বাআ॥ পূণ্যভূমি সিলেট থেকে আগামী নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার কার্যক্রম শুরু করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। নৌকা স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, নৌকা সমৃদ্ধির পথ দেখিয়েছে। বাংলাদেশ কারো কাছে হাত পেতে চলবে না। বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে আগামী ডিসেম্বরে দেশে যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেলে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা অতীতেও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন, এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই বাংলার মানুষ তাঁর স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই আজকে বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, সন্মান পেয়েছে।’
‘বাঙালি কারো কাছে হাত পেতে চলবে না, মাথা উচু করে চলবে, আর তা নিশ্চিত করতে হলে আগামী যে নির্বাচন সেই নির্বাচনে আপনাদের কাছে নৌকা মাকায় ভোট চাই,’ -বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় হাত তুলে নৌকায় ভোট দানের জন্য জনগণের ওয়াদা চাইলে সকলে সমস্বরে চিৎকার করে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্থ করেন।
সিলেট জেলা এবং মহানগর আওয়ামী লীগ যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ন সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এবং ডা. দিপু মনি, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান অন্যান্যেও মধ্যে সমাবেশে বক্তৃতা করেন।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান সমাবেশে সভাপতিত্বে করেন। জনসভার পূর্বে এই আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভাস্থল থেকেই প্রধানমন্ত্রী একযোগে সিলেটে ৩৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন।
টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর সিলেটে শেখ হাসিনার তৃতীয় সফর এটি। এ উপলক্ষে পুরো নগরী সাজানো হয় ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড আর তোরণে।
আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের প্রাক নির্বাচনী এই জনসভায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখার জন্য তাঁর চলার পথের দু’দিকে দাঁড়িয়ে থেকে তাঁকে স্বাগত জানান লক্ষ্য জনতা। সকাল থেকেই সিলেটবাসীর যেন একটাই গন্তব্য ছিল, আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ। হাজার হাজার মানুষ বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেচে- গেয়ে, শ্লোগানে শ্লোগানে, আকাশ-বাতাস মুখরিত করে জড়ো হতে থাকে জনসভা স্থলে। দুপুর নাগাদ সমাবেশস্থল, আশ-পাশের রাস্তা-ঘাট, মাঠ, বাড়ি-ঘরের ছাদ লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে।
সরকারের উন্নয়নের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা উন্নয়নের ছোঁয়া সিলেটের প্রতিটি ইউনিয়নে পৌঁছে দিয়েছি। সিলেটের উন্নয়নের জন্য আমরা ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। আজ একযোগে ৩৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর ৪ বছর মেয়াদ পূর্ণ করে তাঁর সরকার ৫ বছরে পদার্পণ করেছে। সামনে ২০১৮ সালের শেষের দিকে দেশে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সরকারের মেয়াদ ৫ বছরে পদার্পণ করার সঙ্গে সঙ্গেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে।
নৌকা মার্কায় জনগণ ভোট দেয়ার কারণেই আজকে বাংলার ঘরে ঘরে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের সুনাম হয়। বাংলাদেশ পুরস্কার পায়। আর অপরদিকে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ তিরস্কৃত হয়। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস- হয়ে যায় তাদের মূল কাজ।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যাসহ গত নির্বাচন বানচালের জন্য বিএনপি’র তথাকথিত আন্দোলনের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, বিএনপি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর নামে সন্ত্রাস-তান্ডব চালিয়েছিল। সেসময় অনেক মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সিএনজি চালককে পুড়িয়ে মেরেছে তারা। হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলে।
তিনি বলেন, আমরা গাছ লাগাই, তারা গাছ কেটে ফেলে, আমরা রাস্তা করি, তারা ধ্বংস করে। তবে আমরা তাদের সেই জ্বালাও-পোড়াও কঠোর হাতে দমন করেছি। জনগণ যখনই তাদের প্রতিরোধ করেছে, তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য তাঁর সরকার যে কাজ করে যাচ্ছে তাতে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে দেশবাসী উন্নয়নের ছোঁয়াটা পেত না। তিনি বলেন, ‘লুটেরা (বিএনপি) ক্ষমতায় এলে লুটপাট করে খেত আর ঐ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ চালাতো।’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের কারণে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। তাদের আমলে বাংলা ভাইয়ের সৃষ্টি, জঙ্গিবাদের সৃষ্টি। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশে সন্ত্রাস ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তাঁর সরকার করেছে, জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করেছে এবং এদেশে কোন অন্যায়-অবিচারকে তাঁর সরকার বরদাশত করবে না, কোন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় তিনি দেশকে সন্ত্রাস- জঙ্গিবাদ মুক্ত রাখতে সরকার প্রধান ধর্মীয় শিক্ষক, স্কুল-কলেজের শিক্ষক এবং তাদের অভিভাবক ও জনপ্রতিনিধিদের সজাগ থাকার আহবান জানান। কার সন্তান কোথায় যায় এবং কার সঙ্গে মেশে সে বিষয়ে খেয়াল রাখার জন্য প্রত্যেক অভিভাবকের প্রতি আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এমনকি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদেরও জনগণকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী ধর্মের মৌলিক শিক্ষা প্রদানের আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দূর করতে সক্ষম হয়েছে বলেই সিলেটবাসী আরামে ঘুমাতে পারছেন। সিলেট আজকে শান্তির নগরী। এই শান্তি বজায় রাখার জন্য তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রতিটি পাড়া-মহল্লা, গ্রাম-গঞ্জ এবং ওয়ার্ড-ইউনিয়নে তিনি শান্তি বজায় রাখার আহবান জানান।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পুনরোল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ হবে উন্নত- সমৃদ্ধ দেশ। ইনশাল্লাহ জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলবো। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই সিলেটের প্রয়াত রাজনীতিক আবদুস সামাদ আজাদ, হুমায়ূন রশীদ চৌধরী, শাহ এ এম এস কিবরিয়া, দেওয়ান ফরিদ গাজী ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে স্মরণ করেন।
২০০৪ সালে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন রাষ্টদূত আনোয়ার চৌধুরী ও বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানের উপর গ্রেনেড হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। তিনি এ সময় বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসের শিকার হয়ে নিহত দলীয় নেতা-কর্মীদেরও স্মরণ করেন।
সকালে বিমানে সিলেটে পৌঁছেই প্রধানমন্ত্রী সরাসরি শহরের দরগাহ মহল্লায় যান। সেখানে হজরত শাহজালাল (র:) মাজার জিয়ারত ও মোনাজাত শেষে যান শহরের খাদিম নগরে, হজরত শাহপরান (র:) মাজারে। এরপর সুরমা পারের কুশিঘাট এলাকায় হজরত গাজী বোরহান উদ্দীনের মাজার জিয়ারত করেন তিনি। বিকালে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জনসভায় যোগদান করেন। সেখানে তিনি সিলেটবাসীর জন্য ৩৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।