বাআ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রথম বাংলাদেশ ইয়ুথ গেমস উদ্বোধন করেছেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশ খেলাধুলার মাধ্যমে কার্যকরভাবে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা গত শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ যুব গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘খেলাধুলার মাধ্যমে আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলা এবং যুব সমাজকে মাদকসহ বিপথগামী হওয়া থেকে রক্ষা করবো। আর এর মাধ্যমে আমরা দেশকেও এগিয়ে নিয়ে যাবো।’
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ইয়ুথ গেমস-২০১৮ এর সাফল্য কামনা করে আশাবাদ প্রকাশ করেন যে, এটি যুবকদের নতুন স্বপ্ন দেখাবে এবং তাদের মধ্য থেকে আগামী দিনের সফল ক্রীড়াবিদ বেরিয়ে আসবে।
প্রধানমন্ত্রী আরো আশা প্রকাশ করেন যে, দেশব্যাপী আয়োজিত এই গেমসের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুপ্ত প্রতিভা উদ্ভাসিত হবে এবং খেলাধুলার প্রতি জনসাধারণের আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পাবে।
গেমসের আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান এবং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। গেমসের স্টেয়ারিং কমিটির চেয়ার ও বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন (বিওএ)’র সভাপতি সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহাম্মদ শফিউল হক স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার ও উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এবং বিওএ’র মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা সুস্থ-সবল দেহ-মন এবং দেশ ও জাতির প্রতি ভালবাসা তৈরিতে খেলাধুলা অপরিহার্য উল্লেখ করে বলেন, খেলাধুলা সাংস্কৃতিক বিকাশ ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি শৃঙ্খলাবোধ, অধ্যবসায়, দায়িত্বজ্ঞান, কর্তব্যপরায়ণতা ও সহনশীলতার শিক্ষা দেয় ও অপরাধ প্রবণতা কমায়।
বিওএ’র আয়োজিত এ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দেশের ৮টি বিভাগের ২৬৬০ জন অনূর্ধ্ব-১৭ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করছে। প্রতিযোগিতায় ১৫৯টি ইভেন্টে ৩৪২টি স্বর্ণপদকসহ ১,১১৪টি মেডেল দেয়া হবে।
যুবক সমাজকে পড়ালেখার পাশাপাশি নিয়মিত খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এগুলো তাদের দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, খেলাধুলা যুবক সমাজকে উন্নতি করতে এবং তাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করতে মানসিক শক্তি যোগাবে। ফলে আমরা খেলাধুলার উন্নয়নে অত্যন্ত আন্তরিক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দেশে খেলাধুলার আরো উন্নতি চায়। ‘তাই আমরা বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) এবং শারীরিক শিক্ষা কলেজগুলোতে সুযোগ-সুবিধা বাড়াচ্ছি। আমরা দেশের সকল বিভাগের বিকেএসপি গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
শেখ হাসিনা দেশের খেলাধুলার উন্নয়নে তাঁর সরকারের গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামসহ অনেক স্টেডিয়াম পুননির্মাণ করা হয়েছে।
কক্সবাজারে ‘শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম’ নির্মাণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রায় সকল স্টেডিয়াম, সুইমিংপুল, জিমনেসিয়াম ও ক্রীড়া কমপ্লেক্সের সংস্কার ও উন্নয়ন করা হয়েছে। নতুন নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে পর্যন্ত স্টেডিয়াম নির্মাণ, অবকাঠামো উন্নয়নসহ উন্নত প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রতিবছর দেশব্যাপী ছাত্রদের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট’ ও ছাত্রীদের জন্য ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট’ আয়োজন করে আসছি।
শেখ হাসিনা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গণে বাংলাদেশী ক্রীড়াবিদদের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, গত বিশ্বকাপে ক্রিকেটে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সিরিজ জয় করেছে।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ একদিন বিশ্বকাপ জয় করবে। নারী ক্রীড়াবিদদের সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাফ অনুর্ধ্ব ১৫ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৭- এ আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আমাদের মেয়েরা এএফসি অনুর্ধ্ব-১৪ ফুটবলে আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় আমরা রানার-আপ হয়েছি। আমাদের নারী ক্রিকেট দল জায়গা করে নিয়েছে আগামী টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে।’
যুব ক্রীড়াবিদদের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কারিগর উল্লেখ করে শেখ হাসিনা ২০২১ সালে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যুবকদের অবশ্যই নিজেদের দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার মতো আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। তিনি বলেন, যুবকদের মনে রাখতে হবে, ‘আমরা বিজয়ী জাতি। … বাঙালি কারও কাছে মাথা নত করে না। … আমরা এমনভাবে দেশ গড়তে চাই যাতে বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতা করে বাংলাদেশ টিকে থাকতে পারে। … বাংলাদেশ পারে, আমরা এটা প্রমাণ করতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী ক্রীড়ার প্রতি তাঁর ও তাঁর পরিবারের ভালবাসার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘জাতির পিতা একজন ক্রীড়ামোদী মানুষ ছিলেন। তিনি স্কুল জীবনে অসংখ্য ম্যাচ খেলেছেন।
তিনি বলেন, আমার ভাই শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ও শহিদ লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ফুটবলসহ ক্রীড়া সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। তারা ফুটবল, ভলিবল ও হকি খেলতেন।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মত যুব গেমসের এই সফল আয়োাজনের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য বিশ্ব অলিম্পিকে স্থান পাওয়ার পথ সুগম করবে।