টিআইএন॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বহুল প্রতীক্ষিত তিন সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরে। সেতু তিনটি হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা এবং দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু। নির্ধারিত সময়ের প্রায় ছয় মাস আগেই এ তিন সেতু খুলে দেওয়া হবে যানবাহন চলাচলের জন্য। একই সঙ্গে এই তিন সেতু নির্মাণে ব্যয়ও কমে আসবে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হওয়ার পর থেকেই এ তিন সেতুতে দীর্ঘ যানজট লেগে আছে। একে তো সেতুগুলো ঝুঁকিপূর্ণ, এর ওপর দুই লেনের সেতু হওয়ার কারণে এ তিন সেতুর দুই পাশেই প্রতিদিন গাড়ির দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। চার লেনের সড়ক থেকে হঠাৎ করেই সেতুর মুখে এসে গাড়িগুলোকে এক লেনে চলতে গিয়ে এমন যানজটের সৃষ্টি হয়। সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঝুঁকির মুখে থাকা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিদ্যমান এ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুর পাশেই আরও তিনটি সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১৩ সাল থেকে কাজ শুরু করে সরকার। একসঙ্গে তিনটি সেতু নির্মাণ এবং পুরনো তিনটি সেতু পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে ধরে ২০২১ সালের অক্টোবরের মধ্যে সেতুগুলো নির্মাণের সময়কাল ধরা হয়। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে ঠিকাদারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে সড়ক বিভাগ। ২০১৬ সালে তিন সেতু নির্মাণের দৃশ্যমান কাজ শুরু হয়। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, কাজের মেয়াদকাল ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত হলেও তিনটি সেতুরই কাজ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে। এর পরপরই সেতু তিনটি খুলে দেওয়া হবে যানবাহন চলাচলের জন্য। একই সঙ্গে বিদ্যমান সেতু তিনটির পুনর্বাসন কাজ শুরু হবে। ইতিমধ্যে নতুন তিনটি সেতুর মধ্যে দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতুর মূল অ্যাবাটমেন্ট ১ ও ২ এবং সব পিলারের ফাউন্ডেশন নির্মাণ শেষ হয়েছে। অ্যাবাটমেন্ট ১ এবং ১ নম্বর পিলারের হেড নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে। ভিয়েতনাম থেকে ৬৪টি বক্স গার্ডার সেট ও ডেক স্ল্যাব প্যানেলও ইতিমধ্যে সাইটে এসে পৌঁছেছে। চলতি মাসেই এ সেতুর সুপারস্ট্রাকচার বসানোর কাজ শুরু হবে। ইতিমধ্যে এ সেতুর চট্টগ্রাম অংশের সংযোগ সড়ক, ডাইভারশন সড়কসহ অন্যান্য কাজ শেষ হয়েছে। শুধু চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনকারী ওভারপাসের পাইলিং নির্মাণের কাজ চলছে। চার লেনবিশিষ্ট এ সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে বিদ্যমান সেতুর ভাটিতে। ৩৯৭ দশমিক ৩ মিটার দীর্ঘ এ সেতুর সংযোগ সড়ক হবে আট লেনবিশিষ্ট। আর বিদ্যমান সেতু ও নতুন সেতু মিলিয়ে লেনও হবে আটটি।
চার লেনবিশিষ্ট দ্বিতীয় মেঘনা সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে বিদ্যমান সেতুর উজানে। ৯৩০ মিটার দীর্ঘ এ সেতুটির উভয় পাশে থাকে ছয় লেনবিশিষ্ট সংযোগ সড়ক। আর বিদ্যমান ও নতুন সেতু মিলিয়ে সেতু হবে ছয় লেনের। ইতিমধ্যে এ সেতুর মূল অ্যাবাটমেন্ট ১ ও ২ এবং ১ থেকে ৪ ও ৮ থেকে ১১ নম্বর পিলারের ফাউন্ডেশনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। অ্যাবাটমেন্ট ১ ও ২ এবং তিনটি পিলারের হেড নির্মাণের কাজও শেষ। এ সেতুর জন্য ভিয়েতনাম থেকে ১০৮টি বক্স গার্ডার, ৭২টি ক্রস গার্ডার এবং ২১৬টি ডেক স্ল্যাব ইতিমধ্যে প্রকল্প এলাকায় চলে এসেছে। ১০ ফেব্রুয়ারি সড়ক পরবিহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ সেতুর সুপারস্ট্রাকচার বসানোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে বিদ্যমান সেতুর ভাটিতে। এ সেতুটিও হবে চার লেনের। আর পুরনো ও নতুন সেতু মিলিয়ে হবে ছয় লেন। এক হাজার ৪১০ মিটার দীর্ঘ এ সেতুর মূল অ্যাবাটমেন্ট ১ ও ২ এবং ১ থকে ৪ ও ১১ থেকে ১৬ নম্বর পিলারের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া ১৫ ও ১৬ নম্বর পিলারের হেড নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে। এ সেতুর জন্য মিয়ানমার থেকে ১৪৪টি বক্স গার্ডার ও ২৩৬টি ডেক স্ল্যাব প্যানেল প্রকল্প এলাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। আগামী মাসেই এ সেতুর সুপারস্ট্রাকচার বসানোর কাজ শুরু হবে। দ্বিতীয় কাঁচপুর, মেঘনা এবং মেঘনা-গোমতী সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (জাইকা) আর্থিক সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে। তিনটি সেতু নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯৬৬ দশমিক ৮৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা দিচ্ছে ৫ হাজার ৩৯৯ দশমিক ৮৮০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নের পরিমাণ ৫৬৬ দশমিক ৯৮৮ কোটি টাকা। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ের অন্তত ছয় মাস আগে সেতু তিনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যাবে। ফলে প্রাক্কলিত ব্যয় থেকে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। অর্থাৎ এই পরিমাণ অর্থ কম ব্যয় হবে। সেতু তিনটি যৌথভাবে নির্মাণ করছে জাপানি প্রতিষ্ঠান ওবায়শি করপোরেশন, সিমিজু করপোরেশন এবং জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুতগতিতে কাজ করার ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই সেতু নির্মাণ শেষ হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।