এলডিসি থেকে উত্তরন…উন্নয়নশীল দেশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

তাজুল ইসলাম নয়ন॥ জাতিসংঘ নির্ধারিত শর্ত পুরণ করেছে বাংলাদেশ, তবে চূড়ান্তভাবে যোগ্যতা অর্জন করতে আরও ছয় বছর উন্নতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। স্বল্পন্নোত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের নির্ধারিত শর্ত পূরণ করল বাংলাদেশ। নিয়ইর্য়কের স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার) জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) এই তথ্য জানিয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় তিন বছর পর ২০২১ সালে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ করবে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল (ইকোসোক)। আর তিন বছর পর ২০১৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা দেওয়া হবে। তবে স্বল্পোন্নত দেশের সব বাণিজ্য সুবিধা ২০১৭ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
এই অর্জনকে নতুন এক বৈপ্লবিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি); বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি সামগ্রীকভাবে বিশ্ব ও আঞ্চলিক বৈরী পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তাই আগামী ছয় বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন থেকেই স্বীকৃতি অর্জনে পরের সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে হবে।
১২মার্চ থেকে নিউইয়র্কে শুরু হয় সিডিপির চার দিনব্যাপী প্ল্যানারি অধিবেশন। ১৪ মার্চ অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ গ্রুপের সভা শেষে বাংলাদেশের প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জনের এই ঘোষণা দেওয়া হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন সিডিপির চেয়ারম্যান জোসে এন্তিনিও ওকাম্পো। এ বছর ভূটান, কিরিবাতি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ এবং সাওতোম ও প্রিনসিপে- এই চারটি দেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত করেছে সিডিপি। তবে নেপাল ও পুর্ব তিমুর এই দুটি দেশকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দুর্বলতার কারণে চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করেনি সিডিপি। বর্তমানে ৪৭টি এলডিসি আছে। এই পর্যন্ত পাঁচটি দেশ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে। দেশগুলো হলো মালদ্বিপ, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, সামোয়া, বতসোয়ানা ও কেপ ভার্দে।
ইতোমধ্যে সরকার এই অর্জন উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়া হতে পারে। এদিন আতশবাজি পোড়ানো হবে। রাজধানীর সড়কে জ্বলবে রংবেরঙ্গের বাতি, সাজবে লাল-সবুজ পতাকায়। আরো কর্মসূচী নেয়া হচ্ছে মন্ত্রণালয় ভিত্তিক।
জাতি হিসেবে আমাদের গর্বের এবং সেই গর্ব এখন উৎসবে পরিণত হবে আগামী প্রজন্মকে স্মৃতিতে ম্লান করে রাখার নিমিত্তে। ১০ বছর ধরে প্রবৃদ্দি কখনো কমেনি বরং বেড়েছে। তাই আগামী ৬ বছর ধারাবাহিক সাফল্য বজায় রেখে চুড়ান্ত স্বীকৃতি আদায় করে নেবে বাংলাদেশ। এমনকি পরবর্তী টার্গেট হিসেবে ২০৪১ সালে উন্নত দেশে উত্তরণের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উন্নয়নকে টেকসই করতে মাথাপিছু আয়ের পাশাপাশি সামাজিক বিষয়গুলো বিবেচনা করে সদস্যদেশগুলোকে স্বপ্লোন্নত, উন্নয়নশীল, উন্নত দেশ- এই তিন শ্রেণীতে ভাগ করে সিডিপি।
বাংলাদেশ গত ৯ বছর যা করে দেখিয়েছে তার স্বীকৃতি স্বরূপ এই অর্জন আমাদের মাথা উঁচু করে পথ চলার রসত যুগিয়ে আগামীর স্থায়ী স্বীকৃতি ঘরে তোলার প্রত্যয়দৃপ্ত অঙ্গীকারকে আরে একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। এই সরকার এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার নিত্তিত্ত্বে জাতি হিসেবে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে যেতে হবে। দল, মত ও পথ এর ভিন্নতা ভুলে গিয়ে দেশের তরে শেখ হাসিনার উন্নয়নের সঙ্গে মিশে গিয়ে এগিয়ে গেছেই ২০৪১ এর নিশ্চিত স্বীকৃতি এবং এর সকল সফল ভোগ প্রত্যেকের ঘরে তোলা এবং সেই অনুয়ায়ী আত্মতৃপ্তি নিয়ে পরবর্তী লক্ষ্যে পৌঁছার দৌড়ে অংশগ্রহন করতে পারব।

Leave a Reply

Your email address will not be published.