অবিশ্বাস থেকে বিদ্রোহ…তার থেকে বিপ্লব

abiswas from fight arifulশামসুল আরেফিন খান॥ অবিশ্বাস থেকে বিদ্রোহ তার থেকে বিপ্লব। বিভাজন রেখা এত গভীর যে তা কলঙ্কের মত অনপনেয়। কোন উপায় নেই মুছে ফেলার। এই বিভাজনের উৎসে রয়েছে মানুষের বিশ্বাস । সেটা সত্যোপলব্ধি না হয়ে অন্ধবিশ্বাসও হতে পারে। অন্ধ বিশ্বাসের অপর নাম আনুগত্য। অন্ধ বিশ্বাস না থাকলে আনুগত্য টলে যায়। পৃথিবীতে এখন উৎপন্ন সমস্ত সম্পদের ৮০ ভাগই কেবল+একভাগ মানুষের কুক্ষিগত হয়েছে। এটা অনুমান নয়, পরিসংখ্যান। এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র ভাগ্যাহত মানুষ যদি অন্ধবিশ্বাসচ্যুত হয়, অবাধ্য হয়ে ওঠে তা হলে বিশ্বের স্থিতাবস্থার পরিণতি কী হতে পারে তাও চিন্তার বা অনুমানের অগম্য নয়।
ফেরাউন যুগের ক্রিতদাশ ২০ ঘন্টা অমানুষিক শ্রম দিয়ে ভাবতো এটাই তার নিয়তি। ভাগ্যের লিখন বা তকদির। তকদিরের বিরুদ্ধে প্রথম তদবির শুরু হ’ল মুসা নবীর আগমনে। তারা বিদ্রোহী হয়ে দেশত্যাগী হ’ল। এখন তারাই অলক্ষ্যে বিশ্ববাসীর প্রধান ভাগ্যবিধাতা। ফেরাউন নিজেকে ইশ্বরের জাগায় বসিয়ে বেশুমার শোষণ চালাতো। মানুষ একসময় বিশ্বাস করতো, রোম সম্রাটই হলেন ঈশ্বর। এমনটা বিশ্বাস করাটায় ছিল বাধ্যবাধকতা। অনুগত নতজানু প্রজাকূল বিশ্বাস করতো সম্রাটের আদেশই বিধাতার হুকুম। ঈসা নবী মানুষের সে বিশ্বাস টলিয়ে দিলেন। তার পর শহস্রাব্দ ধরে ইনকুইজিশন যুগে, ধরে বেঁধে নব্য শোষকরা খড়্গ উঁচিয়ে, মানুষকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে, আগুনে পুড়িয়ে, জোর জবরদস্তি ঈসা নবীর কথা বিশ্বাস করাবার নির্মম প্রয়াস চালালো । ঈসা নবীর কথার অন্তরালে ছিল চার্চ ও চার্চের অনুগত রাজার প্রতি মানুষকে অন্ধ আনুগত্যে বেঁধে রাখার নিরন্তর চেষ্টা। বিপরীত প্রক্রিয়াও যে বিজ্ঞানের নিয়মে সমান্তরাল ছিল, সেকথা বলাই বাহুল্য। দার্শনিক ভলতেয়ার, রুশো ,মন্তেস্কু নতজানু অনুগত মানুষের মনে অবিশ্বাসও অবাধ্যতার আগুন জ্বালিয়ে দিলেন। বাস্তিল দূর্গের পতন হ’ল। তার পরেও অনুগতরা নেপোলিয়নের হাত ধরে ক্ষমতায় ফিরে আসলো। ফরাসী বোদ্ধাদের অনেকে বলে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রাম ফরাসিদের অনুপ্রাণিত করেছিল। মার্কিন বোদ্ধারা বলেছেন ফরাসিরা এক বিপ্লবে ক্রিতদাস মুক্তি ঘটিয়েছে। আর মার্কিনিরা সেটা করেছে শতবর্ষ পরে।
অবিশ্বাস থেকে বিদ্রোহ তার থেকে বিপ্লব্! চীন রাশিয়া, ভিয়েৎনাম লাওস কোরিয়াতেও তার ব্যতিক্রম কিছু হয়নি। কার্লমার্কস অন্ধ বিশ্বাসকে আফিমের নেশার সাথে তুলনা করে মানুষকে জাগিয়ে তুললেন। লেনিন, মাও, হোচিমিন অন্ধ বিশ্বাস ছাড়িয়ে বিদ্রোহের পতাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে মানুষকে বিপ্লবের বিজয় শিখরে পৌঁছে দিলেন। মহাত্মা গান্ধী, কামাল আতাতুর্ক, গামাল আব্দুন নাসের, সুকার্নো, শেখ মুজিব “বলো বীর বলো চির উন্নত মম শির “ মন্ত্রে উজ্জীবিত করলেন স্ব স্ব জনগণকে। বিদ্রোহ করতে শিখালেন। অন্ধ বিশ্বাস ছেড়ে আলোর পথে হাঁটতে শিখালেন। শোষণের বদ্ধভুমি থেকে উঠিয়ে এনে স্বাধীনতার স্বর্র্ণশিখরে দাড় করিয়ে দিলেন।
কিন্তু এখন পন্ডিতরা বলছেন, পৃথিবীর সব বিপ্লব নাকি ছিল সংখ্যালঘু মানুষের বিপ্লব। বিপ্লবীরা ছিল সংখ্যালঘু। তার মানে পরাজিতরা ছিল সংখ্যা গুরু। সে কারণে বিপ্লব জিতেও চূড়ান্ত বিচারে হেরেছে। তার দৃষ্টান্ত ফরাসি বিপ্লব। তার নজীর খোদ রুশ বিপ্লব।

চলমান

Leave a Reply

Your email address will not be published.