এই মাসের দুই ভালবাসার বন্ধন যেন আগামীর শত কষ্টেও অটুট থাকে এই প্রত্যয় নিয়েই আজকের সম্পাদকীয় লিখা। বাংলাদেশের মানুষ ফালগুনকে বরণ করেছে বহু রঙ্গে রাঙ্গিয়ে এবং বহু আকাঙ্খা ও প্রতিক্ষার প্রখর গুণে। আজ আমাদের এই ফেব্রুয়ারী মাসে কতরকম দিবস উদযাপিত হলো যা আমাদেরকে অতীতের সকল গ্লানী ভুলে নতুনের আহবানে আরো কঠিনকে বরণ করে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রাত্যয়ে শক্তি যোগায়।
এই ফালগুনেই ভাষার মাস এবং এই মাসের তাৎপর্য নিয়েই বাঙ্গালী জাতি এগিয়ে যাচ্ছে আগামীর নতুন এক শান্তির ও নিশ্চয়তার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার রঙ্গিন স্বপ্ন নিয়ে। এই মাসের এই সপ্তাহেই পালিত হলো বিশ্ব বেতার দিবস, ভালবাসা দিবস, পহেলা ফালগুন এবং এই সপ্তাহেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল কানাডা। সবই যেন আশার দোলনচলে এক নতুনের কেতন উড়ানো ফানুস হিসেবে চোখের সামনে ভেসে উঠা এক মহামিলন মাত্র। আমাদের দেশের মানুষ আশাবাদি এবং আবেগী ও কঠিন বাস্তবতায় দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যাওয়ায় পারদর্শী। তাই নতুনের প্রয়োজনে পুরাতন জড়াকে ছুড়ে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ এবং যাবে আগামীর প্রয়োজনে।
এই মাসেই ন্যায় বিচারের মাধ্যমে সৃষ্টি হলো সাম্যের জয়জয়াকার। কিন্তু কারো কারো কাছে এই বিচার মেনে না নেয়ার কারণ তারা অন্যায় ও অন্যায়কারীকে পছন্দ করে এবং নিজেরা অন্যায়ের সঙ্গে যুক্ত থাকতে ভালবাসে। অন্যায়ের সঙ্গে যুক্ত থেকেই নতুন নতুন বচন বা বানী আওড়ানো এক ধরণের জ্ঞান পাপীর মহড়া মাত্র। চোখে ধাধা এবং মননে ও চিন্তায় ছেদ ঘটানোই ঐ বুদ্ধিবেশ্যাদের একটি অন্যতম প্রধান কাজ। তারা কখনোই এক বাক্যে বা নীতিতে ঠিক থাকেনা বরং ক্ষণে ক্ষণেই তাদের বানীর এবং চিন্তার পরিবর্তন ঘটে। আজকের দেখানো পথে আগামীকাল যেন তারা কিছুই জানেন না বুঝেন না এমন ভাব ধরেন। তারা এও বোঝাতে চান ঐ পুর্বের বানী বা কথাগুলি তাদের ছিলনা। আজকের কথাগুলিই শুধু তাদের। শুতরাং আজকের; আর প্রতিদিনই আজকে আসে আমাদের সামনে। তাদের সেই নুতন নতুন আজকের বানী যেনো আমাদের জীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে। তবে আশার কথা হলো ঐ নি:র্বোধ মানুষগুলো যেন জীবনের শেষ লগ্নে এসে একটি কঠিন ধাক্কা খেল যা তারা পিছনে ফিরে তাকিয়ে হিসাব মিলাতে সহায়তা করবে এবং নতুন দিনের জন্য নতুন যুগের চাহিদানুযায়ী কিছু একটা করতে আগ্রহী হবে। পুরানো ঘুণেধরা ব্যবস্থা এবং সেই ব্যবস্থার আলোকে পথ চলার সবকিছুই এখন অতিত হিসেবে ভুলে যেতে চেষ্টা করবে।
এই মানুষগুলো কেমন তা জানা ও বাঝা যায় এই দুই শ্রেণীর মানুষকে প্রত্যক্ষা করলেই। আমি আমার অফিসের সহকর্মীদ্বয়কে দীর্ঘ ১৭ বছর যাবত চেষ্টা করেও বোঝাতে পারলাম না বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে। তারা এখনও সেই পাকিপ্রীতিতে মহিয়ান। বর্তমানে তাদের পরিচয় বিএনপির কট্টর সমর্থক। তাই তারা বিএনপির সকল কাজকেই ভালো এবং আওয়ামী লীগের সকল কাজকে মন্দ চোখে দেখে। তাদের চোখে কোটা পড়ে গেছে এবং বিবেক ও হৃদয় অসাঢ় হয়ে পড়েছে তাই তারা এখন ভালকে ভাল এবং মন্দকে মন্দ বলার জ্ঞানার্জন করতে পারেনি। মানুষ হিসেবে তাদেরকে আমি অপছন্দ করি না বরং ভালবাসী শুধু তাদের আওয়ামী বিরোধী অত্যাচার আর মানতে পারি না। সদ্য আমি আমার অফিসে প্রধানমন্ত্রী এবং জাতির পিতার ছবি টাঙ্গানোর লক্ষ্যে তাদেরকে পর্যায়ক্রমে বলি ছবি কিনে আনতে। কিন্তু একজন বিভিন্ন টালবাহানায় সময় ক্ষেপন করতে ছিল। তখন আমি আরেকজনকে বলি দুটি ছবি কিনে আনতে কিন্তু তিনি এই ১৭বছরের জীবনে প্রথম আমাকে না করল এবং বলল ফেরাউন এবং ফেরাউনের মেয়ের ছবি ওনি আনতে পারবে না। তখন আমি একটু রাগ করে মামলা করার চিন্তা করি; কিন্তু পরক্ষণেই তাদের অজ্ঞানতাকে ক্ষমা করি এবং নিজেই পছন্দ করে ছবি কিনে আনি। কথা হলো শুধু এরাই নয় এদের মত হাজারো পাকি দোসর এখনো বাংলাদেশে বসবাস করছে এবং সকল সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছে কিন্তু চেতনায় পাকি এবং বিরোধীতায় স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির সকল কর্মকান্ডকে। সুতরাং পরিবর্তনের লক্ষে কাজ করতে করতে এখন ক্লান্ত ঐ সকল মানুষদের জন্য। এখানেই বোঝা যায় কেন এখনো আমাদের স্বাধীনতার বিরোধী শক্তির দোসড় এবং আধার টিকে আছে। আছে শুধু তাদেরই জন্য।
ফালগুনের প্রখরতা যেন বিশ্ব ভালবাসায় পরিণত হয়ে বি এন পির আন্দোলন স্থীমিত হয়েছে। তাদের মনের কোণে জমানো কালো মেঘ সরে গিয়ে আগামীর জন্য প্রয়োজনীয় ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করতে মাত্র। বিশ্ব দরবারে যে ভাবমুর্তি নষ্ট হয়েছে তা ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় লিপ্ত থেকে গঠনমূলক ও বাস্তবতার নিরীখে পথ চলতে অভ্যস্থ্য হতে হবে। নতুবা নিজের বা দলের যে অবশিষ্টাংশটুকু রয়েছে তাও বিসর্জিত হয়ে অন্ধকারে হাতড়িয়ে মড়তে হবে। কারণ এখন আর নতুন করে কিছু বলার এবং করার নেই। যা হবার তা আইনের মাধ্যমেই হবে। মুখের মিথ্যা বুলি এবং মিথ্যা আওয়াজের দিন শেষ; এই ক্ষণেই নিজেদেরকে শুধরিয়ে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে আগামীর কল্যাণের তরে। তবেই জনগণ ভাবতে বা চিন্তা করতে শুরু করবে কখন ও কিভাবে এই পচনধরা নিমজ্জ্বিত দলটিকে আবারো জাতির সেবায় নিয়োজিত করা যায়। সামনে অনেক সময় পড়ে আছে সুতরাং তারাহুড়া বা তড়িঘড়ি করে কোন লাভ নেই। ধৈয্য এবং ইতিবাচক জ্ঞানভিত্তিক জনকল্যাণমূলক কাজই একমাত্র পথ। এর বিকল্প কিছু আর নেই। যদি কোন বিকল্পে যাওয়ার চিন্তা বা পরিকল্পনা করা হয় তা হিতে বিপরীত হবেই এবং ধ্বংস অনিবায্য। তাই সময় থাকতে পরিবর্তনের অঙ্গিকার নিয়ে এগিয়ে আসুন এবং নিজেদেরকে শুধরানোর চর্চা শুরু করুন।
দেশের উন্নয়নের তরে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়ে আপনি নিজেকে করতে পারেন এক মহান অথবা মহীয়সী। আর এই কাজটুকু জেলে বা ঘরে এবং সমাজে ও কর্মক্ষেত্রে এমনকি সব জায়গায় করা সম্ভব। যদি আপনার ইচ্ছা থাকে এবং সেই অনুযায়ী চর্চা করেন তাহলে খোদা তায়ালা আপনাকে বরকত দিবেন ও কামিয়াবী করে তুলবেন। আসুন আমরা এই কামিয়াবী হওয়ার প্রত্যয় নিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যায়। তবে গুটি কতেক মানুষ চায় ক্ষমতা এবং ক্ষমতার ব্যবহার। কিন্তু এই সবই আপনি পাবেন যদি আপনি সঠিক মন ও চিন্তা এবং জনকল্যাণের তরে কাজ করে যান। রিওয়ার্ড বলে একটি কথা আছে আর এই রিওয়ার্ড পাওয়া যায় সৃষ্টি কর্তার কাছ থেকে। সুতরাং তিনি চাইলে এবং আপনি চেষ্টা করে এগিয়ে গেলে ঐ রিওয়ার্ড যা আপনি চাইবেন অথবা কল্পনাও করতে পারেননি… তা পাবেন। চেষ্টা করে যান খোলামন নিয়ে নিজের নয় অন্যের উপকারের লক্ষ্যে।
রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে অনেকেই কথা বলেন এবং বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা বলেন এবং বলছেন কিন্তু কাজের কাজ কি হয়েছে? না হয়নি যা ছিল তাই রয়েছে তবে বিভিন্ন অজুহাত ও তালবাহানা চলছে। বাংলাদেশ উদার মনের পরিচয় দিয়ে রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করেছে। এটা এক দৃষ্টান্ত ও মহান খোদার মহানুভবতার পরিচায়ক। যারা এখনো বুঝতে পারেনি এই সত্যটি তাদেরকে বলছি যে, খোদার ইচ্ছা কি এবং তিনি কি চান তা বুঝতে ও জানতে চেষ্টা করুন। খোদা আপনাকে সেই পথ দেখাবে। তবে বাহ্যিক দৃষ্টিতে শেখ হাসিনার মাধ্যমে খোদা তায়ালা কিন্তু দেখিয়েছে এবং দেখিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কি আমরা কোন শিক্ষা নিচ্ছি? না নেইনি। এটাই আমাদের বড় দৈন্যতা। তবে এইটুকু বলতে পারি যে, এই সমস্যার সমাধান হবে এবং তা হবে দ্রুতই। শেখ হাসিনা এবং মায়ানমার সরকার উভয়েই মিলে সমাধান করে বিশ্বাবাসীকে পরমত সহিষ্ণুতার আরেকটি দৃষ্টান্ত এবং শান্তির নিশ্চয়তা ও স্থিতিশীলতার পথ উন্মোচন করবেন। আগামী দিনে বাংলাদেশ পৃথিবীকে সার্বিক দিকে পথ দেখাবে। আমি পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি এই রোডম্যাপ এবং এর বাস্তবায়ন। নিজেকে খুব গর্বীত মনে হয় বাংলাদেশের একজন উন্নয়নকামী মানুষ হিসেবে।
আগামীর নির্বাচনী ভাবনা কিন্তু অহেতুক একটি মূল্যবান সময় নষ্ট করার উপকরণ মাত্র। আমাদের অনেক কাজ তাই আসুন কাজে মনযোগী হই। নির্বাচন একটি ছকবাধা নিয়ম। আর এই নিয়মের সঙ্গে তাল মিলানোই আমাদের কাজ যা ৭২ পরবর্তী সময় থেকেই করে আসছি। তবে বর্তমানের নির্বাচন একটু ভিন্ন এবং তাৎপর্যবাহী। তাই এই নির্বাচনে নিজেকে সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত করুন। অহেতুক ফেতনা ও ফ্যাসাদে না জড়িয়ে নিজের কর্মকে নিয়ে এগিয়ে যান। দুর্নীতি, নৈরাজ্য, হত্যা ও ক্যু এমনকি ষড়যন্ত্রকারীদের ক্ষমতাসীন করব না উন্নয়নকামী চলমান ধারাবাহিকতা রক্ষায় নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখব। যেটি আমাদের জীবনের জন্য উত্তম তা বেঁছে নিতে মহান খোদা তায়ালা যেন আমাদেরকে সুযোগ করে দেন এই কামনাই করি। ফালুগুনের উষœতায় যেন বিলীন না হয় আমাদের বিশ্ব ভালবাসার মহাত্ত¥। আমরা সকল উষ্ণতায় শান্তির পরশ ফিরিয়ে আনতে বিশ্ব ভালবাসার তাৎপর্যকে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যাব। বাংলাদেশের উন্নয়ন কান্ডারী মহাথীরের ন্যায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাক আগামীর জন্য; আর ন্যায় বিচার ও শাষনের দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের লিক্যুয়াম (যিনি ছিলেন সিঙ্গাপুরের উন্নয়ন দ্রষ্টা) মতো করে এগিয়ে নিয়ে যাক। আমাদের ঢাকা শহরের চেয়েও ছোট দেশ সিঙ্গাপুর যা পৃথিবীতে উন্নত দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু বাংলাদেশ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সেই ধাপ অতিক্রম করবে এবং বিশ্বকে দেখাবে শান্তির, উন্নয়নের এবং স্থিতিশীলতার ও সর্বোপরি সৃষ্টিকর্তার ভালবাসার বাস্তবরূপ দৃষ্টান্তকে।
ফাগুনের মোহনায়, বিশ্ব ভালবাসার আবেশে মার্তৃভাষা দিবসের তাৎপর্যে আমাদের আগামী হউক অমলিন এবং প্রশান্তির। আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মানে আপনি, আমি ও আমরা এগিয়ে আসি এই ফাল্গুনি মোহনার আবেশে ভালবাসা মিশ্রিত মাতৃভাষার সংমিশ্রনে। মিলিত হই দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাওয়া উন্নয়ন সমারোহে। প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই বর্তমানের ইতিবাচকতা এবং অগ্রগামিতায় দেখানো সকল ¯্রােতের ¯্রােতষীনির মিলনমেলায়।