রকিবুল হক রিপন॥ অভিবাসন আইনে দীর্ঘদিন ধরেই পরিবর্তন আনছে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগ। দেশটির জনপ্রিয় কর্ম ভিসা ৪৫৭ বিলুপ্তির সঙ্গে এ ধরনের ভিসাগুলোর আবশ্যিক শর্তাবলির কঠোরতাও জোরদার করেছে দেশটির বর্তমান ম্যালকম টার্নবুল সরকার। একের পর এক আসা এসব পরিবর্তন নিয়ে বেশ শঙ্কাতেই থাকেন অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন প্রত্যাশী ও প্রবাসীরা। তবে এর মাঝেও এমন কিছু ভিসা এখনো রয়েছে যে ভিসায় সহজে অস্ট্রেলিয়ায় আসা যায়। সাবক্লাস ৪০৭ ট্রেনিং ভিসা তেমন একটি। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এইচএসসি শেষ করেই এই ভিসার জন্য চেষ্টা করতে পারেন। এ ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় এসে দুই বছর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে বসবাস ও পূর্ণকালীন কাজের সুযোগ রয়েছে। মেয়াদ শেষ হলে আবারও নবায়ন করা যায়।
৪০৭ ভিসার আদ্যোপান্ত : সাবক্লাস ৪০৭ প্রশিক্ষণ বা ট্রেনিং ভিসা। শিক্ষার্থীকে স্পনসরের মাধ্যমে মনোনীত হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় আসতে হবে। এই ভিসা কাজের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেয়। বলতে গেলে, ৪০৭ ভিসাটি অনেকটা বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের মতোই উচ্চতর দক্ষতার প্রশিক্ষণ নেওয়া। এই ভিসায় প্রশিক্ষণটি দুইভাবে হতে পারে। সরাসরি একই পেশায় অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করার মাধ্যমে অথবা কোনো প্রশিক্ষণকেন্দ্রের মাধ্যমে। ভিসা মঞ্জুর হয়ে গেলে এই ভিসায় অস্থায়ী মেয়াদে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় থাকা ও কাজ করা যাবে। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে আবারও নবায়নের জন্য আবেদন করা যাবে।
আবশ্যিক শর্ত : প্রশিক্ষণ বা ট্রেনিং ভিসাটির আবেদন ও গ্রহণের কিছু আবশ্যিক শর্ত রয়েছে যা পূরণ হতেই হবে। প্রথমত যেহেতু ভিসাটি একটি স্পনসর ভিসা, তাই অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ এজেন্সি বা সংস্থা কর্তৃক আবেদনকারীকে আমন্ত্রিত হতে হবে অথবা এমন কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা সংস্থার স্পনসর প্রয়োজন হবে যাদের অভিবাসন বিভাগ কর্তৃক স্পনসর করার অনুমতি রয়েছে। কার্যকরী ইংরেজি ভাষা দক্ষতা (আইইএলটিএস এ ৪.৫) থাকতে হবে। সেই সঙ্গে অবশ্যই ১৮ বছর বয়সী বা তার ঊর্ধ্বে হতে হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ইনস্যুরেন্স ও আর্থিক সামর্থ্য এসব প্রায় অন্যান্য ভিসার মতোই শর্ত পূরণ করতে হবে।
ভিসা প্রক্রিয়া : সাবক্লাস ৪০৭ ভিসাটিতে আবেদন করতে হলে তিনটি ধাপে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
ধাপ-এক: স্পনসরশিপের জন্য আবেদন। আবেদনকারীকে যে প্রতিষ্ঠান স্পনসর করবে সে প্রতিষ্ঠানটি যদি অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ সরকারের কোনো সংস্থা না হয় তবে প্রতিষ্ঠানটিকে আগে অবশ্যই স্পনসর করার জন্য অনুমতি নিতে হবে। অভিবাসন বিভাগের ওয়েবসাইটে ইমি অ্যাকাউন্টের (রসসরধপপড়ঁহঃ) মাধ্যমেই এর জন্য আবেদন করা যাবে। প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রতিষ্ঠানটির অস্ট্রেলিয়ায় পরিচালিত হচ্ছে এমন কিছু কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। আবেদন মঞ্জুর হয়ে গেলে পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি স্পনসর করতে পারবে। অর্থাৎ একজন স্পনসর মেয়াদ থাকাকালে একাধিক প্রার্থীকে মনোনীত করতে পারবে। সিডনি। সংগৃহীত
ধাপ-দুই. আমন্ত্রিত বা মনোনীত হওয়া। ৪০৭ প্রশিক্ষণ ভিসাটি পেতে আবেদনকারীকে অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ সংস্থা কর্তৃক আমন্ত্রিত বা কোনো স্পনসর প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মনোনীত হতে হবে। মনোনয়ন ছাড়া এ ভিসায় আবেদন করা যায় না। কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন করতে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগের ইমি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ‘নমিনেশন’ আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। আর এ প্রক্রিয়ার শুরুতেই স্পনসরের আবেদনপত্রের কিছু তথ্য দিতে হবে। আবেদনপত্রে স্পনসরের ও প্রার্থীর বর্ণনা, কোন কাজ বা প্রশিক্ষণের জন্য মনোনয়ন করা হচ্ছে তার বিস্তারিত এবং কোনো অতিরিক্ত শর্ত রয়েছে কিনা তার উল্লেখ করতে হবে। তবে পেশার ভিত্তিতে নমিনেশন আবেদনপত্র ভিন্ন হতে পারে। যেমন চিকিৎসক, নার্স বা রসায়নবিদদের অস্ট্রেলিয়ায় এ ধরনের কাজ করার লাইসেন্স কিংবা সদস্যপদের সনদ প্রাপ্তির কাগজপত্র লাগবে। এ ছাড়া এ রকম প্রমাণ থাকলে ভালো হয় যেমন অস্ট্রেলিয়ার বাইরে এমন কোনো শিক্ষার্থী যার অধ্যয়নরত বিষয়ে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুবিধা নেই অথবা কোনো অস্ট্রেলীয় প্রতিষ্ঠানের দেশের বাইরের কোনো কার্যালয়ের কর্মী যার প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।
ধাপ-তিন. ৪০৭ ভিসায় আবেদন। সাবক্লাস ৪০৭ প্রশিক্ষণ ভিসায় কোনো প্রতিষ্ঠান স্পনসর করার অনুমতি পেয়েছেন এবং একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন করেছেন। এবার সেই প্রার্থী মূল ভিসায় আবেদন করবেন। যথারীতি সেই একইভাবে ইমি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আবেদনপত্র পূরণ করে জমা দিতে হবে। আবেদনকারীর সকল তথ্য ও প্রমাণপত্র জমা দিয়ে ভিসা ফি প্রদানের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
আবেদন করা হয়ে গেলে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগ ভিসাপ্রার্থীর স্পনসর, মনোনয়নপত্র ও আবেদনকারীর সকল তথ্য যাচাই করে দেখবে। সাধারণত সকল কাগজপত্র ও প্রমাণাদি সঠিক থাকলে তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যেই ভিসা মঞ্জুর হয়ে যায়। তবে একটা কথা জেনে রাখা ভালো, ৪০৭ প্রশিক্ষণ ভিসাটির মূল উদ্দেশ্য কোনো পেশাদারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া। তাই এই ভিসার মাধ্যমে কেউ অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের মনোভাব পোষণ করছে এমন সন্দেহ হলে কখনই ভিসা আবেদন মঞ্জুর করবে না দেশটির অভিবাসন বিভাগ। তাই আপনার আবেদনপত্রে সম্ভাব্য ও প্রদত্ত সকল জায়গায় নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে অভিবাসন আইন সংক্রান্ত দক্ষ ও পেশাদারদের সহায়তা নিন। আর অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগের ওয়েবসাইটে এ ভিসাটির বিস্তারিত তথ্য রয়েছে, এগুলো মনোযোগ নিয়ে পড়তে হবে। এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য হালনাগাদ হলো কিনা তাও নিয়মিত লক্ষ্য রাখতে হবে।
ভিসা লিংক:www.border.gov.au/Trav/Visa-1
কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী। ইমেইল: immiconsultants@gmail.com