আমাদের প্রাণের প্রীয় ভাষা বাংলা। এই ভাষায় কথা বলি, লিখি ও পথ চলি। তবে দেশের গন্ডি পেরিয়ে গেলে ভাষার অভাব ও ভাষার সঙ্গে নাড়ির যে টান তা উপলব্দি করতে পারি আমরা অনেকেই। ভাষা নিয়ে পন্ডিতের পান্ডিত্ব দেখেছি, কবির কবিতা পড়েছি, গল্প ও ছড়া শুনেছি কিন্তু উন্নয়নে ভাষার জোয়ার এবারই দেখলাম, বুঝলাম ও অনুধাবন করলাম। একটি জাতির উন্নতি ঘটাতে হলে অবশ্যই তাঁর মার্তৃভাষার উন্নতি সাধন করতে হবে। নচেৎ জাতির সার্বিক উন্নতি তরান্বিত হবে না।
আশ্রীত রোহিঙ্গাদের উন্নতির জন্যও ভাষার বহুবিধ ব্যবহার প্রয়োজন। তাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে তাদের বার্মিজ ভাষা এবং ইংরেজি ভাষাতে লেখাপড়া শেখানো হচ্ছে। যাতে তারা ফিরে গিয়ে তাদের ব্যক্তি, পারিবারিক এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নতি সাধন করতে পারে। তদ্রুপ আমাদের ভাষার বহুবিধ প্রচলের ফলে এখন মানুষ শিক্ষায় যেমন শিক্ষিত হচ্ছে তেমনি পৃথিবীকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে পেরেছে। এই কারণে এখন প্রায়শই দেখা যায় উন্নয়নের জোয়ার, নির্বাচনের ট্রেন, মহা পরিকল্পনার উন্নয়ন রোডম্যাপ এইসব বহুবিধ প্রচলন। এই ভাষাগত দক্ষতা এবং পৃথিবীর কঠিন ও কঠোর বাস্তবতাকে নিজের আয়ত্বে সহজে নিয়ে আসা হচ্ছে, তা কিন্তু ভাষার গুণগত উৎকর্ষ সাধনের নিমিত্ত্বেই হচ্ছে। ভাষার প্রতি উদাসীনতা এবং ভাষাবিমুখতা জাতিকে নিরক্ষরই করে না বরং সার্বিক উন্নয়ন ও উন্নতি থেকেও বঞ্চিত করে থাকে।
দুর্নীতির সুচক থেকে বাংলাদেশ এখন সুনামের সঙ্গে অগ্রসর হচ্ছে যা প্রশসংসার দাবি রাখে। এখানেও ভাষার বহুল প্রচলন এবং নিজের অবস্থান ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতারই কর্মফল মাত্র। ভাষার চর্চা যত বেশী হবে ততই মঙ্গল হবে এই সমাজের তথা দেশের। আঞ্চলিক ভাষা থাকবে এবং এর ব্যবহারও হবে কিন্তু সার্বিক ভাবে মায়ের ভাষা বাংলাকে শুদ্ধভাবেই ব্যবহার করে এগিয়ে যেতে হবে। শিকড়কে ভুলে গিয়ে নতুন সভ্যতা বা সমাজ সৃষ্টি করা যাবে না বরং ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছা যাবে।
আমাদের এই প্রীয় ভাষাকে বিসর্জন দিয়ে নতুন এক যাত্রা শুরু করেছে এই সংস্কৃতিতে যার পরিণাম ভয়াবহ। এই নব সংস্কৃতিকে থামিয়ে দেয়ার সময় এখনই। আমার আপনার সকলেরই দায়িত্ব এই বাংলিশ সংস্কৃতির বিকাশ রোধ করা। যদি আমরা আমাদের স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করতে না পারি তাহলে আমাদের উন্নয়ন যাত্রা থেমে যেতে সময় লাগবে না। কারন এই নব সংস্কৃতির ধারক ও বাহকরা ইতিহাস এবং কালচারকে (সংস্কৃতিকে) পাশ কাঠিয়ে যাচ্ছে। তাই তাদেরকে ইতিহাসও ক্ষমা করবে না। যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল এবং যারা ভাষাকে বহিবিশ্বে পরিচিত করতে প্রচেষ্টা চালিয়েছিল সেই শ্রদ্ধেয়জনদের দেখানো পথেই আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। আর তখনই আমরা সফল হবো। বাংলা ভাষা আজ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্মানের সহিত স্থান দখল করে নিয়েছে এবং কিছু কিছু জায়গায় অফিসিয়াল ভাষা হিসেবেও স্থান করে নিয়েছে। সুতরাং ঐ স্থান থেকে বিচ্যুত না হওয়ার লক্ষ্যে এখনই কাজ শুরু করতে হবে।
আমাদের দেশে বিভিন্ন কিছু ঘটছে এবং ঘটবে। কিন্তু এর থেকে শিক্ষা নিয়ে পরিত্রানের ব্যবস্থা দ্রুতই করতে হবে। এই পরিত্রাণ ভাষাকে ব্যবহার করেই করতে হবে। যাতে করে আমরা আমাদের মুল চালিকা শক্তির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারি। মাদক নিমূলে এগিয়ে আসার জন্য আমাদের ভাষার ব্যবহার এবং গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভাষা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে। বাংলাকে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার গতিপ্রবাহ বাড়াতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদেরকে বাংলার মাধ্যমেই প্রকাশ করতে হবে। যাদের প্রয়োজন তারাই এসে আমাদেরকে জানবে এবং এই বাংলাকে শিখবে। হ্যা অন্যদের জানার প্রয়োজনে হয়ত আমরা বাংলার পরে ইংরেজীকে স্থান দিতে পারি। সেই লক্ষ্যে ইংরেজীও শিখে কাজের ফায়দা আদায় করতে পারি। কিন্তু বাংলাকে বিসর্জন দিয়ে নয়। বাংলার সৃজনশীলতাকে পাশ কাটিয়ে নয় বা স্তব্ধ করে নয়।
ডিজিটাল আন্দোলন যেন হয় বাংলাকে প্রাধান্য দিয়ে। এই দিকে লক্ষ রেখে এগুতে হবে। বাংলা এবং বাঙালীর মধ্যে যে যোগসূত্র তা প্রকারান্তরে বৃদ্ধি করতে হবে। যা হারিয়ে গেছে তা পুনরুদ্ধারে সকল পদক্ষেপ নিয়ে কাজে নেমে পড়তে হবে। আমি ভাষা বিশারদ বা পন্ডিত নই কিন্তু মায়ের ভাষা বাংলাকে ভালবাসি, বাংলায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করি এবং বাংলাকে নিয়ে এগিয়ে যেতে প্রাণপন চেষ্টা করি। আমাদের বিশেষ বিশেষ উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে প্রায়শই দেখা যায় ইংরেজির ছাড়াছড়ি কিন্তু সেখানে বাংলা যেন দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে পরিগণিত। সেইসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নিজেকে নিজদেশে পরবাসী মনে হতো। কষ্টে ও মনোবেদনায় হা হুতাস করে যেতে হতো। কিন্তু আজ সময় এসেছে আমাদের দেশের দেশীয় অনুষ্ঠানে বাংলায় সকল কিছু করা হউক। প্রয়োজনে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজী তরজমা করা হউক যাতে করে ইংরেজি ভাষালম্বীদের বুঝার সুবিধার্থে।
তবে এবারই আমার প্রীয় সংগঠন বেসিস এর সফ্ট এক্সপ্রো ২০১৮ উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান বাংলায় পরিচালিত হয়েছে। যা দেখে মনে সাহস, উৎসাহ এবং গর্ভবোধ নিয়ে ফিরে আসার সুযোগ হয়েছে। এর জন্য অনুষ্ঠান পরিকল্পন এবং পিছনের অনুঘটকদের সাধুবাদ জানাই। বাংলা আমার মায়ের ভাষা, তাই বাংলাকে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ছালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিকদের রক্তের ও জীবন এবং ত্যাগের মুল্য দিয়ে দেশের সমৃদ্ধি অর্জনে তৎপর হতে হবে। বঙ্গবন্ধু তাঁর জাতিসংঘের ভাষনতো বাংলায় দিয়েছিলেন। কেন দিয়েছিলেন তা অনুধাবন করতে হবে।
আমরা যখন ছোট খাট মিটিং পরিচালনা করি তখনও দেখি বিনা প্রয়োজনে ইংরেজির প্রচলন। আসলে কি তখন বাংলা বলা যায় না বা বাংলার মর্যাদার কথা মাথায় রেখে বাংলা-ভাষা-ভাষীর মনের খোরাক বাংলাকে ব্যবহার করা যায় না? কেন আমার অন্যের ধারকরা ভাষায় অপ্রয়োজনে ব্যাবহার করে থাকি? আসুন আমরা আমাদের চেতনায় ফিরে আসি এবং বাংলাকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলার সম্মান বৃদ্ধি করি। অন্যেরা এসে এই সম্মান বৃদ্ধি করে দিবে না বরং নিজেকেই নিজের দেশ, ভাষা এবং সমাজ ও সংস্কৃতির সম্মান বৃদ্ধি করতে তৎপর থাকতে হবে। নতুন অধুনা বিলপ্তির সাথে সবই জলাঞ্জলীর আলিঙ্গনে মিশে যাবে। সকলকেই বিমন্র শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করে বলবো বাংলায় কথা বলব, পথ চলব, পরিকল্পনা করবো এবং বাস্তবায়নের সকল কিছু করবো। তাহলেই বাংলা এবং বাংলা মায়ের গর্বজাত সন্তানরা পৃথিবীতে মাথা উচু করে দাঁড়াবে, দাঁড়িয়েছে এবং দাঁড়িয়ে থাকবে। যেমনি করে নির¯্র বাঙ্গালীর কাছে সমরা¯্র সজ্জিত পাকিস্তানী বাহীনি ৫২ ও ৭১ এর পরাজিত হয়েছিল। সময় এখন আমার, আপনার এবং সকলের এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নপূরণের এবং বিশ্ব নেতৃত্ব গ্রহণের। তাই উন্নয়নে লেগেছে ভাষার জোয়ার কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাই সমৃদ্ধি ও কল্যাণের তরে। আগামীর বাংলাদেশ হউক উন্নত ও উন্নয়নশীল। শান্তি ও স্থিতিশীলতায় পরিপূর্ণ। দুর হউক ভাষার ব্যবহার তারতম্য বা দ্বিচারন। সকল ক্ষেত্রে বাংলা হউক আমাদের অফিসিয়াল, রাজনীতি, সমাজ, কর্মক্ষেত্র এবং আদালত ও বিচারালয় সহ সকল ক্ষেত্রের মাধ্যম।