বাআ॥ দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের বিচার হতেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গত মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় ইতালির রোমে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সফরকালীন আবাসস্থল পার্ক দ্যি প্রিনসিপি গ্র্যান্ড হোটেলে এ সংবর্ধনা আয়োজন করে ইতালি আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি যারা করবে, সন্ত্রাস যারা করবে, জঙ্গীবাদের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচার হতেই হবে। কারণ বাংলাদেশটাকে আমরা একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আমরা আনতে চাই। বাংলাদেশের উন্নয়ন চাই।
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক জিয়া ও কোকো রহমানসহ দলটির নেতাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার আমলে বাংলাদেশ ৫ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। খালেদা জিয়া একজন প্রধানমন্ত্রী হয়েও কালো টাকা সাদা করেছে। এ টাকা কোথা থেকে এলো। বিএনপি ক্ষমতায় থেকে দেশকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করে বলেও মন্তব্য করে শেখ হাসিনা।
বিগত সময়ে বিএনপির নির্বাচন ঠেকানো ও সরকার বিরোধী আন্দোলনের সহিংসতায় তিনি হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বিএনপি ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, জঙ্গীবাদ সৃষ্টি, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে হত্যা চেষ্টা করেছে বলেও অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা।
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এতিমের টাকা নিজের কাছে কুক্ষিগত করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, টাকাটা বিদেশ থেকে এসেছিলো এতিমদের জন্য, সে টাকা এতিমদের কাছে যায়নি, তাদের ব্যক্তিগত তহবিলে চলে গিয়েছিলো। টাকাটা কোন এতিমের কাছে গেছে? হ্যাঁ যদি খালেদা জিয়া বলতো আমার দুই ছেলে এতিম তার জন্য রেখেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার প্রশ্ন আজকে যারা বিএনপি দরদি, আমাদের আঁতেলরাও আছে তারা বলে দুই কোটি টাকার জন্য কেন এত মামলা। তাহলে দুর্নীতি করার জন্য একটা সিলিং থাকবে যে এত কোটি পর্যন্ত দুর্নীতি করা জায়েজ। তারা কি সেটা বলতে চায়।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি তাহলে একটা দাবি করুক যে এত কোটি পর্যন্ত তারা দুর্নীতি করতে পারবে। দেখি সেটা দিয়ে একটা রিট করুক। বিশেষ কেউ দুর্নীতি করলে তা কি অপরাধ নয়? প্রশ্ন করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী নিজের সর্ম্পকে বলেন, দুর্নীতি করতে আসিনি, বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য গড়তে এসেছি। নিজেদের ভাগ্য না। সাজা পাওয়া দুর্নীতি মামলাটির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যে মামলায় খালেদা জিয়ার শাস্তি হয়েছে সে মামলা কে দিয়েছে। খালেদা জিয়ার প্রিয় ব্যক্তিরা। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর ৯ জন জেনারেলকে ডিঙিয়ে জেনারেল মঈনকে সেনাপ্রধান করেছিলো। বিশ্ব ব্যাংকে চাকুরি করতো ফখরুদ্দিন সাহেব তাকে নিয়ে এসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর করেছিলো। তাদের দলীয় লোক ইয়াজ উদ্দিন সাহেবকে বানালো রাষ্ট্রপতি। ফখরুদ্দিন, মঈন উদ্দিন, ইয়াজ উদ্দিন তারাইতো তার বিরুদ্ধে মামলা দিলো। মামলাতো আওয়ামী লীগ দেয়নি।
জিয়াউর রহমান অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখল করে মানুষের ভোটের অধিকার চুরি করেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ তার ভোটের অধিকার হারিয়েছিলো। জিয়াউর রহমানের শাসন আমলে দুর্নীতি, ধনিক শ্রেণি সৃষ্টির পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন অগ্রযাত্রা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। উন্নয়ন হয়েছে কাদের? এই অবৈধ ক্ষমতা দখলে রাখার জন্য, ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করার জন্য একাধারে যেমন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে যাওয়া, অত্যাচার, নির্যাতন, কারাগারে নিক্ষেপ গুম করা হয়।
যারা বলেন জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছে তাদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়ার যারা অনুসারী তারা অনেক সময় বলে জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছে। জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়, রাজনীতিতে তাদের প্রতিষ্ঠিত করে। যাদের রাজনীতি করা নিষিদ্ধ ছিলো।
অনুষ্ঠানে অর্থনমন্ত্রী, কৃষি মন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ইতালিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতসহ ইতালি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল