লাকী॥ এক বাচ্চা তার মা কে প্রশ্ন করল, তার বাবা কেন তাকে ছেড়ে চলে গেল ? মা খানিকক্ষণ ভাবল। খুব সাবধানে দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে সিধান্ত নিল সত্যিটাই বলবে, তারপর ধীরে ধীরে বলতে শুরু করল, শোন, পৃথিবীতে যখনই কোন বাচ্চা জন্মায় তখন বাবা মা এর জন্য একটা ভারী বাক্স নিয়ে জন্মায়। কোন কোন বাবা মা এই ভারী বাক্সটার ভার বহন করতে পারে না। তখন পালিয়ে যায় । তোমার বাবাও এই বাক্সের ভার বহন করতে না পেরে পালিয়ে গেছে।
ছেলে জানতে চাইল, মা বাক্সতে কি থাকে ? মা উত্তর দিল দায়িত্ব, কর্তব্য, আর দায়বদ্ধতা। তোমার বাবা তোমাকে ছেড়ে যায়নি, শুধু বাক্সটা নেবার ক্ষমতা তার ছিল না ।
পরের অধ্যায়টা খুব সংক্ষিপ্ত। ছেলেটা বড় হয়েছে আর ধীরে ধীরে বুঝেছে তার মা তাকে কষ্ট দিতে চায়নি তাই নিজের কষ্ট লুকিয়ে সন্তানের বাক্সটা আগলে রেখেছে। নতুন যে কোন সম্পর্কের শুরুতে, একটা অদৃশ্য বাক্সের দায়ও নিতে হয়। হোক সে বন্ধুত্বের, আত্মীয়তায়, প্রেমে কিংবা বিয়ে। সম্পর্কের জীবনী শক্তিই এই বাক্স।
মেয়েটি জখন ছেলেটার হাত ধরে তখন তাদের মধ্যে সেই বাক্সটারও আদান প্রদান হয়। যেখানে দায় থাকে, বিশ্বাস থাকে, শ্রদ্ধা থাকে, যতœ থাকে, থাকে কমিটমেন্ট। এই বাক্সটাকে ফেলে দিয়ে যা থাকে সেটা সম্পর্ক না, সম্পর্কের চকমকা খোলস। অবশ্য খোলসটা ভাঙতে সময় লাগে না। ভালবেসেছিল বলে ঘৃণাটুকু করতে পারেনি তাই স্মৃতির আবর্জনা ঢাকতে সারা জীবন বলে বেড়ায়, সে ছেড়ে যায়নি, শুধু বাক্সটা নেবার ক্ষমতা তার ছিল না।
খুব অদ্ভুত হলেও সত্যি এই বক্সের দায় আমাদের সমাজে মেয়েরাই বেশি নেয়। বৌ সকালে কি খেল সেটা জিগ্যেস করার কথা ভুলে যাওয়া স্বামীর জন্য স্ত্রীটি নাস্তা বানাতে ভোলে না, মেয়েরা স্বামীর কাছে শাড়িটা কেমন হল জানতে চায় শুধু এটা ভেবে স্বামীর চোখে তাকে এই শাড়িতে আকর্ষণীয় লাগবে কিনা সেটা নিশ্চিত হবার জন্য, অথচ স্বামী তার শার্টের কালার চিন্তা করে অফিসে তার ইম্প্রেশন কি হবে সেটা ভেবে। স্বামী কি মনে করবে এই ভেবে ছেলে বন্ধুদের সাথে সামান্য আলাপটুকুও বন্ধ করে দেয়, যেখানে স্বামীর বন্ধু সংখ্যা নানা সার্কেলে বাড়তেই থাকে।
মেয়েরা সারা জীবন তার বাক্সটা চকচকে ঝাকঝকে রাখে এই আশায়, স্বামীর কাছে পরে থাকা তার বাক্সটা কোন দিন ঝেড়ে পুছে, ঝকঝকে করার সময় হবে তার স্বামীর, আর সে দিন তার অভিমানের বরফ গলে সুখের বর্ষা নামবে। (ক্যামেলিয়া) সংগৃহীত