বাআ॥ গত ২০ ডিসেম্বর সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটির ওপর প্রথম স্প্যানটি বসানো হয়। এবার দৃশ্যমান হলো পদ্মাসেতুর ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্য। সেতুর ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারের ওপর বসেছে দ্বিতীয় স্প্যানটি। গত রোববার (২৮ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাজিরা পয়েন্টে ওই দুটি পিলালের ওপর স্প্যানটি বসানো হয়। স্প্যানটির দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। এর আগে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর বসেছিলো প্রথম স্প্যান। সেটিও ছিলো ১৫০ মিটার দীর্ঘ। ফলে সেতুর এ পর্যন্ত ৩০০ মিটার দৃশ্যমান হলো। সেতুতে এরকম ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। যার মধ্য দিয়ে রচিত হবে সোয়া ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মাসেতু।
এর আগে গতকাল শনিবার (২৭ জানুয়ারি) দ্বিতীয় স্প্যান বসানোর কথা ছিল। কিন্তু নদীতে নাব্যতা কম থাকায় বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চেষ্টা করেও স্প্যান বহনকারী ক্রেনটি পিলারে কাছে পৌঁছাতে পারেনি। অবশেষে দীর্ঘ সময়ের নানা প্রচেষ্টার পর রোববার সকালে স্প্যানটি বসানো সম্ভব হলো।
এর আগে গত ২০ ডিসেম্বর সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটির ওপর প্রথম স্প্যানটি বসানো হয়। সেতু সংশ্লিষ্টরা জানান, স্প্যানগুলো প্রাথমিকভাবে অংশ অংশ করে তৈরি করা হয় চীনে। সেখান থেকে সমুদ্রপথে জাহাজে করে দেশে এনে পদ্মার পাড়ে বিশালকায় ওয়ার্কশপে জোড়া দেওয়া হয়। মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে জোড়া লাগানোর পর এর একেকটির ওজন ৩ হাজার ২০০ টন দাঁড়ায়। যা একটি ৩ হাজার ৭০০ টন ওজন ক্ষমতাসম্পন্ন ভাসমান ক্রেনে টেনে নেওয়া হয় নদীর মাঝে নির্মিত পিলারগুলোর কাছে।
দ্বিতীয় স্প্যানটি বসাতে গিয়ে বলাচলে সেতু কর্মী ও প্রকৌশলীদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে। মাওয়ার ডকইয়ার্ড থেকে স্প্যানটি তুলে নেওয়ার পর প্রায় পাঁচ দিন লেগেছে সেটি জাজিরা পয়েন্টের দিকে নিয়ে যেতে। এরপর ঘন কুয়াশা, শীতে পানির স্তর নেমে যাওয়াসহ নানা জটিলতায় তা পিলারে বসাতে লেগে গেলো আরও তিন দিন।
এটি এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। তবে তাতেও প্রকৌশলীরা খুশি। তারা জানান, এমন কঠিন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এগিয়ে চলেছে দেশের স্বপ্নের সেতু নির্মাণ।
মাওয়া ডকইয়ার্ডে আরও প্রায় ডজনখানেক স্প্যানের খন্ডাংশ এসে পৌঁছেছে। সেখানে চলছে সেগুলো জোড়া লাগানোর কাজ। ওদিকে চলছে পিলারগুলো প্রস্তুত করার কাজও। মোট ৪২টি পিলারে বসানো হবে এই ৪১টি স্প্যান।
পদ্মা সেতুর প্রতিটি পিলারের নিচে ছয়টি করে পাইল বসানো হচ্ছে। সে হিসাবে সব মিলিয়ে পাইলের সংখ্যা ২৪০টি। ইস্পাতে তৈরি এসব পাইল মাটির নিচে ৯৬ থেকে ১২৮ মিটার পর্যন্ত গভীরে বসানো হচ্ছে।
চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এই পদ্মাসেতুর কাজ বাস্তবায়ন করছে। ২০১৪ সালের ১৮ জুন মূল সেতু নির্মাণের চুক্তি হয়। সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা।
দুই তলার এই পদ্মাসেতু যুক্ত করছে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টকে। সেতু হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। ইস্পাতের স্প্যানগুলোর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর ওপর দিয়ে চলবে সড়ক পথের যানবাহন।