বইমেলায় আসুন, বই কিনুন, দেখুন, ভাবুন, পড়ুন, আড্ডা দিন; অন্তত বইয়ের ঘ্রাণ নিন

নয়ন॥ ভাষার মাসের প্রথম দিন থেকেই বাংলা একাডেমি চত্বরে মাসব্যাপী বইমেলা শুরু হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী দেশের সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী এ বইমেলার উদ্বোধন করে থাকেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বইমেলা’ কিংবা ‘গ্রন্থমেলা’ শব্দ দুটি যেন বাঙালির প্রাণের স্পন্দে স্পন্দে রন্ধিত রয়েছে। ফেব্রুয়ারি আসলেই প্রতিটি বাঙালির নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে ধ্বনিত হয় এই বইমেলা। ‘বইমেলা’ শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাংলা একাডেমি আয়োজিত ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। BOI MELA
বইমেলা বইপ্রেমী মানুষের প্রাণে দোলা দেয়; জাতিসত্তার শক্তিবলে লাখ লাখ মানুষকে টেনে আনে একাডেমির প্রাঙ্গণে। আশপাশ ঘিরে জমে ওঠে লেখকদের জমজমাট আড্ডা; কাটে লেখক ও প্রকাশকদের নির্ঘুম রাত। প্রকাশিত হয় হাজার হাজার বই। নতুন বইয়ের মৌ মৌ গন্ধে মোহিত হয় মেলায় আসা পাটক ও দর্শনার্থীরা। কিন্তু আমরা হয়ত অনেকেই জানি না এই বইমেলার ইতিহাস। কিভাবে শুরু হলো এই বইমেলা? কে বাঙালির এই প্রাণের মেলার প্রারম্ভক? ই-বইয়ের এই যুগে এখনও বইমেলার কাগুজে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিতে শহর-গ্রাম, নগর-বন্দর, সমতল-পাহাড়ের লাখো প্রাণের ছুটে আসাই প্রমাণ করে বাংলাদেশের মানুষ সত্যিই বই অন্তঃপ্রাণ।
১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে একটি বিশাল জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। সে উপলক্ষে সাত-আটজন প্রকাশক একাডেমির ভেতরে পূর্ব দিকের দেয়াল ঘেঁষে বই সাজিয়ে বসে যান। সে বছরই প্রথম বাংলা একাডেমির বিক্রয়কেন্দ্রের বাইরে অন্য প্রকাশকদের বই বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়।
বছর ঘুরে বাঙালীর দুয়ারে আবার কড়া নেড়েছে প্রাণের বইমেলা। বইমেলা, বাঙালির প্রাণের মেলা, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যের মেলা। এবারের একুশে গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ৪ লাখ বর্গফুট জায়গায়।
প্রায় ৮০ হাজার বর্গফুট এলাকায় ইট ও বালু দিয়ে অস্থায়ী রাস্তা ও উন্মুক্ত প্রান্ত বানানো হয়েছে। এবারের মেলার ব্যবস্থাপনা সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আছে নিরাপদ মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি। মেলা এবার আরও বেশি নান্দনিক করে তোলার জন্য। কবি-সাহিত্যিক-মনীষীসহ বিশিষ্টজনদের নামাঙ্কিত প্রতিটি চত্বরেই আলাদা রঙের এলইডি বাতির সাহায্যে বর্ণিল রূপ দেওয়া হচ্ছে। চত্বরগুলোর স্বতন্ত্র রঙিন বাতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেসব চত্বরের অন্তর্ভুক্ত প্রকাশনা সংস্থাগুলোর স্টলসজ্জায়ও সেই বিশেষ রঙের প্রাধান্য দিয়ে সাজিয়েছে একাডেমি।
নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। মেলায় এবারও রয়েছে বিনামূল্যে ওয়াইফাই ইন্টারনেট সুবিধা। বইমেলায় প্রবেশের জন্য টিএসসি, দোয়েল চত্বর দিয়ে দুটো মূল প্রবেশপথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাহিরের ৬টি পথ রয়েছে।
বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.