোটভুক্ত নির্বাচন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে এরশাদের কাছের লোকেরা মৃদু হুমকি দিচ্ছে। এতে হয়তো চির ধরতে পারে জোটের নির্বাচনের। কিন্তু সরকারি দলের কাছে বর্তমান রাষ্ট্রপতি ছাড়া নতুন কোনো ‘অপশন’ নেই বলে সরকারি দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।