মাননীয় সম্পদক,
আজ আরেকটু স্বাধীনতা চাই…
আপনার অসীম ধৈর্য্য তাই পানি উপচানোর মতো বাঁধ ভাঙ্গে না; কিন্তু আমরা তো সীমিত বুঝা-পড়ার মানুষ, তাই ধৈর্য্য হারিয়ে ফেললাম। একটা দুর্নীতি পরায়ন, অপরাধ-অপকর্মের ইন্ধনদাতা এমপি চোরের মায়ের বড় গলা’ ষ্টাইলে একের পর এক মামলা দায়ের করবে, নানামুখি হয়রানির পাঁয়তারা চালাবে, ব্যক্তি স্বার্থে ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে কথিত প্রতিবাদ সমাবেশ, মিছিল, কুশপুত্তলিকা দাহ করার মতো নগ্নতা দেখাবে, তবু কি আপনি আমাদেরকেই উল্টো ধৈর্য্য ধরতে বলবেন?
ওই এমপি পরিবারের সহায় সম্পদের বিস্তারিত তথ্য আমাদের হাতে, তুরস্কে কোটি কোটি টাকা পাচারের কাহিনীও আমাদের জানা হয়ে গেছে, ভারতের আসাম হলদিবাড়ী এলাকায় এক একর জায়গার উপর আভিজাত বাগানবাড়ী, স্ত্রীর নামে ভারতীয় রেশন কার্ডসহ কত সব গোপন তথ্য আমাদের হাতে… সেসব শুনে আপনি এখনো কী বলবেন; সব তথ্য ছাপা যায় না, ছাপতে হয় না। আমরা এখন তথ্যবহুল কিছু ছাপলেও অন্যরা এটা আক্রোশমূলক সংবাদ মনে করবে।’
বিশ্বাস করুন, আমাদের লাখো পাঠক, শুভানুধ্যায়ীরা আমাদেরকে বিশ্বাস করে প্রতিদিনই পত্রিকার সাক্যুলেশন কিছু না কিচু বাড়ে এটা সে আস্থারই প্রতিফলন। পাঠক সমাজ জানে আমরা মিথ্যা কোনো কিছু প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করি না। আপনার সম্পর্কেও পাঠক সমাজের স্পষ্ট ধারনা আছে। সম্মানীত সম্পাদক, আপনি যখন কোনো টিভি চ্যানেলের টকশো’তে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন তখন রাজধানীর অলিগলি, পাড়ায় হোটেল রেস্তোরায় চলতে থাকা টিভি’র দর্শকরা পর্যন্ত সমস্বরে “হৈ’ হৈ করে উঠে। তারা বিশ্বাস করে- এবার তাদের মনের কথাটাই আপনার কন্ঠে শুনতে পাবে। আপনিও লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে অপলক নেত্রেই একের পর এক ঠোটকাটা কট্টর সত্যগুলো বলতে থাকেন অবলীলায়। তাই আপনার নেতৃত্বে লালমনিরহাটের শীর্ষ দুনীতিবাজ- লুটেরার মুখোশ উন্মোচনের প্রতিবেদনগুচ্ছকে স্বাগত জানাতেই উন্মুখ আছেন পাঠকসমাজ।
পিতৃতুল্য সম্পাদক, আপনি তো জানেন- আমরা লালমনিরহাটে মোতাহার সা¤্রাজ্য সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ছাপা হওয়াতেই ওই জেলায় ২০০ টাকা দরে পত্রিকা কেনাবেচার ঘটনা ঘটেছে। আপনার তো আজানা নেই, মোহাহারচক্র বিশাল সমাবেশ ঘটিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা সত্তেও সেখানে আমাদের পত্রিকার সার্কুলেশন আরো দ্বিগুণ হয়েছে। সর্বসাধারণ মোতাহারের অসততা, দুর্নীতি, অপরাদ আর মিথ্যার সামাজ্যকে প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে গ্রহণ করেছে।
মাননীয় সম্পাদক, আপনার প্রতি আন্তরের সবটুকু শ্রদ্ধা জানিয়ে বিনয়ের সঙ্গেই বলছি; দুষ্ট লোককে শায়েস্তা করতে আমাদেরকে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ এমপি পরিবারের অসম তথ্যাদি প্রকাশ করার স্বাধীনতাটুকু অন্তত দিন। তা না হলে গণমাধ্যমের কন্ঠরোধে উৎসাহীরা আরো বেশী আঙ্কারা পেয়ে যাবে। তারা অন্য পত্রিকা, অন্যান্য সাংবাদিক বন্ধুদেরও টুটি চেপে ধরার দু:সাহস পাবে। আপনাকে অদ্বিতীয় অভিবাবক মেনেই বলছি আপনি তো আমাদেরকে খাল-নদীর দখবজাজ, সরকারি সম্পদ লুটেরা, মাদক ব্যবসায়ীর গডফাদার, চাঁদাবাজ, ভেজাল খাদ্যপণ্য বাজারজাতকারী, সেবা সংস্থাগুলোর গাফিলতির বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় আক্রমণের আগাম স্বাধীনতা দিযে রেখেছেন- তাহলে ঘোষিত এ দুর্নীতিবাজ কেন আমাদের কলমের ঘা থেকে রেহাই পাবে? আপনি তো ভোলার কান্না শীর্ষক সিরিজে আপনার সহপাঠী বন্ধুর বিরুদ্ধে দেয়া প্রতিবেদনটি লীড হিসেবে ছাপাতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি, সত্য তথ্যে নিজ এলাকার দুর্ণাম ছড়াতে পারে আপনাকে সে বিষয়ও বিন্দুমাত্র পাত্তা দিতে দেখিনি। তাহলে মোতাহারচক্রও আপনার সাহসের গন্ডি থেকে ছাড় পাবে বলে আমি বিশ্বাস করতে চাই না।
মাননীয় অভিভাবক, সম্পাদক হিসেবে রাষ্ট্রে আপনি কতটুকু স্বাধীনতা পান তা আমার জানা নেই- কিন্তু রিপোর্টিং ক্ষেত্রে আপনি আমাদের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন, আজ অব্দি কোন রিপোর্টের ব্যাপারে অন্যের অযাচিত হস্তক্ষেপ আমি পাইনি। আজ আরেকটু স্বাধীনতা পাওয়ার প্রার্থনা করছি- মোতাহার ষ্টাইলের সা¤্রাজ্যগুলো ধ্বসিয়ে দেয়ার মতো স্বাধীনতা দিন। দেশ-সমাজের ক্ষতিকারক প্রাণীগুলো লুটপাটের মাধ্যমে যে সহায়-সম্পদ আর তথাকথিত মানসম্মান গড়ে তুলেছে- তাদেরকে সেই সহায়- সম্পদ আর মানহীন করার অনুমতিটুকু দিন মান্যবর সম্পাদক।